বিজ্ঞাপন

‘দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেবো, এই নীতি নিয়ে বড় হইনি’

February 5, 2019 | 3:38 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রিতে রাজি না হওয়াতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে সরকার গঠন করতে পারেনি বলে আক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমার ওপর গ্যাস বিক্রির আন্তর্জাতিক চাপ ছিল কিন্তু রাজি হইনি, কারণ দেশের মানুষের কাজে না লাগিয়ে দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেবো—এই নীতি নিয়ে আমরা বড় হইনি, এই নীতি নিয়ে আমরা তৈরিও হয়নি।’

মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

এছাড়া পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দশ বছরে ৮০ হাজারের ওপর লোকবল বৃদ্ধি করেছি। ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি। সেখান থেকে পুলিশের জন্য খরচ করতে আমাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সব হারাবার বেদনা নিয়ে দেশে ফিরেছিলাম শুধু একটা চিন্তা থেকে যে আদর্শ নিয়ে যে স্বপ্ন নিয়ে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে হবে। বাংলাদেশকে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করবার পর আমরা বিজয়ী জাতি হিসাবে বিশ্বে যে সম্মান পেয়েছিলাম, সেই সস্মান নসাৎ হয়ে গিয়েছিল ১৯৭৫’-র ১৫ আগস্টের পর। কাজেই আমার চেষ্টাই ছিল, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাবার জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। ১৯৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি। তখন থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নতি করবো, সেই কাজ করার সুযোগটা পাই। কারণ পরিকল্পনা আমাদের আগে করাই ছিল। একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা কী হবে, কীভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলবো, সেই ধরনের চিন্তাভাবনা বা নীতিমালা আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রণয়ন করি, সব সময় প্রস্তুতই ছিলাম যখনই সরকারে আসবো তা বাস্তবায়ননের মাধ্যমে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি আমরা করবো।’

‘১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মাত্র ৫ বছর সময় পেয়েছিলাম। তাতে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি, তাতে পুলিশ বাহিনী কিন্তু বঞ্চিত হয়নি। তখনও আমরা বাজেট দ্বিগুণ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে পুলিশ বাহিনীর জন্য বিভিন্ন কাজ করে যাই। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনটাই লক্ষ্য। দুভার্গ্য যে, ২০০১ সালে আমি সরকারে আসতে পারিনি। আামদের আসতে দেওয়া হয়নি। এর পিছনে কারণ ছিল, বাংলাদেশে গ্যাস আছে, সেই গ্যাস বিদেশে বিক্রি করতে হবে, এই ধরনের একটা প্রচণ্ড চাপ আন্তর্জাতিকভাবে আমার ওপর ছিল। কিন্তু আমি সেটা রাজি হইনি। কারণ আমার দেশের সম্পদ দেশের মানুষের কাজে না লাগিয়ে অন্যের হাতে তুলে দেবো, এই নীতি নিয়ে আমরা বড় হইনি, এই নীতি নিয়ে আমরা তৈরি হয়নি।’

‘আর সেখানে সেটা মেনে নেইনি বলেই তার খেসারত দিতে হয়েছিল ২০০১। ভোট বেশি পেয়েও আমরা সিট পাইনি, সরকার গঠন করতে পারিনি। তাছাড়া একটা নীতি নিয়েই আমরা চলি। আর সরকার গঠন করেও সবসময় এটাই চিন্তা করি, দেশের জন্য কতটুকু কাজ করতে পারবো।’

বিজ্ঞাপন

‘২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি জামায়াত জোট তাদের কার্যক্রম আর তাদের নিজেরাই ভালভাবে জানেন, কীভাবে তারা দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। ২১’শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি থেকে শুরু করে এহেন কোনো অপকর্ম নাই তারা যা না করেছে। বাংলাদেশ পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সারাবিশ্বে। সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের মান-সম্মান সব ধুলায় লুণ্ঠিত হয়েছিল এবং তাদের এই অপকর্মের ফলে এমার্জেন্সি হয়। সেখানে আরও দুইটি বছর এদেশের মানুষের জন্য হারিয়ে যায়।’

২০০৮ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন থেকে সরকারের ধারাবাহিকতার দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার গঠন করা মানে হলো আমার কাছে দেশের সেবা করার একটা সুযোগ পাওয়া। সরকারে এসে নিজের ভাগ্য গড়া নয়। দেশের মানুষের ভাগ্য কীভাবে গড়বো, তার উপর গুরুত্ব দিয়েছে এবং সেভাবেই কাজ করে গেছি। যার ফলাফল দেশের মানুষে পেয়েছে। আজকে তৃণমূল পর্যায়ে যাতে মানুষের ভাগ্য উন্নত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এর মাঝে অনেক চরাই-উৎরাই পার হতে হয়েছে। বারবার অনেক বাধা এসেছে। অনেকে সমস্যা এসেছে। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরেকদিকে কিছু গোষ্ঠী বা দলসৃষ্ট দুর্যোগ সেগুলো আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে।’

‘অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের আঘাত এসেছে। সেই সময় আমি এইটুকু বলবো, আমাদের পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দুক্ষতার সাথে সব অবস্থা মোকাবেলা করেছেন। জঙ্গিবাদ দমন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনারা যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনাদেরকে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানাই। পুলিশ বাহিনীর সমস্যাগুলি একেবারে যে আমার অজানা না তা নয়। বরং আপনারা এইটুকু হয়ত বলতে পারবেন এবং স্বীকারও করবেন, অনেক কিছু আপনাদের চাওয়ারও প্রয়োজন হয়নি বা চাওয়ার ব্যপারে চিন্তাই করেন নাই, যেটা আমরা চিন্তা করে আপনাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছি।’

লোকবল বৃদ্ধির ১৯৯৬ সালেও লোকবল বৃদ্ধি করেছিলাম, আর এবার এই দশ বছরে ৮০ হাজারের ওপর লোকবল বৃদ্ধি করেছি। সেই সঙ্গে দেশের প্রয়োজনে কী কী পুলিশ বাহিনী আমাদের গড়ে তোলা দরকার, সেই ভাবে বিবেচনা করেও কিন্তু আমরা বাহিনীগুলো তৈরি করেছি।’

বিজ্ঞাপন

পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো তুলে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে বাজেটও আমরা বৃদ্ধি করেছি। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বাজেট যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সাথে সাথে পুলিশ বাহিনীর বাজেটও আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি যাতে কাজগুলো হয়। পুলিশের সারাদেশে প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা-থানা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত উন্নত করা এটার জন্য কিন্তু কখনো কেউ দাবি করেন নাই। আমি নিজে যখন বাংলাদেশে ঘুরি এবং কোথায় কার অবস্থা কি একটু দেখার চেষ্টা করি, সেটা আমি দেখে বলে বলে প্রজেক্টগুলি আমার নেওয়া। এখন সেই প্রজেক্টগুলি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রজেক্ট যখন আমরা পাস করে দেই এবং প্রজেক্টে যে টাকা বরাদ্দ হয় সেটা কিন্তু খুব নিয়ম মাফিক মন্ত্রণালয়ই খরচ করে। আর যদি সেখানে কোনো কম পড়ে সেটা কিন্তু সাথে সাথে আমাদের পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেটা কিন্তু পুর্নগঠন করা সম্ভব।’

‘এই প্রজেক্টগুলি কিন্তু পুলিশবাহিনীকে দাবি করতে হয়নি। এর বেশিরভাগ আমার নিজের করে দেওয়া। এটা একটু স্মরণ করাতে চাই। কাজেই একানে কোনো টাকার অসুবিধা হবে না। সেটা আমি বলতে পারি। এটা আমরা করে দিচ্ছি, করে দেবো। কারণ আমি চাই দ্রুত করা। কারণ আমাদের পুলিশ স্টেশনগুলোর অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। আমি চাই, প্রজেক্টগুলো যেন যথাযথ মানসম্পন্ন হয়। সেইদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া, সেইগুলো যেন সুন্দরভাবে হয়, টাকার অসুবিধা হবে না। যা বরাদ্দ লাগে আমরা করতে পারবো, বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন