বিজ্ঞাপন

৩ বন্ধু বেঁচে ফিরেছে, একজন লাশ, এখনও নিখোঁজ রোহান

February 21, 2019 | 3:09 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢামেক থেকে: আসছে মার্চের ১০ তারিখে ছোট বোনের বিয়ে। কথা ছিল, তারপরই পড়ালেখা করতে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হবে রোহানকে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়েছে আগুনের তাপে। পুরান ঢাকার চকবাজারে যে আগুন কেড়ে নিয়েছে প্রায় শত প্রাণ, সেই আগুনেই হয়তো ভস্মীভূত রোহানও। ‘হয়তো’ বলতে এ কারণে যে এখনও তার মরদেহ খুঁজে পায়নি তার পরিবার। তবে রোহানকে না পাওয়া গেছেও তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরাফাতকে, পাওয়া গেছে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া তার মরদেহ।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনে রোহানের স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তারা বলছেন, এমন এক মেধাবী শিক্ষার্থীর এই অকালপ্রয়াণ তাদের কাছে মারাত্মক এক আঘাত।

বিজ্ঞাপন

বন্ধুরা বলছেন, পুরান ঢাকার আগামসি লেন এলাকার বাসিন্দা তানজিল হাসান খান রোহান। তার আরও চার বন্ধু লাবিব, সোহাগ, রামিজ ও আরাফাতও একই এলাকার বাসিন্দা। এই পাঁচ জন যাকে বলে হরিহর আত্মা। সবসময় একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া তাদের নৈমিত্তিক ঘটনা। ঠিক সেভাবেই বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতেও চার বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিল রোহান।

পাঁচ বন্ধুর একজন লাবিব বলেন, আমরা দুইটা বাইকে করে বের হয়েছিলাম। সামনের বাইকে ছিল রোহান আর আরাফাত। পেছনেরটায় আমি, সোহাগ আর রামিজ। ওইখানে এক দোকানে আমরা চা খেতে নেমেছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ, আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তের মধ্যে বাইকে উঠে চলে আসি ওই জায়গা থেকে। কিছুদূর গিয়ে দেখি সামনে বা পেছনে— কোথাও রোহান-আরাফাতদের বাইক নেই। সারারাত সবাই মিলে ওদের খুঁজেছি ঢাকা মেডিকেলে, অন্য হাসপাতালে। কিন্তু ওদের কোথাও খুঁজে পাইনি।

রোহান-আরাফাতের সন্ধানে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেও ঢাকা মেডিকেলে ছিলেন বন্ধু-স্বজনরা। বেলা গড়ালে দুপুরের দিকে এখানে আসা লাশের ভিড়ে শনাক্ত করা যায় আরাফাতের মরদেহ। এরপর এখন পর্যন্ত রোহানের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার খোঁজে হাসপাতাল থেকে নড়ছেন না বন্ধু লাবিদ, রোহানদের বাড়িওয়ালার ছেলে সাগর। তিনিও রোহানদের বন্ধু। আর স্বজনরা তো আছেনই।

বিজ্ঞাপন

লাবিবের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, চোখের জল থামাতে পারছিলেন না। বলছিলেন, আমরা পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে বেরিয়েছিলাম। তিন জন ফিরে এসেছি। কিন্তু দুজনকে তো চিরতরে হারালাম। ভাবতেই পারছি না, ওদের আর কখনও পাব না।

সাগর আহমেদ জানালেন, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী রোহান। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে ইংলিশ বিভাগের ফার্স্ট বয় ছিল। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ’তে ভর্তি হয়েছিল। তবে কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া যাবে পড়তে। ওরা তিন ভাই, এক বোন। এর মধ্যে আগামী ১০ মার্চ ওর বড় বোনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। বিয়ের পরই ওর অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা। এখন এর মধ্যে কী থেকে যে কী হয়ে গেল!

বলতে বলতে কণ্ঠ ধরে আসে সাগরের। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তার বাবা মো. ওয়াসেল। তিনি জানালেন, দুই বছর হলো আমাদের বাসায় ভাড়া থাকছে রোহানরা। ছেলের মতোই ছিল। আজ আর ছেলেটা আমাদের মধ্যে নেই।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেলে আসা লাশগুলো বারবার দেখছেন রোহানের বন্ধু-স্বজনরা। কিন্তু বেশিরভাগ লাশই যে শনাক্ত করার মতো অবস্থায় নেই! এ পরিস্থিতিতে যত দ্রুতসম্ভব লাশগুলো শনাক্ত করার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন মো. ওয়াসেল। তিনি বলেন, পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া লাশগুলো তো চেনার উপায় নেই। ডাক্তাররাই বলছেন, ডিএনএ টেস্ট না করে এগুলো শনাক্ত করা যাবে না। এখন সরকার যদি দ্রুত লাশগুলোর ডিএনএ টেস্ট করে শনাক্ত করার ব্যবস্থা করে, তাহলে অন্তত হারানো স্বজনদের আমরা ফিরে পাব।

রোহানের বন্ধু-স্বজনদের মতো এমন আরও অনেকের চোখের জলেই সিক্ত হয়ে উঠেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আহাজারি আর হাহাকারে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। সেখানে অপেক্ষমাণ মানুষেরা জানেনও না, অন্তত স্বজনদের মরদেহটির সন্ধানও তারা পাবেন কি না।

আরও পড়ুন-

আরও পড়ুন-

ঢামেক মর্গে ৬৫ লাশ

ছবিতে চকবাজারের আগুন

লাশ বাড়ছে ৬২-৬৩-৬৫-৬৭-৭০

সব পুড়ে ছাই, শুধু পড়ে ছিল ৪টি খুলি

ঢামেক-সলিমুল্লায় উদ্বিগ্ন স্বজনদের ভিড়

নিয়ন্ত্রণে চকবাজারের আগুন, ১১ লাশ উদ্ধার

চারটি ভবনে ছড়ায় আগুন, উদ্ধার হচ্ছে লাশ

সন্তানের খোঁজে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে

চকবাজারে আগুনে দগ্ধ ১৮, নিয়ন্ত্রণে ৩৩ ইউনিট

চকবাজারে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন, দগ্ধ ১৮

বড় হচ্ছে চকবাজারের আগুন, সরু গলি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা

ধসে পড়তে পারে ওয়াহেদ ম্যানসন, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭

চারতলা ভবনের নিচতলায় ২৪ লাশ, দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

‘বিকট শব্দ শোনা যায়, এরপরই জ্বলে ওঠে দাউ দাউ আগুন’

কেমিক্যালের উৎস সরাতে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার: আইজিপি

‘আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণ পুনর্বাসন পর্যন্ত পাশে থাকবে সরকার’

মর্গ উপচে লাশের সারি বারান্দায়, ব্যাগের ছাইয়ে প্রিয়জনের খোঁজ

ফের বাড়ছে চকবাজারের আগুন, নিয়ন্ত্রণে যোগ দিলো বিমান বাহিনী

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন