বিজ্ঞাপন

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে যা বললেন সাবেক ছাত্রনেতারা

March 11, 2019 | 8:58 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন কি পারল প্রত্যাশা মেটাতে? সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত তারা বলছেন, প্রত্যাশার কিছুই পূরণ করতে পারেনি এই নির্বাচন। তারা এই নির্বাচন বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, দুইটি হলে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন হয়েও ছাত্রলীগ এই নির্বাচনে সংযত ছিল বলেও মন্তব্য তাদের।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর সোমবার (১১ মার্চ) অনুষ্ঠিত হলো ডাকসু নির্বাচন। ১৯৯০-এ স্বৈরশাসনের পতনের পর দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসার পর তরুণ নেতৃত্ব তৈরির কারখানা হিসেবে খ্যাত এই নির্বাচনের আয়োজন এই প্রথম। তবে একাধিক হল থেকে সিলমারা ব্যালট উদ্ধারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে দুপুরে নির্বাচন বর্জন করে বামজোট ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদসহ চারটি প্যানেল। পরে ছাত্রলীগ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি সবাই-ই নির্বাচন ‘বয়কটে’র ঘোষণা দেয়।

আরও পড়ুন- সর্বাঙ্গীন সুষ্ঠু হয়নি, নতুন তফসিলের দাবি পর্যবেক্ষক শিক্ষকদের

বিজ্ঞাপন

এই নির্বাচন নিয়ে অভিমত জানাতে গিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ডাকসু’র প্রথম সহসভাপতি (ভিপি) ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যা আশঙ্কা করেছিলাম, তাই হলো। ২৮ বছর পর ডাকুস নির্বাচনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা লজ্জার। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতপ্রকাশের সুযোগ পেলেও জালিয়াতির কারণে ভোট দিতে পারেনি। নির্লজ্জভাবে জাতীয় নির্বাচনের মতো এখানেও জালিয়াতি করা হলো। ডাকসুকে এটা কলঙ্কিত করল। এর বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন তফসিল করে ফের ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা পুনরায় নির্বাচন দিয়ে ছাত্রদেরকে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ করে দেবে। আর তারা সেটা না করতে পারলে তার জন্য সরকারকে মূল্য দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তবে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও জিএস এবং আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন (ডাকসু) ভালো হয়েছে বলেই গণমাধ্যম দেখেছি। ছাত্রলীগসহ নির্বাচনে যারা ছিল সবাই বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। আর দীর্ঘ ২৮ বছর পর নির্বাচন, সেটা সবারই প্রত্যাশা ছিল। দুয়েকটা হলের ঘটনা ছাড়া নির্বাচন ভালো হয়েছে।

আখতারুজ্জামান আরও বলেন, তবে ১৮টি হলের মধ্যে দুয়েকটি হলে নির্বাচন একটু বিলম্বিত হয়েছে। তবে পুনরায় সেখানে নির্বাচনও হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও নিয়েছ তড়িৎগতিতে। বাকি হলগুলোতে স্বাভাবিক পরিবেশেই নির্বাচন হয়েছে। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এই নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার জন্য। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন হয়েও ছাত্রলীগ সংযত ছিল।

আরও পড়ুন- বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসায় ভিপিসহ ৩ পদে স্বতন্ত্র জয়ী

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান খান মাসুম এই নির্বাচন নিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ভোট ডাকাতি বা ভোট র‌্যাগিং— যাই বলা হোক না কেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো একই ঘটনা ঘটেছে ডাকসু নির্বাচনেও। বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের আগের দিন ভোট করে নেওয়া সরকারি দলের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচনে এমন ঘটনা ঘটবে— বাংলাদেশেরর মানুষের এই প্রত্যাশা ছিল না।

বিজ্ঞাপন

অবিলম্বে নির্বাচন বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানান আসাদুজ্জামান।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দলও ‘কলঙ্কিত’ আখ্যা দিয়ে ডাকসু’র পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। একই দাবি জানিয়েছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষকও। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানও এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এবারের ডাকসু নির্বাচন ১৯৭৩ সালের পর কলঙ্কের নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। দেশবাসী কোনোবাবেই এটা প্রত্যাশা করেনি।

আরও পড়ুন- সলিমুল্লাহ হলেও পূর্ণ প্যানেলে জয়ী ছাত্রলীগ

তবে ডাকসু নির্বাচনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দিই। তারা শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। আমি এটির ভূয়সী প্রশংসা করি।’ এ নির্বাচনের মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতেও গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি নতুন মাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সোমবার (১১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের দু’টি হল বাদে বাকি ১৬টি হলে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ১১টা ১০ মিনিটে। বিকেল ৫টার দিকে শেষ হয় হলটির ভোটগ্রহণ। আর রোকেয়া হলের ভোটগ্রহণ সকাল ৮টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় এক ঘণ্টা পর। আবার দুপুর ১২টার দিকে রোকেয়া হল থেকে ব্যালট ভর্তি বাক্স উদ্ধারের পর ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। বিকেল ৩টার পর রোকেয়া হলে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ওই হলের ভোটগ্রহণ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টার পর।

বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগ ছাড়া ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবগুলো ছাত্র সংগঠনের প্যানেলই নির্বাচন বর্জন করে। দুপুর ১টায় মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের প্রতি ‘ঘৃণা’ জানিয়ে ডাকসু নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয় চার জোট। তবে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রলীগের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ।

সারাবাংলা/জেএ/এইচএ/টিআর

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন