বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের সুপ্রিম কোর্টেও রয়টার্সের ২ সাংবাদিকের সাজা বহাল

April 23, 2019 | 11:45 am

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ি ও’র আপিল মিয়ানমারের সর্বোচ্চ আদালতও খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকছে। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের এই সাজা দেওয়া হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে ইয়াঙ্গুনের হাইকোর্টে বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দুই সাংবাদিক। ডিসেম্বরে সেই আপিলের শুনানি শেষ হয়। পরে গত ১১ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাদের আপিল খারিজ করে দেন। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন দুই সাংবাদিক।

আরও পড়ুন- মিয়ানমারে দণ্ডিত রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের মুক্তি চেয়েছে জাতিসংঘ

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের বিচারক সোয়ে নেইং জানান, হাইকোর্টের মতো তারাও এই দুই সাংবাদিকের সাজা প্রসঙ্গে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বিচারক বলেন, তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল এবং সেই সিদ্ধান্তই বহাল থাকছে।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভঙ্গ করায় গত একবছর ধরে কারাগারে রয়েছেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক। ২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর এক অভিযানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১০ মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছিল বলে খবর প্রকাশ করেছিলেন তারা।

গ্রেফতার ও কারাদণ্ড

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ি। পুলিশ সদস্যদের আমন্ত্রণে এক রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরই নিখোঁজ হন তারা। পরে তাদের রাষ্ট্রীয় গোপন নথিসহ গ্রেফতার দেখানো হয়।

ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ির দাবি, মিয়ানমার পুলিশ তাদেরকে ফাঁসিয়েছে। পরে বিচার চলাকালে এক পুলিশ সদস্যও সাক্ষ্য দেন, ওই দুই সাংবাদিককে ফাঁসানোর জন্যই ফাঁদ পাতা হয়েছিল ওই রেস্টুরেন্টে।

বিজ্ঞাপন

পরে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। সরকারি আইনজীবীদের দাবি, রাখাইন অঙ্গরাজ্যে সামরিক বাহিনীর অভিযান নিয়ে গোপন তথ্য ছিল ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ির কাছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিচারিক আদালত তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

মিয়ানমারে দুই সাংবাদিককে গ্রেফতার ও তাদের বিচারের আওতায় আনার কার্যক্রম সমালোচিত হয় বিশ্বজুড়ে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দুই সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানায়। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ বিশ্ব নেতারাও তাদের শাস্তির বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে মিয়ানমারের বাইরে বীর হিসেবে দেখা হচ্ছে লোন ও সোয়ি’কে। টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৮ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের তালিকাতেও স্থান পান তারা।

বিজ্ঞাপন

কী অনুসন্ধান করছিলেন দুই সাংবাদিক?

বার্তা সংস্থা রয়টার্সে কর্মরত ছিলেন দুই সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ি ও। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে উত্তর রাখাইনের ইন দিন গ্রামে সামরিক বাহিনীর অভিযানে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছিলেন। অন্যান্য সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে সংগ্রহ করা তথ্য দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বলা বৌদ্ধ গ্রামবাসীসহ অভিযানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রকাশ করা হয়। বৌদ্ধ গ্রামবাসীরাও স্বীকার করেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছে এবং তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। প্যারামিলিটারি পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যও ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়ী করে।

এদিকে, সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে ইন দিন গ্রামের ওই রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা হয়। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা কোনো ভুল করেনি। মিয়ানমার সরকারও পরে ওই ঘটনার তদন্ত করে এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল বলে স্বীকার করা হয়। সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ডের পক্ষে সু চি

রাখাইনের ইন দিন গ্রামের ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যার ওই ঘটনায় সাত সেনাসদস্যের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী জানায়, ‘হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া’র কারণে তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচতে ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। ওই অভিযান ঘিরে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, স্থলবোমা দিয়ে হামলাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন