বিজ্ঞাপন

মে দিবসের তাৎপর্য জানেন শ্রমিকরা?

May 1, 2019 | 8:39 pm

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: শ্রমজীবী মানুষের শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে জন্ম মে দিবসের। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’ যে স্লোগান, তার প্রেরণাও লুকিয়ে আছে এই শ্রমিক দিবসেই। প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্রমিকদের প্রাণের বিনিময়েই অর্জিত হয় দিনে আট ঘণ্টা শ্রমের নিশ্চয়তা। এরপর থেকেই দেশে দেশে উদযাপিত হয়ে আসছে  শ্রমিকদের মর্যাদা অর্জনের দিনটি। দেশেও শ্রমিক সংগঠনগুলো তো বটেই, রাষ্ট্রীয়ভাবেও পালিত হয় বিভিন্ন কর্মসূচি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- শ্রমিক সমাগমে মুখরিত পল্টন এলাকা

কিন্তু যাদের জন্য এই মে দিবসের আয়োজন, সেই শ্রমিকরা কতটুকু জানেন এই দিবসটি সম্পর্কে? মে দিবসের ইতিহাস, দিবসটির তাৎপর্য— এর কতটুকু জানেন তারা? বুধবার (১ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় মে দিবসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের আয়োজনে অংশ নিতে আসা শ্রমিকদের কাছে জানতে চাই সে কথা।

বিজ্ঞাপন

শ্রমিকরা বলছেন, এই দিবসটি তাদের কাছে একটি ছুটির দিন বৈ অন্য কিছু নয়। বড়জোড় মে দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের মে দিবসের কার্যক্রম। তারা জানালেন, কেউ কেউ মে দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন অন্যের অনুরোধে। কেউ আবার এসেছেন কৌতূহল থেকে, কী হয় এই দিনের আয়োজনে।

বুধবার মে দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন, সমাবেশ আয়োজন করে বিভিন্ন ধরনের শ্রমিকদের সংগঠন। সেসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার শ্রমিক।

আরও পড়ুন- কাজ হোক আট ঘণ্টা, বিশ্রাম ও ছুটি নিশ্চিতের দাবি

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ স্বাস্থ্যকর্মী সেবাসংঘ নামের একটি সংগঠনের মানববন্ধনে অংশ নেন লিলি বেগম (৪৫)। মে দিবস কী— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না! এর ইতিহাস কী, সেটাও বলতে পারব না।’ এখানে কেন এসেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন বাড়ানোর জন্য। মাসিক ছুটি বাড়ানোর জন্য। এর বেশি কিছু জানি না। তাছাড়া আমি যে হাসপাতালে কাজ করি, সেখানকার এক আপা আসতে বলছেন, তাই আসছি।’

মিরপুর থেকে মে দিবসের এক মানববন্ধনে অংশ নেন গার্মেন্টসকর্মী সুমন আহমেদ (২৭)। তিনি কাজ করেন গার্মেন্টসের প্রিন্টিং বিভাগে। তিনিও জানেন না, মে দিবসের অর্থ কী। সুমন বলেন, আজ বন্ধুরা মিলে ঘুরতে এসেছি প্রেস ক্লাবে। দেখতে এসেছি, মে দিবসে কী হয়।

আরও পড়ুন- মে দিবস গ্রীষ্মের এক তপ্ত রোদের দিন!

বিজ্ঞাপন

মানববন্ধন চলতে চলতেই উত্তরার এক গার্মেন্টসের শ্রমিক মোখলেসুর রহমানকে (১৭) দেখা গেল সেলফি তুলতে ব্যস্ত। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘আজ ছুটি পেয়েছি। তাই সারাদিন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরব আর সেলফি তুলব। এগুলো আবার ফেসবুকে দিতে হবে। সবাইকে তো দেখাতে হবে যে আমরা মে দিবসের অনুষ্ঠানে এসেছি। তাই সেলফি তুলে রাখা।’ আর মে দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তার উত্তর, এটা ছুটির দিন।

প্রেস ক্লাব এলাকাতেই কথা হয় এমন আরও অনেক শ্রমিকের সঙ্গে। তাদের কেউই মে দিবসের ইতিহাস বা তাৎপর্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। তারা বলছেন, শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন-কর্মসূচি পালন করলেও মে দিবস সম্পর্কে কখনো কিছু বলেননি শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিকদের মে দিবস সম্পর্কে কিছু না জানার পেছনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মে দিবস কিভাবে এলো, সেই ১৮৮৬ সালের মে দিবসের সঙ্গে আজকের মে দিবসের প্রেক্ষাপটের পার্থক্য কী, মে দিবসের মূল মেসেজটি কী— এগুলো নিয়ে আমাদের খুব একটা কাজ করা হয়ে ওঠে না। আমাদের ত্রুটি আছে, দুর্বলতা আছে। প্রতিবছর রীতি মেনে আমরা একত্রিত হই। সারাবছরও বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করি। কিন্তু সমসাময়িক ইস্যুগুলো নিয়েই আমাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে মে দিবসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করা হয়ে ওঠে না।

আরও পড়ুন- যেভাবে এলো শ্রমিক দিবস

ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ নেবেন কি না— জানতে চাইলে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। মে দিবসের একমাস আগে থেকেই শ্রমিকদের কাছে সহজ ভাষায় এই দিবসের মূল তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য গ্রুপ মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই দিবসটি ঘিরে বর্তমান সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরা যেতে পারে। আমরা চেষ্টা করব।’

সারাবাংলা/এআই/ইএইচটি/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন