বিজ্ঞাপন

সমারসেটে অ্যামব্রোসের সঙ্গে আট মিনিট

June 18, 2019 | 1:51 pm

বিজ্ঞাপন

সমারসেট কাউন্টি গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ চলছিল। কারিবীয়দের ব্যাটিং ইনিংস তখন প্রায় শেষ। প্রেসবক্স থেকে নিচে নামছিলাম দুপুরের খাবার খেতে। সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখি দীর্ঘ্যদেহী কৃষ্ণবর্ণের একজন মানুষ বুলেট গতিতে কম বক্সের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

চোখ আটকে যায়, চেনা চেনা লাগছে। কালবিলম্ব না করে পিছু নেই। কম বক্সের ঠিক সামনে গিয়ে তিনি পিছু ফেরেন। অমনি মস্তিষ্ক সাড়া দেয়, এটা ক্যারিবীয় পেস বোলিং কার্টলি কিংবদন্তী অ্যামব্রোস।

সঙ্গে ছিলেন ডেইলি স্টার অনলাইনের ক্রিকেট সাংবাদিক একুশ তপাদার। দুজনে তাৎক্ষণিক আলোচনা সেরে নেই, ইন্টারভিউ চাইব। পরামর্শ করতে করতে তখন দেশের আরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা এলেন। তাদের উদ্দেশ্যও একই। অ্যামব্রোসের সাক্ষাৎকার চাই।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাব দেওয়া হলে জানতে চান, আমরা কি নিয়ে কথা বলব। যখন বলা হল, তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ও বিশ্বকাপ নিয়ে। রাজী হলেন না। বললেন, আমাকে নিয়ে কোন কথা নয়। বিশ্বকাপ নিয়ে হলে বলতে পারি। আমরাও সায় দেই। তিনি শুরু করবেন, অমনি আইসিসির এক নিরাপত্তা কর্মী এসে বাধ সাধলেন। সবার সঙ্গে অ্যামব্রোসকে কথা বলতে পারবেন না। শুধু মাত্র যাদের টিভি স্বত্ব আছে তারাই।

নিরাপত্তা কর্মীর আপত্তিতে কমবক্সের ভেতরে ডুকে গেলেন ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলিং ত্রাস। তবুও হতাশ হইনি। নিরাপত্তা কর্মীকে প্রতিশ্রুতি দেই,আমরা তার কোন ছবি তুলব না এবং ভিডিও করব না। এই শর্তে তিনি আমাদের অনুমতি দেন। মিনিট পাঁচেক পর ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে অ্যামব্রোস জানতে চান বলো কি প্রশ্ন?

বিজ্ঞাপন

প্রথমেই জানতে চাই, বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট নিয়ে তোমার মন্তব্য কী? তার উত্তরটা ছিল এমন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ও বাংলাদেশ ক্রিকেট; দুই দলেরই এখনো অনেক কাজ বাকি। আইসিসির র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে যেতে সেরা দলগুলোকে নিয়মিতই হারাতে হবে। তারা এখনো র‌্যাংকিংয়ের অনেক নিচে। অতএব তাদের অনেক কাজ বাকি।’

শেষ হতেই প্রসঙ্গক্রমে আসে তার সতীর্থ কোর্টনি ওয়ালশের কথা। ১২টি বছর যার সঙ্গে ক্যারিবীয়ানদের বোলিং আক্রমন শানিয়েছেন। এই মুহুর্তে যিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পেস বোলিং কোচ। কেমন লাগছে তাকে কোচিংয়ে দেখে?

ওয়ালশের কথা বলতেই ধীরলয়ের স্বর বদলে প্রানবন্ত হয়ে উঠে। ‘দেখ, কোর্টনি ওয়ালশ একজন কিংবদন্তী। ফাস্টবোলিংয়ে ওর মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার তুলনা হয় না। বাংলাদেশের বোলাররা যদি ওর কাছ থেকে শিখতে চায়, অনেক কিছুই শিখতে পারে। যতদিন কোর্টনি আছে, ওরা তুলনামুলক ভাল কিছুই শিখতে পারবে বলে আমর বিশ্বাস।’

এরপরেই চলে যাই উইন্ডিজ প্রসঙ্গে। কথা হয় দলটির বর্তমান করুণ দশা নিয়ে। বিশ্ব দরবারে যে দলটি এক সময়ে দাপিয়ে বেড়াত, যে দলটি আইসিসি বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের টানা চ্যাম্পিয়ন। আজ তারা ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের সাত নাম্বারে। একটা সময় ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের বোলাররা শাসন করতো ক্রিকেট বিশ্ব। ম্যালকম মার্শাল, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপের মতো বিশ্বসেরা ফাস্ট বোলাররা উঠে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে। এখন সেই দলে বিশ্বমানের কোন ফাস্ট বোলার নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে আগের মতো আর কোন পেসার উঠে আসছে না। বিষয়টি নিশ্চয়ই নির্মম কষ্টের।

বিজ্ঞাপন

অস্বীকার করলেন না অ্যাম্বি, ‘অবশ্যই কষ্টের। এক সময় আমরাই বিশ্বসেরা ছিলাম। আর এখন যখন দেখি আমাদের ক্রিকেট সংগ্রাম করছে তখন অবশ্যই কষ্ট লাগে। আমাদের দলের প্লেয়াররা সবাই ট্যালেন্টেড। এখন যেটা প্রয়োজন, একটা অবকাঠামো। তাহলেই হবে। এবং আমি আশা করব আগামি কয়েক বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষে অবস্থান করবে।’

নিজ দলের নিয়ে যবনিকা টেনেছেন অমনি উঠে এল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। গেল ৫ বছরে বিশ্ব ক্রিকেটে বদলে যাওয়া দলটিকে তুমি কীভাবে মূল্যায়ন করবে? উত্তরের শুরুটা করলেন টাইগারদের উন্নতি দিয়েই। যার শেষটা হল পরামর্শে।

‘ওদের ক্রিকেটের অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রথম যখন ওরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এল সবাই ওদের হারাত। কিন্তু এখন ওরা তুলনামুলক অনেক ভাল ক্রিকেট খেলে। দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ একটি দল। বিশেষ করে ওয়ানডে ও টি টোয়েন্টিতে। তবে টেস্টে আরো ভাল করতে হবে। কারণ ৫ দিন লম্বা সময়। খেলাও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হয়। তবে আমি বলব ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ সম্প্রতি দারুণ খেলেছে। ৯ ম্যাচের ৭টিতেই জিতেছে। এটা কিন্তু কম না। সুতরাং ওরা ভাল করেই জানে, ওয়ানডেতে কি করে একটি দলকে চাপে রাখতে হয়। কিন্তু তারপরেও আমি মনে করি ওদের আরো ভাল করতে হবে।’

                                          পড়ুন: নতুন রেকর্ড গড়েই পাঁচে টাইগাররা

এরপর আরো কয়েকটি প্রশ্ন করা হল। যার মধ্যে তার ব্যক্তিগত জীবনও এসেছে। মজার ব্যাপার হল, তাকে নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না…প্রথমে এমন এমন শর্ত দিলেও তা ভুলে অবলীলায় নিজের কথা বলে গেলেন।

এক সময় প্রশ্নোত্তর শেষ হয়ে এল। তিনি চলে গেলেন কম বক্সে।

সবাই জানেন নিশ্চই তার পরেও মনে করিয়ে দিচ্ছি। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের শেষ সারথীদের একজন কার্টলি অ্যামব্রোস। বর্তমানে টাইগার পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে প্রায় ১২ বছর জুটি বেঁধে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলতেন। ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে ৯৮ ম্যাচে নামের পাশে রেখেছেন ৪০৫টি উইকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৭৬ ম্যাচ থেকে তার সংগ্রহ ২২৫টি। আর ক্রিকেটে তার অসামান্য অবদানের জন্য তার নামের আগে সম্মানসূচক ‘স্যার’ উপাধি প্রদান করা হয়ে। তাই তো এখন তাকে সম্বোধন করে ডাকতে হলে স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস বলেই ডাকতে হয়।

এসময় পর্যন্ত সর্বমোট ১১ জন ক্যারিবীয় ক্রিকেটারকে ‘নাইট’ উপাধি দেওয়া হয়েছে। স্যার ভিভ রিচার্ডের পরে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এন্টিগুয়ান ক্রিকেটার হিসেবে ‘নাইট’ উপাধি পেয়েছেন স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পূর্বে একই সাথে তিনজন ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের ‘নাইট’ উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছিল। সেই তালিকায় ছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস আর সে সময়কার ক্যারিবীয় অধিনায়ক স্যার রিচি রিচার্ডসন এবং স্যার এন্ডি রবার্টস।

এই তিন ক্যারিবীয় কিংবদন্তী উইন্ডিজের জার্সি গায়ে চড়িয়ে খেলেছেন ২৩১টি টেস্ট ম্যাচ এবং ৪৫৬টি ওয়ানডে ম্যাচ।

২০০০ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর ক্যারিবীয়দের প্রিয় ‘অ্যাম্বি’ পালটে ফেলেছেন অ্যাম্বিশন। অ্যামব্রোস এখন এন্টিগান ব্যাড ড্রেড অ্যান্ড দ্যা বাল্ডহেডের বেজ গিটার বাজান আর কমেন্ট্রি দেন।

বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র‍্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।

আরও পড়ুন: যে কীর্তিতে শচীনের পাশেই সাকিব

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন