বিজ্ঞাপন

মাশরাফিদের ইশ ফ্যাক্টরের ম্যাচ

July 3, 2019 | 12:32 am

বিজ্ঞাপন

ইশ যদি তামিম ইকবাল রোহিত শর্মার ক্যাচটি না ছাড়তেন! ইশ যদি ভারতকে ২৮০ রানে বেধে ফেলা যেত! ইশ সৌম্য-তামিম যদি ইনিংসের শুরুটা দুর্দান্ত করে দিতেন! ইশ যদি সাকিব-মুশফিক ১শ রানের একটি জুটিও দিতে পারতেন! ইশ যদি লিটন দাস উইন্ডিজ ম্যাচের স্মৃতি ফেরাতেন! ইশ যদি সাকিব-লিটন ৪০ ওভার পর্যন্ত উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারতেন! তাহলে হয়তো পোর্ট অব স্পেনের স্মৃতি এজবাস্টনেও ফেরাতে পারত লাল সবুজের দল। বিশ্বমঞ্চে আরেকবার ভারত বধের মহাকাব্য রচিত হতো।

না, সেটা হয়নি। আর হয়নি বলেই সেমি ফাইনালের আশা ভঙ্গের বেদনায় নীল হয়ে মাঠ ছাড়তে হলো মাশরাফিদের। বুমরাহ, হার্দিক, শামি, চাহালদের ধ্বংস বাঁশির কর্কস সুরে পোড়ো বাড়ির নিস্তব্ধতা নামল উৎসবমুখর এজবাস্টনে। ৩১৫ রানের লক্ষ্যে নামা টাইগাররা তুলতে পারলো ২৮৬ রান। ২৮ রানে জিতল কোহলির ভারত।

গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফি বলেছিলেন, যেহেতু ইংল্যান্ড ম্যাচের উইকেটেই খেলা হচ্ছে যারা টস জিতবে আগে ব্যাটিং নিতে চাইবে। মানে ব্যবহৃত উইকেটে টসই এই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে। ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগে সেই টস ভাগ্যে কোহলির কাছে হেরে গেলেন মাশরাফি।

বিজ্ঞাপন

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেও দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল শুরুটা করেছিলেন দারুণ সতর্ক। ইনিংসের একেবারে প্রথম ওভারে মাশরাফির বল থেকে ১০ রান নিলেও পরের ওভারে এসে সাইফউদ্দিনকে খেললেন দেখেশুনে। মাত্র ১ রান নিলেন। তৃতীয় ওভারে আর মাশরাফি এলেন না। বদলি হিসেবে আনলেন মোস্তাফিজুর রহমানকে। মাত্র ৩ রান দিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিলেন ফিজ। চতুর্থ ওভারে এসেও স্পট বলে রোহিত, রাহুলদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সাইফ। ওভারের চার নম্বরটি বলটি হলেও একটি রানও দেননি। পাঁচ নাম্বার বলটি বাউন্ডারি সীমানা পার করে দিলেন রাহুল। ছয় নম্বর বলটিও ছিল ডট।

পরের ওভারে এসেই সম্ভাবনা জাগান স্পেশালিস্ট মোস্তাফিজ। ভারতের দলীয় রান তখন মাত্র ১৮। তার করা চতুর্থ বলে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত শর্মা। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে ছুটে গিয়েও লোপ্পা ক্যাচটি দুহাতের তালুতে জমাতে পারেননি তামিম ইকবাল! ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন পান রোহিত। এরপর থেকেই শুরু হয় তার পাগলাটে ব্যাটিং। যা গিয়ে থামে ১০৪ রানে। ৯২ বলে ৬টি চার ও ১টি ছয়ে বিশ্বকাপে চতুর্থ শতকের দেখা পান এই ভারতীয় ‘হিট ম্যান’।

পার্ট টাইমার সৌম্যর বলে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে রোহিত যখন সাজঘরে ফিরে যান ভারতের দলীয় সংগ্রহ তখন ১৮০ রান। কিন্তু তার বিদায়েও যেন ভারতের গ্যালারিতে কোনো খেদই নেই। থাকবেই বা কেন? তামিম ইকবালের ওই ক্যাচ মিসের সুযোগে যা করার তা করে দিয়েছেন রোহিত। তাছাড়া এরপরে যিনি ব্যাটিংয়ে তিনি তো নাম্বার ওয়ান। যার ব্যাটিং প্রদর্শণী দেখতে গোটা ক্রিকেট বিশ্বই মুখিয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

কোহলি এলেন। উইকেটের অপর প্রান্তে লোকেশ রাহুল। গ্যালারি থেকে উচ্চস্বরে ইন্ডিয়া! ইন্ডিয়া! ধ্বণি ভেসে আসছে। আজ সাড়ে ৩শ রান তো হবেই, ৩৭০ ও হতে পারে। সেই উন্মাদনায় বাজছে ঢোল, বাজছে শঙ্খ। আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশা। কিন্তু ৩৩তম ওভারে বোলিংয়ে এসে নীল জার্সির ভক্তদের সেই প্রত্যাশায় পানি ঢেলে দিলেন রুবেল হোসেন। ব্যক্তিগত ৭৭ রানে লোকেশ রাহুলকে পাঠিয়ে দিলেন উইকেটের পেছনে মুশফিকের নিরাপদ গ্লাভসে।

রুবেল তোপে লোকেশ রাহুল ফিরে যাওয়ার পর তৃতীয় উইকেটে রিশব পান্তের সঙ্গে জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের জ্বালানী যুগিয়ে যাচ্ছিলেন ভারত দলপতি বিরাট কোহলি। চার-ছক্কার ফুরঝুড়ি ততটা না ছোটাতে পারলেও কুইক রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে সিঙ্গেল আর ডাবলসে চোখ রাঙাচ্ছিলেন মাশরাফিদের। ঠিক তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন মোস্তাফিজ।

ইনিংসের ৩৯তম ওভারে এসে গ্যালারির চেহারাই বদলে দিলেন এই টাইগার কাটার স্পেশালিস্ট। এক বল বিরতিতে তুলে নিলেন ভারতের দুই পিরামিডসম ব্যাটসম্যানকে। ওভারের দ্বিতীয় বলে বিরাট কোহলিকে কাটার বিষ ঢেলে মিড উইকেটে তুলে দিলেন রুবেলের তালুতে। তার আগে ২৭ বল খেলে তিন চারে দলকে দিয়ে গেছেন ২৬ রান।

চতুর্থ উইকেটে রিশবকে সঙ্গ দিতে এলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু ফিজ তোপে সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ওভারের চতুর্থ বলে তাকে শূন্য হাতে তুলে দিলেন সৌম্য সরকারে নিরাপদ তালুতে। সাড়ে ৩শ তখন ভারতের জন্য হয়ে ওঠে দূরের বাতিঘর। এরপর সাকিব ঘূর্ণিতে ৪৮ রানে রিশব পান্ত ও মোস্তাফিজের আরো তিন উইকেট শিকারে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩১৪ রান। ক্যাপ্টেন কুল মহেন্দ্র সিং ধোনি ৩৩ বলে খেলেছেন ৩৫ রানের কার্যকর এক ইনিংস।

বিজ্ঞাপন

ইনিংস শেষে বাংলাদেশের বোলারদের খেরখাতা হলো; মোস্তাফিজুর রহমান ৫টি, সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন ও সৌম্য সরকার ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

যেহেতু এই বিশ্বকাপেই ৩২১ রান টপকে উইন্ডিজ বধের অনন্য ইতিহাস মাশরাফিরা লিখেছেন সেহেতু এই লক্ষ্যটিকে দুর্গম মনে হয়নি। শুধু প্রয়োজন ছিল একটি ভালো শুরুর। যা সৌম্য-তামিম করতে পারেননি। মোহাম্মদ শামির শর্ট ডেলিভারিতে দলীয় ৩৯ ও ব্যক্তিগত ২২ রানে তামিমের ফেরার পর ব্যক্তিগত ৩৩ রানে সৌম্য যখন হার্দিক তোপে ইনিংসের সমাপ্তি টানলেন বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৭৪ রান।

তাদের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান ও সাউফউদ্দিন ছাড়া আর কেউই উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেননি। ২৪ রানে যুভেন্দ্র চাহালের ঘূর্ণিতে মুশফিক, ২২ রানে পান্ডিয়ার দ্বিতীয় আঘাতে লিটন ও বুমরাহর গুড লেংথ বলে ৩ রানে স্ট্যাম্প ভাঙেন মোসাদ্দেক।

তবে তৃতীয় উইকেটে সাকিব-মুশফিক কিংবা চতুর্থ উইকেটে সাকিব-লিটন কমপক্ষে ১শ রানের জুটি উপহার দিতে পারলে হয়তো ম্যাচের ভাগ্য ঘোরাতে পারত লাল সবুজের দল।

লোয়ার মিডল অর্ডারে সাব্বির-সাইফউদ্দিনের ব্যাটিং দেখে কিন্তু তেমনই মনে হয়েছে। ৩৬ বলে ৩৬ রানের দাপুটে ইনিংস খেলে বুমরার দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন সাব্বির। আর সাউফউদ্দিনের নামের পাশে অপরাজিত ৫১ রান। তাও ৩৮ বল থেকে।

সাকিব অবশ্য যথারীতি অপ্রতিরোধ্যই ছিলেন। ৭৪ বলে ৬৬ রানের সুবাদে তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ফিফটি। যা তাকে পৌঁছে দিয়েছে আরেকটি মাইলফলকে। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০ রান ও ১০ উইকেটের ‘ডাবল’ অর্জন করলেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ১০ উইকেট হয়ে গিয়েছিল আগেই। ৫০০ রান ছুঁতে মঙ্গলবার (২ জুলাই) বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে প্রয়োজন ছিল ২৪ রান। যা অনায়াসেই তুলে নিলেন। তার আগে বল হাতে নিয়েছেন আরেকটি উইকেট।

এক আসরে ৫০০ রান ও সর্বোচ্চ উইকেটের আগের রেকর্ড ছিল তিলকরত্নে দিলশানের। ২০১১ আসরে শ্রীলঙ্কার ওপেনার রান করেছিলেন ৫০০ রান, অফ স্পিনে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। তবে সুপার ম্যান সাকিবে বাংলাদেশের শেষ রক্ষা হয়নি। ২০১৫ সালের পর আরেকবার ২২ গজের বিশ্বযুদ্ধে সেমি ফাইনালের সম্ভাবনা জাগিয়েও খেলা হলো না। অপেক্ষা বাড়ল আরেকটি বিশ্বকাপের।

বাংলাদেশের দর্শকরা বিশ্বকাপের সব ম্যাচ অনলাইনে কোনো ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি বা চার্জ ছাড়াই দেখতে পারবেন র‍্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com-এ। এছাড়া র‍্যাবিটহোলের অ্যাপেও দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/UNCWS2 (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া আইওএস ব্যবহারকারীরা ডাউনলোড করতে পারবেন https://goo.gl/vJjyyL (শুধুমাত্র বাংলাদেশ) এই লিংকে ক্লিক করে।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এমআরপি

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন