বিজ্ঞাপন

একদিন আগেই বিকল রেলের অ্যাপ

July 28, 2019 | 1:49 pm

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রেলওয়ে বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদুল আজহার আগাম টিকিট বিক্রি হবে ২৯ জুলাই (সোমবার) থেকে। আগাম টিকিট বিক্রির প্রথমদিন ৭ আগস্টের টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা। তবে রেলসেবার অ্যাপ ব্যবহার করে অনেক যাত্রী নির্ধারিত শিডিউলের বাইরে ৬ আগস্টের টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কিন্তু গত ঈদের মতো এবারও আগাম টিকিট বিক্রির অ্যাপের সার্ভার ডাউন হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

টিকিট প্রত্যাশী ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে রোববার (২৮ জুলাই) কথা বলে এ চিত্র জানা গেছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ট্রেনের টিকিট বিক্রির একদিন আগেই অ্যাপে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। যদিও বলা হয়েছিল, এবার একসঙ্গে লক্ষাধিক মানুষ অ্যাপে হিট নিতে পারবে।

গত ঈদে অ্যাপ ব্যবহারে চরম ভোগান্তি আর অব্যব্যস্থাপনার অভিযোগ ছিল রেলওয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমের (সিএনএসবিডি) বিরুদ্ধে। সিএনএসবিডি ২০০৭ সাল থেকে রেলের টিকিটিং পদ্ধতি পরিচালনা করছে। অনলাইন ও অ্যাপের কাজও তারা করছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবার ই-টিকিটিং সিস্টেমের অবস্থার উন্নতি হবে।

রোববার (২৮ জুলাই) সকালে আরিফ নামের একজন যাত্রী জানান, সকাল ৯টার পর থেকে এই অ্যাপের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করছেন।

বিজ্ঞাপন

আরেকজন বলেছেন, একঘণ্টা চেষ্টা করে অবশেষে টিকিট পেয়েছি। কিন্তু অ্যাপ ঠিকঠাক কাজ করছে না।

আরেকজন ই-সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট কাটতে গিয়ে দেখেন সাইট সার্ভার ডাউন হয়ে আছে।

অ্যাপের সমস্যা আবার কেন হচ্ছে এমনটা জানতে সিএনএসবিডির একাধিক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউই ফোন ধরেননি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে মো. শামছুজ্জামান-এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এবার এই প্রথম অ্যাপ নিয়ে অভিযোগ শুনলাম। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’

রেল মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রণব কুমার ঘোষ এর আগে সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিএনএসবিডি’র সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ। এরপর একটি প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেলের আইটি সাপোর্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে।

তাদের তৈরি করা অ্যাপে গত ঈদুল ফিতরে ৯৫ ভাগ টিকিট যাত্রী টিকিট কাটতে গিয়ে জটিলতার মুখে পড়েন। এ তথ্য তারা নিজেরাই প্রকাশ করেন। এছাড়া বছরের পর বছর ঈদের সময়ে সার্ভার বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা তো আছেই।

আড়াই মাস পর একইচিত্র ঈদুল আজহার টিকিট বিক্রিতেও। বিক্রি শুরুর আগের দিনেই অ্যাপে লগইন সমস্যা ও ওয়েবসাইটে সার্ভার ডাউন দেখানো শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

গতবার অ্যাপ নিয়ে অভিযোগ আসার পরিপ্রেক্ষিতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করতে যান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। মন্ত্রী তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন, সিএনএসবিডি যদি ঈদ টিকিট ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো করতে না পারে তাহলে তাদের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করা হবে না। উল্লেখ্য, কয়েকবছরের জন্য চুক্তি নবায়নের দরখাস্ত আগেই রেলভবনে দিয়ে রেখছিল সিএনএসবিডি।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে সিএনএসবিডি যখন রেলের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করে তখন তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় তাতে রেলের নিজস্ব লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটি করেনি। এছাড়া ২০১২ সালে যখন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয় তখন এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরপর তিনমাস করে প্রায় ছয় মাস মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় সিএনএসবিডি। পরে তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদ পায়। ওইবছর নতুন করে চুক্তি নবায়ন করা হয়।

২০১৪ সালের ওই চুক্তি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা ওই চুক্তির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা বিস্তারিত না জেনেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন এমনটি জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি সূত্র।

সিএনএসবিডি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ছোট ভাই আরিফুল হক রনির প্রতিষ্ঠান। রনির মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তার স্ত্রী।

সম্প্রতি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক রেলের অ্যাপ রেল সেবা নিয়ে প্রশংসামূলক মতামত ফেসবুকে শেয়ার করলে তিনিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের সমালোচনার মুখে পড়েন। অনেকেই মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী পলক সিএনএসবিডির পক্ষে রয়েছেন।

আরও পড়ুন

‘ঈদে ট্রেনের টিকিট শুধু কমলাপুর নয়, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে আসছে অ্যাপ
নামসহ ট্রেনের টিকিট দেওয়া শুরু, দেখাতে হচ্ছে এনআইডি
ঈদে অনলাইনে ট্রেনের ১ লাখ ৬৬ হাজার টিকিট বিক্রি

 

সারাবাংলা/এসএ/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন