বিজ্ঞাপন

ত্রুটি-বিচ্যুতি ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক বিএনপির

September 1, 2019 | 8:55 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দলের মধ্যে ছোট-খাটো ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ভুলে গিয়ে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আজকে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। দলের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে হবে, দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। আমাদের জনগণের কাছে চলে যেতে হবে। জনগণকে নিয়েই আন্দোলন সফল করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল এরই মধ্যে সংগঠিত হতে শুরু করেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে দলকে সংগঠিত করতে শুরু করেছেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দল সম্পূর্ণ সংগঠিত হবে এবং অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করবে।’

‘আমরা অবশ্যই এই দানব, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে সফল হব,’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ’

বিএনপি প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিএনপির জন্ম হয়েছিল আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কারণে। বিএনপির জন্ম হয়েছিল এমন একটি রাজনৈতিক শূন্যতায়, যে শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের জনগণ যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে, সেটির মূল চেতনা ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, একটি গণতান্ত্রিক সমজা প্রতিষ্ঠা করা।’

“এই জায়গা থেকে সরে গিয়ে আওয়ামী লীগ যখন তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য ’৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ কায়েম করল, তখন যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, সেই শূন্যতার ফলেই যে রাজনৈতিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেই ট্র্যাজেডির পরেই জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,”— বলেন ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরা সম্পৃক্ত ছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘একদিকে মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আরেকদিকে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ, আরেক দিকে ইউনাইটেড পিপলস পার্টির একটি অংশ এসে জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারপরে এই বিএনপি আর পেছনে ফিরে তাকায়নি। হ্যাঁ, অনেক বিপর্যয় এসেছে, সংকট এসেছে, অনেক আঘাত এসেছে— এসব কিছুকেই বিএনপি তার আদর্শ দিয়ে, জিয়াউর রহমানের দর্শন সঙ্গে নিয়েই উঠে দাঁড়িয়েছে।’

‘সেজন্য আমরা সবসময় বলি, বিএনপিকে পরাজিত করা এত সহজ নয়,’— বলেন ফখরুল।

আরও পড়ুন- বিএনপি: উত্থানের তিন দশক, পতনের এক যুগ

আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতার পরে তারা রাষ্ট্রের অবস্থা একেবারে লেজে-গোবরে করে ফেলেছিল। চতুর্দিকে তারা ব্যর্থ হচ্ছিল এবং সেই ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্যই প্রথমে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছে। তারও আগে বিশেষ ক্ষমতা আইন দিতে হয়েছে এবং সব শেষে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল তৈরি করে তাদেরকে বিদ্রোহ দমন করতে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সেদিনের চেয়ে বর্তমান অবস্থা আরও খারাপ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা এমনভাবে গ্রাস করেছে যে সরকারি লোকের বিরুদ্ধে বা ওইসব সংস্থার বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা যায় না, যারা জনগণের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালাচ্ছে।’

‘অন্যায় করে, নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে অন্যের সমস্ত অধিকারগুলো হরণ করে, পায়ের তলে দাবিয়ে দিয়ে টিকে থাকা যায় না। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশের জনগণ চিরকাল সংগ্রাম করে, লড়াই করে তাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছে। এবারও তারা লড়াই করে, সংগ্রাম করে তাদের অধিকার আদায় করে নেবে,’— বলেন বিএনপির মহাসচিব।

১৯৯১ সালে নির্বাচনি জনসভায় খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের হাতে গোলামির জিঞ্জির, আর আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা। খালেদা জিয়ার এই কথাটা অত্যন্ত সিগনিফিকেন্ট। তারা (আওয়ামী লীগ) গোলাম, সবসময় গোলামি করেছে। আজকেও গোলামি করছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তারা আজকে বাংলাদেশের সমস্ত অধিকার, স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের এই কথাগুলো তাদের একদম ভালো লাগবে না। কারণ, এরই মধ্যে তারা বলতে শুরু করেছে, আমরা নাকি রোহিঙ্গাদের যেতে বাধা দিচ্ছি। তারা ব্যর্থ হয়েছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। অথচ জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে অতি অল্প সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছিল। পরবর্তীকালে খালেদা জিয়া প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আলোচনার মাধ্যমে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। আর আজকে দুই বছর চলে গেল, একটা রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত পাঠাতে পারেনি।’

সরকারের কোনো বন্ধু নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন,  ‘চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নাকি অত্যন্ত সুউচ্চ পর্বতের মতো। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও বেশি। লাভ কী হলো? আজকে ভারত কী অবস্থান নিয়েছে? কেন তাদের বোঝাতে পারছে না যে এই রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কত বড় বোঝা হয়ে গেছে। পারছে না, ব্যর্থ হচ্ছে এই কারণে যে তাদের হাঁটুর মধ্যে জোর নেই।’

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, এই নির্বাচন বাতিল করতে হবে, যে নির্বাচন আপনারা চুরি করে নিয়ে গেছেন, ডাকাতি করে নিয়ে গেছেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় আপনাদের নির্বাচন করতে হবে। এই ধরনের নির্বাচন কমিশন দিয়ে হবে না। যারা শুধু পদলেহন করে, তাদের দিয়ে হবে না।’

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা অ্যাডভোকেট আব্দুর রাকিবসহ অন্যরা।

২০ দলীয় জোটের শরিক দল জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, পিপলস লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুব হোসেন, এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন