বিজ্ঞাপন

খালেদার চেয়ার শূন্য রেখে বিএনপির কাউন্সিল নয়

September 26, 2019 | 10:02 am

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ— এই তিন শীর্ষ নেতা দলের জাতীয় কাউন্সিলের ব্যাপারে মাঝে-মধ্যে গণমাধ্যমে কথা বললেও খালেদা জিয়ার চেয়ার শূন্য রেখে কাউন্সিল করার ব্যাপারে আগ্রহী নয় বিএনপি।

বিজ্ঞাপন

দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছ থেকেও কাউন্সিলের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ওই কাউন্সিলে ফের দলের চেয়াপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নির্বাসনে থাকা তারেক রহমান।

কাউন্সিলের ২৫ মাস পর গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে কারাবন্দি হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিজ্ঞাপন

রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপলস অর্ডার (আরপিও) বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে বলা আছে, ‘নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অবশ্যই নির্বাচিত কমিটি থাকতে হবে।’ বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ‘জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এই কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর।’

যেহেতু ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়, সেই হিসাবে গত মার্চ মাসের মধ্যে বিএনপির সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর শূন্য পদগুলোও পুরোপুরি পূর্ণ হয়নি। এখনো জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ শূন্য রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২১ জুন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২২ জুন তাদেরকে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে ফুল দিতে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দলের জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম, পুনর্গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে জেলা ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে। আমরা শিগগিরই জাতীয় কাউন্সিলের দিকে যাব।’

এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনের ব্যাপারে কথা বলেন। নবীনদের জন্য জায়গা করে দিতে নিজেরা নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোরও আশ্বাস দেন।

কিন্তু সম্প্রতি দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার চেয়ার শূন্য রেখে জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় না বিএনপি। কারাগারে যাওয়ার পর গত সাড়ে ১৯ মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বড় অনুষ্ঠানগুলো খালেদা জিয়ার চেয়ার শূন্য রেখে করা হলেও, জাতীয় কাউন্সিল সেভাবে করতে চায় না দলটি। অর্থাৎ খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় কাউন্সিল আয়োজনে আগ্রহী নন বিএনপি নেতারা। তিনি মুক্ত হওয়ার পরই কাউন্সিল আয়োজনের পক্ষে অবস্থান তাদের।

সূত্রমতে, দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ তিন নেতা কাউন্সিলের ব্যাপারে গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি কেবল কথার কথা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফেরানোর জন্যই তারা এসব কথা বলেনছেন। খালেদা জিয়াকে কারাগারে এবং তারেক রহমানকে দেশের বাইরে রেখে কাউন্সিলের কর্মযজ্ঞে হাত দেওয়ার মতো অবস্থা এই মুহূর্তে বিএনপির নেই।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কাউন্সিল আয়োজনের ক্ষেত্রে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কথাও ভাবতে হচ্ছে বিএনপিকে। প্রথমত কাউন্সিল আহ্বান করবেন কে? অর্থাৎ কে হবেন কাউন্সিলের আহ্বায়ক? পদাধিকার বলে সাধারণত দলীয় প্রধানই কাউন্সিলের আহ্বায়ক হন। কারাগারে থাকায় খালেদা জিয়াকে আহ্বায়ক করার সুযোগ নেই। আর বিদেশে থাকায় তারেক রহমানকেও আহ্বায়ক করা সম্ভব নয়। আর খালেদা-তারেকের বাইরে ‍তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করার প্রস্তাবকে বিএনপির জন্য ‘আত্মঘাতী’ বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

তাছাড়া কাউন্সিল করতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সে অর্থ জোগার করাও বিএনপির জন্য কঠিন হবে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে সাধারণত দলের বিত্তবান ও ব্যবসায়ী নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অর্থের জোগান দেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কেউ স্বেচ্ছায় টাকা দেবেন— এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। একটি কাউন্সিলে কমপক্ষে ছয় কোটি টাকার খরচ হয় বলে জানান বিএনপির এক শীর্ষ নেতা।

কাউন্সিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বা দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। তারেক রহমানের কাছ থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

কাউন্সিলের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন