বিজ্ঞাপন

অস্থির পেঁয়াজের বাজার, উঠছে-নামছে সকাল-বিকেল

January 6, 2020 | 10:35 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতেই ফের অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। গত এক সপ্তাহ ধরে সকাল-বিকেল ওঠানামা করছে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। দেশি পেঁয়াজের দাম বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১৪০ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিল, খিলগাঁও আরামবাগ, নাখালপাড়াসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দেশি মুড়ি কাটা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। অন্যদিকে তুরস্ক, মিশর, চীন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোমবারের পেঁয়াজের এই দাম অগের দুই দিনের তুলনায় কিছুটা কম। তবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৭০ টাকা।

আরও পড়ুন- আবারও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, ভোজ্যতেলও লাগামহীন

এদিকে, পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতারা পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য পাইকারি বাজারকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, গত এক সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে কোনো কোনো দিন পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বেড়ে গেছে। পরদিন দেখা গেছে একই পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১৫ থেকে ২০ টাকাও। এতে করে বেশি দামে কেনা পেঁয়াজ একদিনের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে পরের দিন লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতাদের অভিযোগ, দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেক জেলায় পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। আর এ কারণে জানুয়ারির মাসের প্রথম দিন থেকেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। তবে আগামী ১৫ জানুয়ারির পর থেকে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে বলে আশাবাদী তারা।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ-রসুন সমিতির প্রচার সম্পাদক আড়তদার মো. শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সোমবার প্রতি কেজি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, মিশরীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১১৮ থেকে ১২০ টাকা ও চীনের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৪ টাকা দরে।

আরও পড়ুন- মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির আড়ালে লোপাট ৩০০ কোটি টাকা

বিজ্ঞাপন

শহিদুল বলেন, দেশের আটটি জেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। কিন্তু গত কয়েকবদিন দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এসব জেলায় অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার খারাপ আবহাওয়ার কারণে চাহিদামতো পেঁয়াজ ঢাকাতে সরবরাহ করা যায়নি। এসব কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। তবে আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে দাম আরও কমে যাবে।

পেঁয়াজের দাম ওঠানাম করছে প্রতিদিন

গত ৪ জানুয়ারি রাজধানীর শ্যামবাজারে প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। গত ৫ জানুয়ারি পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। সোমবার দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজারের খুচরা দোকানদারের পেঁয়াজ কেনার স্লিপ দেখে এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে পাইকারি বাজারের আড়তদারদের একটি বড় অংশই সাংবাদিক পরিচয় দিলে দাম কমিয়ে বলছে— এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে মতিঝিল কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আবদুল জলিল পেঁয়াজ কেনার স্লিপ দেখিয়ে সারাবাংলাকে বলেন, গত ৪ জানুয়ারি শ্যামবাজারের শাহ মখদুম ভাণ্ডার থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কিনেছি ১৬২ টাকা করে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ যোগ করতে হয়। আবার প্রতি বস্তায় (৯০ কেজি এক বস্তা) কিছু পেঁয়াজ নষ্টও থাকে। সেগুলো ফেলে দিতে হয়। এতে করে প্রতি কেজি পেঁয়াজের কেনা দাম পড়েছে ১৭০ টাকা। গত দুই দিনে পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে আমার ৪ জানুয়ারির পেঁয়াজ কিছু রয়ে যাওয়ায় আমাকে লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পেঁয়াজের দামের চিত্র

গত ২০ ডিসেম্বর মতিঝিল, খিলগাঁও, আরামবাগসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং দেশি মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা দরে। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্তও এই দামই ছিল বাজারগুলোতে। কিন্তু বছরের প্রথম দিন থেকেই বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। ৪ ও ৫ জানুয়ারি কোনো কোনো বাজারে দেশি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি দরেও।

গেল ঈদুল আজহার পর থেকেই বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এর মধ্যে ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় ভারত সরকার প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। আগে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার থাকলেও গত ১৩ সেপ্টেম্বর তা বাড়িয়ে ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়। সপ্তাহ দুয়েক পর ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির প্রবণতার মধ্যে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে পেঁয়াজের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে। গত আড়াই মাসে প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬০ টাকাতেও বিক্রি হয় পেঁয়াজ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় বর্তমানে বাজারে সরবরাহ খানিকটা বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় দেশি পেঁয়াজও উঠতে শুরু করেছে বাজারে। তবে এখনো পেঁয়াজের দামে লাগাম পরানো যায়নি।

এর মাঝখানে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাকে করে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। এসব ট্রাকে ক্রেতাদের লম্বা লাইন থাকায় একপর্যায়ে দুই কেজির পরিবর্তে একেকজন ক্রেতার কাছে ১ কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে ফের একেকজন ক্রেতার কাছে দুই কেজি করে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্তে ফিরে আসে টিসিবি। ২৩ ডিসেম্বর থেকে কমানো হয় পেঁয়াজের দামও। এখন ৩৫ টাকা কেজি দরে টিসিবি’র ট্রাক থেকে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রতিবছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ২৩ দশমিক ৭৬ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন চাহিদার কাছাকাছি হলেও উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশ নষ্ট হয় বলে প্রতিবছর ৭ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন