বিজ্ঞাপন

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, র‌্যাবের জালে আটক ৬

March 4, 2020 | 10:37 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজধানীর তুরাগ থানার ধওর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির সময় ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় অস্ত্র, ডিবি জ্যাকেট, ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাফ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে গ্রেফতার ছয় জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে উত্তরা র‌্যাব-১-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১-এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, র‌্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল— ডিবি পরিচয়ে অপরাধী একটি চক্র অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানাবিধ অপরাধ করে আসছে। এমনকি তারা ওয়াকিটকি ও অস্ত্রের পাশাপাশি ডিবির জ্যাকেট ও ডিবির স্টিকারযুক্ত গাড়িও ব্যবহার করে থাকে। এমন তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তুরাগ এলাকায় ব্লক রেইড দেয় র‌্যাব-১-এর একটি টিম। এ সময় একটি হায়েস মাইক্রোবাস থেকে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় ৮/১০ জনের একটি দলকে রাস্তায় গাড়ি থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে র‌্যাবের টহল দলটি তাদের চ্যালেঞ্জ করলে কয়েকজন দ্রুত মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে ছয় জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ছয় জন হলেন— ডাকাত দলের সদস্য মো. মোস্তফা কামাল ওরফে লিটন, মো. শাহাব উদ্দিন, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. নাছির উদ্দিন, মো. আলমগীর শেখ ও মো. শফিকুল ইসলাম। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, চারটি চাপাতি, চারটি ওয়াকিটকি সেট, দুইটি ডিবি জ্যাকেট, একটি হ্যান্ডকাফ, দুইটি ডিবি পুলিশের ভুয়া আইডি কার্ড ও ১২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব সিও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ছয় জন জানান, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। দলের স্থায়ী সদস্য ১০/১২ জন। মোস্তফা কামাল ওরফে লিটন ও মো. শাহাব উদ্দিন এই ডাকাত দলের মূল হোতা। দীর্ঘদিন ধরে তারা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে আসছে।

ডাকাত দলের সদস্যরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানিয়েছে, চক্রটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাংকের গ্রাহকদের অপহরণ ও অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কৌশল নিয়ে থাকে। প্রথমে দলের দুয়েকজন ব্যাংকে গ্রাহকের ছদ্মবেশে ঢুকে কোনো গ্রাহককে ‘টার্গেট’ করে। বাইরে অবস্থান নেয় দুয়েকজন, আর মূল দলটি মাইক্রোবাস নিয়ে সুবিধাজনক কোনো স্থানে অপেক্ষঅ করতে থাকে। ব্যাংকের ভেতরের দলটি ‘টার্গেট’ নির্ধারণ করে বাইরের টিম ও মূল টিমকে জানায়। পরে ওই ‘টার্গেট’ গ্রাহক বের হলে মাইক্রোবাসটি পেছনে বা সামনে থেকে তার পথরোধ করে ডিবি পরিচয়ে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়ির ভেতরেই তাকে নির্যাতন করে টানা ছিনিয়ে নিয়ে কোনো একটি স্থানে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

ডাকাত দলের সদস্যরা আরও জানায়, সাধারণ পথচারীদেরও ডিবি পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় তারা এরপর তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা বা মূল্যবান কোনো সামগ্রী থাকলে ছিনিয়ে নেয়। টাকা-পয়সা না থাকলে ওই ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করে। টাকা পেলে ভিকটিমকে চোখমুখ বেঁধে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে চলে যায়।

র‌্যাব জানিয়েছে, দলটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোনার দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ডিবি পরিচয় ব্যবহার করে ডাকাতি করে থাকে বলে জানিয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর এলাকায় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে দেশে ফিরে আসা প্রবাসীদের অপহরণ ও ছিনতাইয়ের সঙ্গেও জড়িত এই ডাকাত দলটি।

জিজ্ঞাসাবাদে লিটন জানান, তিনি এই চক্রের মূল হোতা। ২০০৮ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছেন। এর আগে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। পরে শাহাব উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটি গঠন করেন। ডাকাতির জন্য টার্গেট নির্ধারণ ও ডিবি কর্মকর্তা হিসেবে টার্গেটের সামনে উপস্থিত হওয়ার দায়িত্ব থাকত তার। ডাকাতির টাকা ভাগাভাগিও করতেন তিনি। এখন পর্যন্ত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দেড় শতাধিক ডাকাতি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন। র‌্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে ১২ থেকে ১৪টির মতো ডাকাতির মামলা রয়েছে। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে একাধিকবার কারাভোগ করেছেন তিনি।

ডাকাত দলের আরেক সদস্য শাহাব জানান, তিনি মহাখালীতে একটি রেস্তোরাঁয় মেসিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় লিটনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারা ডাকাত দল গঠন করেন। শাহাবও ডাকাতির সময় ডিবি কর্মকর্তা সাজতেন। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় পাঁচ থেকে ছয়টি ডাকাতির মামলা রয়েছে। পুলিশের কাছে ধরা পড়ে একাধিককার কারাভোগ করেছেন তিনিও। অর্ধ শতাধিক ডাকাতিতে তিনি অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের কাছে।

বিজ্ঞাপন

শফিকুল ইসলাম জানান, শাহাব উদ্দিনের মাধ্যমে ডাকাত দলে যুক্ত হন তিনি। পাশাপাশি রাজধানীর আশপাশের এলাকায় ফেরিওয়ালা হিসেবেও কাজ করেন। তার নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় চার থেকে পাঁচটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। পুলিশ তাকেও একাধিককার কারাগারে পাঠিয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন