বিজ্ঞাপন

যেভাবে কনডেম সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চে মাজেদ

April 12, 2020 | 1:05 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরও এক হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হলো। সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মজিদ ঝুললেন ফাঁসির দড়িতে। তাতে বাঙালি জাতির পিতৃহত্যার কলঙ্ক কিছুটা হলেও কমলো।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কার্যকর হয়েছে আবদুল মজিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ। সেইসঙ্গে কেরাণীগঞ্জে স্থাপিত কেন্দ্রীয় কারাগারেও প্রথম কোনো মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে।

ফাঁসি কার্যকরের আগের সময়টুকু কেমন কেটেছে আবদুল মজিদের? তাকে যে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল, সেখান থেকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময়টুকু কেমন ছিল?

আরও পড়ুন- বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর

বিজ্ঞাপন

কারা সূত্র জানিয়েছে, রাত ১০ টার দিকে মাছ আর সবজি দিয়ে ভাত খেতে দেওয়া হয় আবদুল মাজেদকে। সামান্য একটু খেয়ে পুরোটাই রেখে দেন প্লেটে। এরপর পানি পান করে রাতের খাওয়া শেষ করেন তিনি।

এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে কারা মসজিদের ইমাম মাজেদকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে বলেন এবং তওবা পড়ান। তওবা পড়ার সময় চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি।

শেষ ইচ্ছার বিষয়ে জানতে চাইলে মাজেদ কারা কর্মকর্তাদের বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ব্যক্তিকে মারার দুঃসাহস কারও ছিল না। কিন্তু সেই কাজটা আমিসহ আমরা করেছিলাম। আবারও প্রমাণিত হলো পাপ বাপকেও ছাড়ে না। এতদিন বিদেশে থাকতে পারলাম, আর এখন কেন দেশে এলাম, বুঝতে পারছি না। মরণ আমাকে টেনে এনেছে দেশে। ফাঁসি আমার কপালে ছিল।’ বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

বিজ্ঞাপন

পরে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে কারা সেল থেকে মাজেদকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যান সহকারী জল্লাদের দল।

আরও পড়ুন- মাজেদের ফাঁসিতে স্বস্তি আইনমন্ত্রীর

এর আগে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সময় মাজেদ বলেছিলেন, আমি আমার কৃতকর্মের ফল হাতে নিয়ে মৃত্যুবরণ করছি। তোমরা যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন অন্তত ভালো কিছু কোরো। আমি জানি, আমার কারণে তোমাদের বেঁচে থাকাটাও অনেক কষ্টের হবে। অনেকে গালমন্দ করবে। তবুও তোমরা কাউকে কিছু বলবে না।

এদিকে, আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করাকে ঘিরে রাত ১০টা ৫ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন ডিআইজি প্রিজন। রাত ১০টা ১০ মিনিটে প্রবেশ করেন অ্যাডিশনাল আইজি প্রিজন কর্নেল আবরার হোসেন। রাত ১০টা ১৫ মিনিটে প্রবেশ করেন ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন। ১০টা ৪৫ মিনিটে প্রবেশ করেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের একজন ম্যাজিস্ট্রেট, রাত ১০টা ৫২ মিনিটে প্রবেশ করেন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা। রাত ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদারও প্রবেশ করেন কেন্দ্রীয় কারাগারে।

বিজ্ঞাপন

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ১টার দিকে স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের হাতে মাজেদের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। আর মাজেদের পরিবার জানিয়েছে, মরদেহ নেওয়া হবে ভোলায়। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনকে মরদেহ দাফনে সহায়তা করতে বলেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের আগে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের কারাগারের বাইরে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা অপেক্ষা করছেন, কখন মাজেদের মরদেহ বের হবে। মরদেহে ঘৃণা প্রকাশ করতেই তারা এসেছেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, মাজেদের সঙ্গে তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের একটি দল গত ১০ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেখা করলেও আজ শনিবার কেউ সাক্ষাতের অনুমতি পাননি।

দীর্ঘ দিন বিদেশে পালিয়ে থাকা আবদুল মাজেদকে গত ৭ এপ্রিল ভোরে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এরপর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ৮ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা জজ আদালত মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন।

পরে রাষ্ট্রপতির কাছে জাতির পিতাকে হত্যার ঘৃণ্য অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চান মাজেদ। ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সে আবেদন নাকচ করে দিলে তার সাজা কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকেনি। শেষ পর্যন্ত ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কার্যকর হলো তার ফাঁসির রায়।

আরও পড়ুন-

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষাই মাজেদের একমাত্র পথ

‘পলাতক খুনিদের আনতে পারিনি, বিষয়টা পীড়া দেয়’

খুনি মাজেদের সঙ্গে দেখা করেছেন স্বজনরা, প্রস্তুত ১০ জল্লাদ

মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত দুই খুনিকে ফেরাতে চায় সরকার

মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের আগে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি নাসিমের

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন