বিজ্ঞাপন

করোনাকালেও চলছে ইটভাটা, কাজ করছে শত শত শ্রমিক

April 21, 2020 | 10:07 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অবস্থাও দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার এরই মধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এছাড়া সারাদেশে জনসমাগম ও সামাজিক অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সবধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। কার্যত এখন পুরো দেশেই চলছে ‘লকডাউন’। ভাইরাসটি রোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেশের জনগণকে ঘরে থাকার কথার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারি সেই নির্দেশনা অমান্য করে ঢাকার কেরানীগঞ্জের বেশকয়েকটি ইটভাটায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে একটি মহল।

বিজ্ঞাপন

কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসব ইটভাটা বন্ধে স্থানীয় কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় এসব ইটভাটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) কোন্ডা ইউনিয়নের বেশকয়েকটি ইটভাটার একাধিক শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, করোনা ঝুঁকি সবারই আছে। কেরানীগঞ্জে অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। আমরাও পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। মালিকরা আমাদের ছুটি দেয়নি। এক প্রকার বাধ্য হয়েই কাজ করছি। জিম্মিদশার মতো কাজ করতে হচ্ছে।

জেবি এন্টারপ্রাইজ নামে ইটভাটার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, এই ভাটার মালিকের নাম জালাল উদ্দিন। করোনায় কয়েকজন আক্রান্তের পর এলাকায় মাইকিং করা হয়। ইটভাটাও বন্ধ করতে বলে প্রশাসন। পরিবার থেকেও বাড়িতে থাকতে বলা হচ্ছে। কিন্তু মালিক ছুটি দিচ্ছে না। একদিনের জন্য ছুটি চাইলেও বলা হয়, কাজ শেষ করে যেতে। এক চালান ইটের কাজ শেষ করতে কমপক্ষে দুমাস সময় লাগে। এজন্য যাওয়া হয় না। আবার না বলে চলে যাব তাও সম্ভব না। টাকা আটকানো থাকে। আগে প্রতিদিনের মজুরি প্রতিদিন দিতো। আর এখন একদিন পর পর মজুরি দেয়।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নেই ইট ভাটা আছে প্রায় ১০০টি। এসব ইটভাটার অধিকাংশের নেই পরিবেশের ছাড়পত্র অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাগজ। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ইটভাটা চালিয়ে আসছে প্রভাবশালী মহল। দেশের এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতেও প্রায় প্রতিটি ইটভাটাতেই চলছে কার্যক্রম। ভাটার চিমনি দিয়ে ধোঁয়াও বের হচ্ছে। প্রতিটি ভাটায় কাজ করছে প্রায় ৫০ জন করে শ্রমিক। এই শ্রমিকরা সামাজিক দূরুত্ব মানা তো দূরের কথা তাদের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। কোন্ডা ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জের খুব কাছাকাছি হওয়ায় এমনিতেই করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে এলাকাটি। তার ওপর প্রতিটি ইটভাটায় এতগুলো শ্রমিক দিয়ে কোনো প্রকার নিয়ম না মেনে কাজ করিয়ে এই এলাকাটিকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন ভাটা মালিকরা।

এসআর এন্টারপ্রাইজ নামে আরেক ভাটার কয়েক শ্রমিক জানান, ভাটায় তারা নিয়মিত কাজ করলেও তাদের কোনো ধরনের মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অন্য কোনো সুরক্ষা সামগ্রী দেয়নি মালিকরা। এছাড়া মালিক মজুরির বাইরে তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি বা খাবার দেয়নি। এমনকি দেশের এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে সরকারি বা অন্য কোনো সহযোগিতাও পায়নি শ্রমিকরা।

সরকারি বন্ধের নির্দেশ থাকার পরেও কীভাবে চলছে ভাটাগুলো?- এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বকরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা পেয়ে মালিকদের ইটভাটা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এরপরেও কীভাবে সেগুলো চলছে বলতে পারি না।’ এ ব্যাপারে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, কেরানীগঞ্জের অন্যান্য ইউনিয়নে যেসকল ইটভাটা রয়েছে তার সবগুলোই উপজেলা প্রশাসন বন্ধ করে দিয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে শুধুমাত্র কোন্ডা ইউনিয়নের ইটভাটাগুলো চলছে। এর পেছনে মূল ভুমিকা পালন করছে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম। সেখানে তারও কয়েকটি ভাটা রয়েছে। তিনি তার ভাটা চালু রাখতে গিয়ে বাকিদেরও সহযোগিতা করছে।

ভাটা চালু রাখার বিষয়ে কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম ফারুক মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন করে কোনো কাজ হচ্ছে না। আগে থেকেই ভাটাতে আগুন দেওয়া ছিল। সেই ইট না পোড়ানো পর্যন্ত কাজ করতে হবে।’ আর শ্রমিকদের আটকে রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণের সময় ভাটায় কাজ করা শ্রমিকদেরও চাল-ডাল দেওয়া হয়েছে। যদি তারা বলে থাকে পায়নি, তবে সেটা মিথ্যা কথা।’

কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত দেবনাথ ইটভাটা চালুর বিষয়ে সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় চেয়ারম্যান, সোস্যাল মিডিয়াসহ সব জায়গায় আমি ইটভাটা বন্ধ করতে বলেছি। এরপরেও কেউ যদি ভাটা খোলা রেখে কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি না মেনে এতগুলো শ্রমিক দিয়ে একসঙ্গে কাজ করায় তা সত্যিই দুঃখজনক। আজ আবারও ইটভাটার মালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে বন্ধ করতে বলেছি। আগামীকাল খোঁজ নেব। বন্ধ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন