বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমের কারণেই সাবরিনাদের কাণ্ড প্রকাশ পেয়েছে: প্রতিমন্ত্রী

July 26, 2020 | 8:37 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংকটের মধ্যেও সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাওয়ার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। গণমাধ্যমের কল্যাণেই জেকেজি হেলথকেয়ারের ডা. সাবরিনা বা রিজেন্টের মো. সাহেদদের প্রতারণার কথা মানুষ জানতে পেরেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, করোনার এই সংকটের মধ্যে গণমাধ্যমকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তা আরও ছয় মাস টেনে বেড়াতে হবে বলে মনে করছেন একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক এবং গণমাধ্যম সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু। তিনি বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকার অনুদান নয়, সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে গণমাধ্যমগুলোকে। তথ্য প্রতিমন্ত্রীও এমন প্রস্তাবনার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

শনিবার (২৫ জুলাই) সেন্টার ফর সোস্যাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (সিসার্ফ) আয়োজিত ‘সারাবাংলা লাইটহাউজ’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শবনম আযীম অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানটি সারাবাংলা ডটনেটের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।

অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান বলেন, করোনাকালীন যে কয়েকটি পেশার মানুষ সম্মুখে থেকে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গণমাধ্যমকর্মীরা পালন করেছেন। তাদের আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে শ্রদ্ধা জানাই। সংবাদকর্মীদের জন্যই রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ বা জেকেজি হেলথকেয়ারের ডা. সাবরিনার মতো মানুষদের কথা মানুষ জানতে পেরেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা গেছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মোজাম্মেল বাবু বলেন, করোনাভাইরাস একটি নতুন ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিজ্ঞানী, চিকিৎসকরাও এই ভাইরাস নিয়ে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য উপস্থাপন করেছেন। এ নিয়ে অনেক গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে। সেসবের মধ্যে থেকে সুষ্ঠু ও সত্য সংবাদ জনগণের সামনে তুলে ধরা ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। গণমাধ্যম সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সঠিক তথ্যপ্রবাহ অব্যাহত রেখেছে।

একাত্তর টিভির এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগামী ছয় মাস গণমাধ্যমকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে সংবাদকর্মীদের পারিশ্রমিকের জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন গণমাধ্যম মালিকদের। টেলিভিশনগুলো মোটামুটি চলতে পারলেও সংবাদপত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কারণ তাদের সার্কুলেশন তলানিতে নেমে গেছে। ঝুঁকিতে আছে অনলাইন পোর্টালগুলোও। এই পরিস্থিতিতে সরকারের অর্থ সহায়তা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন।

তিনি আরও বলেন, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন নির্ভরশীল। আমি জানি অনেক পণ্য, যেমন— সাবান, স্যানিটাইজার এসব শতভাগ ভালো নয়। এখানে জালিয়াতি করছে। কিন্তু আমি তা তুলে ধরতে পারি না। কারণ ওই ভেজাল পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই বিজ্ঞাপন নির্ভরশীলতা থেক বেরিয়ে আসতে হবে।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের রূপরেখা তুলে ধরে মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা কোনো রোডম্যাপ নয়, সরাসরি সহযোগিতা চাই। তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মীদের মতো গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অনুদান নয়, সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হলে কোভিড-১৯-এর সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আমরা চাই, আমাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য সহজ শর্তে ঋণ চাই। এই টাকা সরাসরি কর্মীদের অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।

এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, সেখানে সব শ্রেণিপেশার মানুষের কথা বলা রয়েছে। আমি বলতে চাই, আমি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতাম, আমি এখনই মোজাম্মেল ভাইয়ের এই প্রস্তাব পাস করে দিতাম। আমি বলব, গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন যেগুলো আছে, সেগুলোর প্রতিনিধিরা যদি আসেন, অবশ্যই তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসব। আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করব।

তিনি আরও বলেন, তাছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে গেছেন। এখন টেলিভিশনকেও শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তাই এই খাত নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা সবসময় রয়েছে।

লাইটহাউজে আলোচনা হয় সম্প্রচার নীতিমালা ও অনলাইন নীতিমালা নিয়েও। সম্প্রচার নীতিমালার কাজ চলছে জানিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনলাইন পোর্টালের আবেদনের জন্য জুলাই পর্যন্ত সময় ঠিক করা ছিল। এ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এসব আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দাদের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন হয়েই তথ্য মন্ত্রণালয় আসবে। কারণ স্বাধীনতাবিরোধীসহ সরকার কিংবা রাষ্ট্রের সঙ্গে যায় না— এমন অনলাইনেরও আবেদন থাকতে পারে। সেসব বাছাই করে ভেরিফিকেশন করা কঠিন কাজ। সেজন্য অনলাইনের নিবন্ধন দিতে দেরি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের টেলিভিশনগুলো ঘুরে দাঁড়াতে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানান মোজাম্মেল বাবু। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। এ বিষয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের যেকোনো ভালো কাজেই সবসময় পাশে থাকবেন।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন