বিজ্ঞাপন

গ্লোবের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’ কি আদৌ করোনা প্রতিরোধে সক্ষম?

October 3, 2020 | 1:00 am

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দগুলোর একটি ভ্যাকসিন। বলা চলে, গোটা বিশ্ব উন্মুখ হয়ে আছে এই ভ্যাকসিনের জন্য। বিশ্বের অনেক দেশই চেষ্টা করে যাচ্ছে এই ভ্যাকসিন তৈরির। এরই মধ্যে বেশকিছু ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ভ্যাকসিন সন্ধানের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় রয়েছে বাংলাদেশও। গ্লোব বায়োটেকের দাবি, তারা প্রাণীদেহে দুই ধাপের পরীক্ষাতেই সফল হয়েছে তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিনে। ‘ব্যানকোভিড’ নামে তাদের এই ভ্যাকসিনটি এবার মানবদেহে প্রয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোব।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, সংবাদ সম্মেলন করে গ্লোব জানিয়েছিল, তাদের ভ্যাকসিন প্রাণীদেহে প্রয়োগের প্রথম ধাপে সাফল্য পেয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, তাদের ভ্যাকসিন প্রাণীদেহে দ্বিতীয় দফায় প্রয়োগেও মিলেছে সাফল্য। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার গবেষণা নিবন্ধ ছাপানোর প্রিপ্রিন্ট সার্ভার ‘বায়ো আর্কাইভে’ তাদের এই সাফল্যের খবর প্রকাশিত হয়েছে বলে জানানো হয়। গ্লোবের গবেষকরা জানান, তাদের ভ্যাকসিন প্রাণীদেহে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

এমন পরিস্থিতিতে গ্লোব বায়োটেকের ‘সাফল্যে’র এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের সাফল্য কামনা করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ো আর্কাইভ কোনো স্বীকৃত জার্নাল নয়, এখানে ‘পিয়ার রিভিউ’য়ের কোনো সুযোগ নেই। ফলে এখানে প্রকাশিত কোনো নিবন্ধকে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ নেই। বায়ো আর্কাইভের ওয়েবসাইটেও ঠিক একই কথাই লেখা রয়েছে।

গবেষণাপত্র, জার্নাল বায়ো আর্কাইভ

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ সারাবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানান, তারা তাদের ভ্যাকসিনের নাম দিয়েছেন ‘ব্যানকোভিড’, যা মূলত ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টস এম-আরএনএভিত্তিক ভ্যাকসিন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এই ঘরানার মধ্যে ‘ব্যানকোভিড’ই প্রথম ভ্যাকসিন। আর এটিই প্রাণীদেহে দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োগ করে সাফল্য মিলেছে। কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি পরিচালিত ‘বায়ো আর্কাইভ’ সার্ভারে তাদের এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেকোনো গবেষণার ফল নিবন্ধ আকারে কোনো ‘পিয়ার রিভিউড’ জার্নালে প্রকাশ পেলে তবেই সেটিকে গ্রহণযোগ্য করা হয়। ‘পিয়ার রিভিউড’ জার্নালে কোনো গবেষণা প্রতিবেদন বা নিবন্ধ প্রকাশের আগে জমা দিলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা (রেফারি নামে ডাকা হয়) সেটি পর্যালোচনা করেন। গবেষণার প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে গবেষণা পদ্ধতি, ফলাফল বিশ্লেষণের প্রক্রিয়াসহ গবেষণার যেকোনো ধাপ নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকলে তা উত্থাপন করেন তারা। তাদের সেসব প্রশ্নগুলোর মীমাংসা করার পরই কেবল স্বীকৃত ‘পিয়ার রিভিউড’ জার্নালগুলো গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকে। ফলে সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থাকে না।

গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আরও খবর-

গ্লোবের গবেষণাটি যে ‘বায়ো আর্কাইভ’ সার্ভারে প্রকাশ পেয়েছে, সেটি ‘পিয়ার রিভিউড’ তো নয়ই, আদতে কোনো জার্নালই নয়। বায়ো আর্কাইভকে (bioRxiv) বলা হয় ‘প্রিপ্রিন্ট সার্ভার’। জীববিজ্ঞান বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যেকোনো গবেষণার ফল দ্রুত তুলে ধরতে এই সার্ভার ব্যবহার করে থাকেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। এর কারণ হলো ‘পিয়ার রিভিউড’ জার্নালগুলো ‘রেফারি’দের পর্যবেক্ষণ ও গবেষণকদের সেগুলোর সমাধান করার পেছনে বড় একটি সময় চলে যায়। সেই ‘রিভিউ’ প্রক্রিয়া কঠোর নয় বলে বায়ো আর্কাইভে দ্রুতই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা সম্ভব হয়, যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের বিজ্ঞানীরা অনেক সময় আলোচনা-পর্যালোচনা করে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, বায়ো আর্কাইভ সার্ভারে তারা নিজেরাই স্পষ্ট ভাষায় লিখেছে, তাদের সার্ভারে প্রকাশিত নিবন্ধ ‘পিয়ার রিভিউ’ দ্বারা সার্টিফায়েড নয়। অর্থাৎ এটি সংশ্লিষ্ট খাতের অন্য গবেষকদের অনুমোদিত নয়। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত অনেক গবেষণাপত্র প্রকাশ পাচ্ছে উল্লেখ করে বায়ো আর্কাইভ লিখেছে, ‘মনে রাখতে হবে, এগুলো প্রাথমিক রিপোর্ট যা কোনো পিয়ার-রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। এগুলোর ভিত্তিতে তাই কোনো উপসংহার টানার সুযোগ নেই। এছাড়া এটি কোনো ধরনের ক্লিনিক্যাল এবং স্বাস্থ্যগত বিষয়ে নির্দেশনা না। এখানে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের তথ্য গণমাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তথ্য হিসেবে প্রকাশ পাওয়াও উচিত হবে না।’

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

গ্লোবের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে জানতে চাই ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসা সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেনের কাছে।

ডা. মুশতাক সারাবাংলাকে বলেন, গ্লোব বায়োটেক অ্যানিম্যাল ট্রায়াল করেছিল বলে জানিয়েছিল। তাদের সেই ট্রায়ালের ফলাফল কোনো আন্তর্জাতিক মানসম্মত জার্নালে এখনো প্রকাশ করেছে কি না, তা জানি না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে তালিকা আছে, তাতে এখন পর্যন্ত গ্লোব বায়োটেকের নাম দেখিনি। সব ভ্যাকসিন যে সফল হবে, তা কিন্তু না। কিন্তু তারা যে চেষ্টা করছে, তার জন্য তাদের অবশ্যই অভিনন্দন জানানো উচিত। যদি তারা সফল হয়, সেটি নিশ্চিতভাবেই আন্তর্জতিক জার্নালে প্রকাশ পাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা। আর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তো নিশ্চিতভাবেই প্রকাশ পাবে।

তিনি আরও বলেন, হিউম্যান ট্রায়াল ছাড়া আসলে কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধকেই সফল মন্তব্য করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তারা হয়তো প্রথম পর্যায়ের অ্যানিমেল ট্রায়ালের ফল জানিয়েছে কোথাও। হয়তো তারা আসলে বলতে চাইছে তাদের গবেষণার ফলাফল কোথাও তালিকাভুক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক জার্নালে হয়তো এরপর প্রকাশিত হবে। অ্যানিমেল ট্রায়াল সফল হলে তারা বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদে (বিএমআরসি) আবেদন জানাবে হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য। আমি তাদের সফলতা কামনা করি। তবে গ্লোব বায়োটেক সফল হোক বা না হোক, তাদের বিজ্ঞানসম্মতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা জীবপ্রযুক্তি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. মারুফুর রহমান অপু সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে করোনাভাইরাসের একমাত্র ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট গ্লোব বায়োটেকের ব্যানকোভিড। করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারি রোধে গ্লোবের ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রচেষ্টাটিও অসামান্য অর্জন। ভ্যাকসিন তৈরির প্রাথমিক পর্যায় প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় গ্লোব বায়োটেক সাফল্য পেয়েছে এবং সেই বিবরণটি তারা আন্তর্জাতিক প্রিপ্রিন্ট সার্ভার বায়ো আর্কাইভে প্রকাশ করেছে। তবে গ্লোব বায়োটেক মুখপাত্র ড. আসিফ মাহমুদ যে বলেছেন, তাদের ভ্যাকসিনটি মহামারি প্রতিরোধে সক্ষম— এমনটি জানিয়েছে মার্কিন গবেষণা জার্নাল বায়ো আর্কাইভ, জনসাধারণের কাছে এটি একটি ভুল বার্তা দিচ্ছে। কারণ বায়ো আর্কাইভ কোনো গবেষণা জার্নাল নয় এবং তারা ব্যানকোভিড নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেনি।

তিনি বলেন, বায়ো আর্কাইভ একটি প্রিপ্রিন্ট সার্ভার। অর্থাৎ একটি গবেষণা প্রবন্ধ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের আগে গবেষকরা তাদের ফল দ্রুত মানুষকে জানাতে চাইলে গবেষণাপত্রের খসড়া বায়ো আর্কাইভে আপলোড করে প্রকাশ করতে পারেন। বৈজ্ঞানিক গবেষণা জার্নালগুলোর মতো এখানে কোনো গবেষণাপত্র পিয়ার রিভিউ, অর্থাৎ ওই বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয় না। তবে এখানে প্রকাশ পাওয়ার পর সেটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকরা নিজেদের পর্যবেক্ষণ বা মন্তব্য জানাতে পারেন।

ডা. মারুফুর রহমান আরও বলেন, বায়ো আর্কাইভে প্রকাশিত কোনো গবেষণাপত্রকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যাবে না। এটি বায়ো আর্কাইভের ওয়েবসাইটেই বলে দেওয়া আছে। আমি আশা করছি গ্লোবের ভ্যাকসিন তৈরির এই চমৎকার প্রচেষ্টা ও প্রাথমিক ইতিবাচক ফলাফলটি দ্রুতই আন্তর্জাতিক পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হবে এবং অতি দ্রুতই তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও নির্ভরযোগ্য তথ্য আমাদের দিতে পারবে। আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন ব্যানকোভিডের জন্য শুভকামনা।

প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী সারাবাংলাকে বলেন, বায়ো আর্কাইভে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ওপর নির্ভর করে কোনো গবেষণাকে সফল বলাটা ‘প্রিম্যাচিউর দাবি’ হয়ে যায়। তারা এর আগে অ্যানিমেল ট্রায়ালের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেটির ফল কোনো আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়নি এখনো। সেটি সফল হলেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যেতে কিছু ধাপ পার করতে হয়। যেমন— বিএমআরসি থেকে ইথিক্যাল অনুমোদন নিয়ে সেটি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে যাবে। সেখানে এই বিষয়ে যে জাতীয় কমিটি আছে, তারা সেটি পাস করবে। আমার জানামতে এগুলো কিন্তু কিছুই এখনো হয়নি, অন্তত দৃশ্যমান নয়। সুতরাং এই ভ্যাকসিন সফল নাকি ব্যার্থ— সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না। এটা পুরোপুরি প্রিম্যাচিউর দাবি।

তিনি বলেন, কোনো আন্তর্জাতিক মানসম্মত জার্নাল কখনোই এভাবে ফলাফল জানাবে না। তারা কোনো গবেষণাপত্র পেলে সেটি পিয়ার রিভিউ করে প্রকাশ করবে। সেক্ষেত্রেও কিন্তু জার্নাল কিন্তু নিজে গবেষণার কার্যকরিতা সম্পর্কে কিছু বলবে না। কিন্তু জার্নালে প্রকাশ পেলে গণমাধ্যম সেই জার্নালে প্রকাশিত বলে খবর প্রকাশ করতে পারবে। ফলে অ্যানিমেল ট্রায়াল শেষেই ভ্যাকসিনকে কার্যকর বা সফল দাবি করাটা যেমন বিজ্ঞানসম্মত নয়, তেমনি এই লাইন কোট করে সংবাদ প্রকাশও সঠিক নয়। একইভাবে নির্মাতা কোম্পানি এমন দাবি করলে তাদের সেই দাবিও ভুল।

যা বলছে গ্লোব

‘করোনা প্রতিরোধে সক্ষম ব্যানকোভিড’— এমনটি কি আসলেই কোনো জার্নালে বলা হয়েছে, নাকি কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— এমন প্রশ্নের জবাবে গ্লোব বায়োটেকের আরঅ্যান্ডডি বিভাগের প্রধান ড. আসিফ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আসলে কিছুই বলা হয়নি। এ বিষয়গুলো আমরা সোমবার (৫ অক্টোবর) প্রেস কনফারেন্স করে একসঙ্গে বলতে চাই। এর আগে যেন আর কোনো কনফিউশন তৈরি না হয়, সে কারণে আমরা আসলে কথা বলতে চাই না। কিন্তু তবু কনফিউশন হচ্ছে। আমরা আসলে একটি পাবলিকেশন করেছি। সেটা করার পেছনে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা যেন এটা দেখেন। তাদের যদি কোনো কমেন্ট থাকে, তবে তা যেন করতে পারেন। সেই অনুযায়ী আমাদের যদি কোনো ডেভেলপমেন্ট দরকার হয়, তবে তা আমরা করতে প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, যেহেতু পাবলিকেশনটা উন্মুক্ত, তাই সেটা সবাই দেখতে পাবে। আমি যদি একটা পিয়ার রিভিউ জার্নালে পাবলিশ করি, সেখানে কিন্তু এক-দুই বা তিন জনের এডিটোরিয়াল বোর্ড থাকে, সঙ্গে রিভিউয়ারও থাকেন দুয়েকজন। তারা পেপারটা রিভিউ করে প্রকাশ করেন। কিন্তু বায়ো আর্কাইভে বিশ্বব্যাপী ওপেন অ্যাকসেস আছে। মডার্না বা অন্যরাও কিন্তু তাদের প্রথম পাবলিকেশন বায়ো আর্কাইভেই করেছে। এখানে অনলাইনে আপনি বিশ্বের যেকোনো বিজ্ঞানীর কমেন্ট পাচ্ছেন। একইসঙ্গে আপনি গবেষণার ফল পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশের পাঁচ থেকে ছয় মাস আগেই বায়ো আর্কাইভে পেয়ে যাচ্ছেন, যেন আপনার কম্পিটিটর দুই দিন পর আপনার কাজটা ক্লেইম করতে না পারে। এখানে কিছু স্ট্র্যাটেজিক বিষয় থাকায় আমাদের এই প্রক্রিয়ায় যেতে হয়েছে।

ড. আসিফ আরও বলেন, এই পাবলিকেশনে আমরা কী বলেছি, সেটা কিন্তু পরিষ্কারভাবে ডাটা দেওয়া আছে। সেটা দেখে কোনো বিজ্ঞানী যদি এমন মন্তব্য করেন যে এই গবেষণার উপাদান করোনা প্রতিরোধে সক্ষম এবং সেটা দেখে যদি কেউ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, সে বিষয়ে তো আমাদের কিছু বলার থাকে না।

অ্যানিমেল ট্রায়ালের দুই ধাপের ফল তুলে ধরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য বিএমআরসি’তে আবেদন করা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, বিএমআরসিতে যাওয়া বা ক্লিনিকাল ট্রায়াল বা সিআরও করা বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানি না। হয়তো প্রেস কনফারেন্সে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন। আমরা বিএমআরসিকে আমাদের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়েছি। প্রেস কনফারেন্সে আপনাদের অফিশিয়ালি সব তথ্য জানানো হবে।

এর আগে, গত ১ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্লোব বায়োটেক জানায়, তারা দেশেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে জন্য কাজ করছে। ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পরই তারা এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ শুরু করে।

পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে গ্লোব ঘোষণা দেয়, প্রাণীদেহের ওপর এই ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের ট্রায়াল তারা সফলভাবে শেষ করেছে। পরবর্তী ধাপগুলো ঠিকঠাকমতো সম্পন্ন করতে পারলে ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে তারা টিকা বাজারজাত করতে পারবে।

১০ সেপ্টেম্বর সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে গ্লোব বায়োটেকের ডা. আসিফ মাহমুদ বলেছিলেন, তারা প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে সাফল্যের কথা গণমাধ্যমে ‍তুলে ধরেছিলেন। এরপর রেগুলেটেড অ্যানিম্যাল ট্রায়াল বা প্রাণীদেহে নিয়ন্ত্রিতভাবে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ করেছেন তারা। এই ট্রায়াল শেষে ওই সময় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ চলছিল। সপ্তাহখানেকের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ শেষ করে বিশ্লেষণের পর মানবদেহে ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বর মাসেই শুরু করার বিষয়ে আশাবাদী বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন