সচিবালয়ে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ চালু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কঠোরভাবে চালু হয়েছে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক ছাড়া সচিবালয়ে প্রবেশ থেকে শুরু করে সর্বত্র সবকিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে প্রচারের উদ্যোগের পাশাপাশি তা কঠোরভাবে প্রয়োগও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সোমবার (৯ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, সচিবালয়ের প্রবেশপথ থেকেই মাস্ক পরিধান নিশ্চিত দেখে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মাস্ক ছাড়া মন্ত্রণালয়গুলোতে সেবা দেওয়া হচ্ছে না, লিফট ব্যবহার করা যাবে না, মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলা যাবে না- এমন শব্দ সম্বলিত পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে সচিবালয় জুড়ে। প্রবেশ পথের স্ক্যানিং মেশিন, লিফট, করিডোর, ওয়াশরুমসহ সর্বত্র মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যসেবা সম্বলিত পোস্টার ও ফেস্টুন রয়েছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে গত ২৫ অক্টোবর একটি নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনা সব মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতরসহ মাঠ প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ওই নির্দেশনায় শীত মৌসুমে করোনাভাইরাসের আরেক দফা সংক্রমণের আশঙ্কা করা হয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ ঠেকাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেবা নিতে আসা সকলে যাতে মাস্ক ব্যবহার করে সেজন্য ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ পদ্ধতি অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়, দফতর, বিভাগ, সংস্থাসহ দেশের সকল পর্যায়ে মাস্ক পরিধান ছাড়া কোনো ধরনের সেবা না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি যাতে সকলে মাস্ক ব্যবহার করে সেজন্য পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, লিফলেট এবং ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচারণা চালাতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ নির্দেশনা পেয়ে মন্ত্রণালয়গুলো নিজ নিজ দফতরের সামনের লিফলেট, ব্যানার ও ফেস্টুনে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের প্রবেশ পথেই রয়েছে মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কিত নানা তথ্য।

বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একতলা ওপরেই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানেও প্রবেশ মুখে ফেস্টুনে লেখা রয়েছে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস।’ তার উল্টোদিকের ইউনিটে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সেখানে লেখা রয়েছে ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি।’ তার ওপরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সেখানেও ‘নো মাস্ক, নো এন্ট্রি’ রয়েছে।

মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সামনে দেখা গেছে ‘ওয়্যার মাস্ক, গেট সার্ভিস’ সম্বলিত ব্যানার। গৃহায়ন ও গণপূর্তের সামনে লেখা লয়েছে ‘মাস্ক পরিধান করুন, সেবা নিন।’

একইভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, ক্রীড়া, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান, স্থানীয় সরকার, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, বস্ত্র ও পাট, খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ, আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক, পাবর্ত্য চট্টগ্রামবিষয়ক, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতিবিষয়ক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, তথ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ সরকারের সবগুলো মন্ত্রণালয়ের সামনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরিধানের পাশপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘আসছে শীত মৌসুমে করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে সেটা মোকাবিলায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করা এই নির্দেশনা এরই মধ্যে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কার্যকরও হচ্ছে।’

এদিকে দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এনে নির্দেশনা জারি করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি মাইকে ঘোষণার পাশাপাশি উপসনালয়ের প্রবেশ মুখে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে ব্যানার-ফেস্টুনে প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কমিটিকে বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম