বিজ্ঞাপন

জনগণ দূরের কথা, নেতাকর্মীদের মনের ভাষাই বুঝতে পারছে না বিএনপি

November 20, 2020 | 3:03 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিএনপি জনগণ শুধু নয়, নিজের নেতাকর্মীদের মনের ভাষাই বুঝতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিপরীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনগণের মনের মণিকোঠায় অবস্থান করছেন বলে মন্তব্য তার।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নিজের সরকারি বাসভবন থেকে অনলাইনে যুক্ত হন সরকারের এই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব বলেছেন— সরকার নাকি জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারছে না। আমরা বলতে চাই— দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবস্থান জনগণের মনের মণিকোঠায়। এ দেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তর পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় ও জনঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদের নাম শেখ হাসিনা। জনগণের মনের ভাষা ও চোখের ভাষা বুঝতে পারেন বলেই তিনি আজ এত জনপ্রিয়। দেশের জনগণের কোনো ইস্যুতে সবার আগে তিনি রেসপন্স করেন। তাই তো একজন শিশু তার কাছে চিঠি লিখতে পারে, জবাবও পায়। একজন প্রতিবন্ধী টেলিফোনে কথা বলতে পারে। একজন ভিক্ষুক জমানো টাকা নিয়ে তার কাছে হাজির হতে চায়। গৃহহীন অসহায় মানুষকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরে স্বস্তি পান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের রাজনীতি করে বলেই এমনটি সম্ভব। অন্যদিকে বিএনপি জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারা তো দূরের কথা, নিজ দলের নেতাকর্মীদের মনের ভাষাই বুঝতে পারছে না।

বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, বিচার বিভাগ নিয়োগ কথা বলেছেন। কিন্তু বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও চাপমুক্ত হয়ে কাজ করছে। সম্প্রতি নানা ঘটনায় এ দেশের জনগণ দেখেছে, আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রায় এসেছে এবং শাস্তি ভোগ করছে। সরকার হস্তক্ষেপ করলে তো এমন হওয়ার কথা নয়। এ থেকে প্রমাণ হয়— বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই কাজ করছে। বিএনপি তার দলের পক্ষে রায় এলে বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানায়, আর বিপক্ষে গেলে বলে সরকার হস্তক্ষেপ করছে। এমন দ্বিচারিতা বিএনপির সবসময়ের রাজনৈতিক সঙ্গী।

বিজ্ঞাপন

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকার নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, বিরোধী দলেরও শেখার অনেক কিছু আছে। বিএনপি মহাসচিবকে বলতে চাই, দেশের নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আওতায় থেকে কমিশন কাজ করছে। তারা নিজস্ব বিধিবিধান অনুসরণ করবে। অন্য দেশে কী হলো, সেটি অনুসরণ করার কিছু নয়। দেশের অবস্থা এমন হয়েছে যে নির্বাচনে বিএনপির জয়লাভের নিশ্চয়তা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

তিনি বলেন, বিএনপি যেকোনো নির্বাচনে পরাজিত হলেই দায় চাপায় সরকার, নির্বাচন কমিশনার আর নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর। আর জয়ী হলে বলে সরকার হস্তক্ষেপ না করলে আরও বেশি ভোটে জিততে পারত। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে তাদের যে দলগত ভূমিকা জনগণ প্রত্যাশা করে, তা থেকে বিএনপি অনেক দূরে অবস্থান করছে। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, যেখানে বিএনপি প্রস্তাবিত একজন সদস্যও রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি’র সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গণমাধ্যম আর মতপ্রকাশের কোন স্বাধীনতার কথা তারা (বিএনপি) বলছেন? খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহাকে কারা হত্যা করেছিল? হুমায়ুন কবির বালুর হত্যাকাণ্ডের কথা ভুলে গেছেন? শামসুর রহমান, দীপংকর চক্রবর্তীসহ অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার হয়নি বরং বিচারের নামে হত্যাকারীদের রক্ষা করা হয়েছে। বিএনপি’র মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা ভুতের মুখে রাম রাম ধ্বনির মতোই!

তিনি আরও বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি— ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে দেশব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা লুটপাট আর আগুন দেওয়াসহ হাজার হাজার পরিবার ঘর ছাড়া করেছিল চালিয়েছিল। নারী নির্যাতনের অভিযোগে তারা যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, তার একাত্তরে হানাদার বাহিনীর নির্যাতনকেও হার মানিয়ে ছিল।

ওবায়দুল কাদের বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অবস্থান অত্যন্ত কঠোর এবং স্পষ্ট। আপনারা দেখেছেন, স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন খাতে অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এর আগে ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছে সরকার। এসব অনিয়ম কেউ সরকারকে দেখিয়ে দেয়নি, সরকার নিজস্ব মেকানিজমে উদ্ঘাটন করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযান শুরু করেছে। সম্প্রতি ধর্ষণসহ নারীর প্রতি অবমাননাসহ যেকোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ও সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। কঠোর শাস্তির বিধানসহ আইন সংশোধন করা হয়েছে।

‘আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই— সরকারের কাছে অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় নেই। অন্যদিকে অপরাধী হিসেবে সরকার দলীয় পরিচয় কারও আত্মরক্ষার ঢাল হতেও পারেনি,’— বলে ওবায়দুল কাদের।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, এ দেশের রাজনীতিতে দু’টি ধারা প্রবাহমান— একদিকে একাত্তরের অবিনাশী চেতনা, অন্যদিকে সাতচল্লিশের চেতনা। একদিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িকতায় ভর করে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা। একদিকে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম তৈরির মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যয়, অন্যদিকে মিথ্যাচার-নেতিবাচকতা আর পশ্চাৎপদতার সংস্কৃতি।

সরকারের মেগা প্রকল্প পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি ও বাস্তবায়নের কথাও তুলে ধরেন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন