বিজ্ঞাপন

টক অব দ্য টাউন: করোনা ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

January 4, 2021 | 8:54 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অ্যস্ট্রেজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন ভারতে উৎপাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। দেশের ওষুধ খাতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসউটিক্যালসের মাধ্যমে সেই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আনতে এরই মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করেছে সরকার। তবে ভারত সরকার এই ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে— আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে দিনভর বিষয়টি ছিল আলোচনায়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৩ জানুয়ারি) ভারত সরকার সিরাম উৎপাদিত ওই ভ্যাকসিন প্রয়োগে জরুরি অনুমোদন দেয়। পরদিন আজ সোমবার (৪ জানুয়ারি) বার্তা সংস্থা এপি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালা জানান, অনুমোদনের সঙ্গে ভারত সরকার সিরামকে শর্তও দিয়েছে। ওই শর্ত অনুযায়ী, ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ভ্যাকসিন রফতানি করা যাবে না। কেবল রফতানি নয়, ভারতের বাজারে বেসরকারিভাবে এই ভ্যাকসিন বিপণনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

ভারত থেকে ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলে সিরাম ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে কিভাবে পাবে— এমন প্রশ্ন থেকে উদ্বেগ ছড়িয়েছে দিনভর। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশ্বস্ত করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না। অন্যদিকে, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ভ্যাকসিন রফতানি নিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না।

বার্তা সংস্থা এপি’র খবরে বলা হয়, উৎপাদনের পর কয়েকমাস করোনার ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি ভারত সরকার দেবে না। এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হচ্ছে যখন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য করোনা ভ্যাকসিনের একশ কোটি ডোজ উৎপাদন করছে।

সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালা এপি‘কে বলেন, তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত সরকারকে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন রফতানিতে প্রতিষ্ঠানটির অনুমতি নেই। তাই সিরাম ইনস্টিটিউট যেন ভ্যাকসিন রফতানি করতে পারে, সেজন্য ভারত সরকারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হতে কয়েকমাস লাগতে পারে।

বিজ্ঞাপন

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে দরকষাকষি করে নিজেদের স্বার্থে কিছু সুবিধা আদায় করতে চায় ভারত। এজন্য উৎপাদিত ভ্যাকসিন রফতানিতে দেশটি নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা উৎপাদনের পর কয়েকমাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অন্যদিকে, সিরাম কর্তৃপক্ষও বলছে, ভ্যাকসিন রফতানির অনুমোদন পেতে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকমাস সময় লাগতে পারে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো আরও বলছে, ভারতের বরাতে আমরা বলছি যে ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে নয়াদিল্লি ঢাকাকে আশ্বস্ত করেছে। নয়াদিল্লি ঢাকাকে এ বিষয়ে এখনো লিখিত কিছু জানায়নি। স্পর্শকাতর এমন বিষয়ে মৌখিক আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখা যায় না। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে শেষ পর্য়ন্ত ভারত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন রফতানিতে বাধা দেবে না। তবে এর জন্য অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো’র চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভারত থেকে ভ্যাকসিন আমদানির জন্য সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যে চুক্তি করেছি, সে হিসাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

একই কথা এদিন বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, সিরাম-বেক্সিমকো ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সই হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাবে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের চুক্তি করেছে। পাশাপাশি ভারত বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতের হাইকমিশনারও ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে সরকার সময়মতোই ভ্যাকসিন পাবে।’

নয়াদিল্লি ঢাকা’কে ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে— এমন তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে বাংলাদেশ যথাসময়ে ভ্যাকসিন পাবে। তাই এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।’

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন