বিজ্ঞাপন

‘অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নারীরা প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার শিকার’

March 8, 2021 | 10:30 am

রুবানা হক

জাতিসংঘ এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য করেছে, ‘করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব’। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশ সরকারও এই থিমে পালন করছে এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সম্প্রতি, আইএলও এর এক সমীক্ষাতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুরুষদের তুলনায় নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। অনেক নারী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেকের মজুরি কমে গেছে। ফলে তাদের সম্মান কমে গেছে, অন্যের উপর তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে করোনার এই দুঃসময়ে উল্লেখিত প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন অত্যন্ত সময়োচিত ও যৌক্তিক। আমি বিশ্বাস করি, নারী এবং মেয়েদের সমতা অর্জনের বিষয়টি শুধু ন্যয্যতা এবং মানবাধিকারের মৌলিক বিষয় নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রের অগ্রগতিও এর উপর নিভর্রশীল।

বিজ্ঞাপন

মহান স্বাধীনতার মাসে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। মেয়েদের শিক্ষাকে অবৈতনিক করার কাজটি তিনিই শুরু করেছিলেন। ৭২ সালের সংবিধানে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন তিনিই করে দিয়েছিলেন। তারই যোগ্য উত্তরসুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার প্রথম মেয়াদে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর উচ্চ আদালতে প্রথমবারের মতো নারী জজ নিয়োগ দেন, বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে একাধিক নারীকে সচিব পদে পদোন্নতি দেন। এমনকি মেয়েদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষায় ৬০ ভাগ মেয়েদের জন্য বরাদ্দ করেন। আজ বাংলাদেশের মেয়েরা ব্যবসা-বানিজ্য, প্রশাসনের সর্বত্র, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড, আন্তর্জাতিক শান্তি মিশন, ক্রিড়াক্ষেত্রে সর্বত্রই দক্ষতার সাথে বিচরন করছে। এমনকি যে পোশাক শিল্প জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করছে, সেই শিল্পের সিংহভাগ কর্মীরাই হলেন নারী শ্রমিক। তবে, উদ্বেগের বিষয় হলো, এদেশে নারীরা এখনও ঘরে-বাইরে, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীরা পদে পদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

যদিও সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত এবং যৌথভাবে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগে নারীদের উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নে ব্যাপক অগ্রগতি অজির্ত হয়েছে- বাস্তাবতা হলো, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এখনও সমতা নিশ্চিত হয়নি। বিশ্বব্যাংকের ‘ওমেন, বিজনেস অ্যান্ড দ্য ল’ অনুযায়ী ব্যবসা-বানিজ্য ও কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় অর্ধেক আইনি সুরক্ষা পাচ্ছেন এদেশের নারীরা। বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট (বিল্ড) ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) এর পক্ষ থেকেও নারী পুরুষ ও নারীর সুনির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা খুঁজে বের করার জন্য একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, আমদানি ও রফতানি সংক্রান্ত সনদ সংগ্রহ ও নবায়নে পুরুষ উদ্যোক্তাদের তুলনায় নারী উদ্যোক্তাদের বেশি অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। উন্নত দেশের ২৫ ভাগ শিল্প ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্নধার হলেন নারী। অথচ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ২০১৬ সালে পরিচালিত এক গবেষনাপত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে এই হার মাত্র ৭.২ শতাংশ।

অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় নারীরা প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হতে গেলে তাদেরকে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবেলা করতে হয়, সেগুলো হলো পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থনের অভাব; অর্থ্যায়নের সমস্যা; হয়রানির আশংকা এবং নারীদের সামর্থ্য বিষয়ে সমাজের অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি।

বিজ্ঞাপন

আবার ব্যবসা শুরু করতে ঋণের প্রয়োজন। আর ঋণ পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হন নারী উদ্যোক্তারা। জামানত, গ্যারান্টার এবং স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্র-এর শর্তজালে ফেলে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক শাখায় নারী এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা ডেস্ক থাকার কথা থাকলেও তা নেই। এসএমই ঋণের ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিতরনের নির্দেশ থাকলেও এর অর্ধেকও নারীরা পাচ্ছেন না। ফলে, বিশ্বের অন্যান্য দশের মতো বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তারা উঠে আসতে পারছেন না।

সারাবাংলা/আরএফ

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন