বিজ্ঞাপন

বাড়ির ছাদে বাসন্তী কৃষি

March 12, 2021 | 10:00 am

আহসান রনি

শীতের পর ফাল্গুনের আবাহনেই আড়মোড়া ভেঙে সজীব হতে শুরু করে গাছেরা। কবি ফররুখ আহমদ তাইতো এই ঋতুকে সম্বোধন করে লিখেছিলেন,

বিজ্ঞাপন

লাল নয় কালো নয় সবুজ ছাতা,

জেগে ওঠে একরাশ সবুজ পাতা।

হাই তুলে জাগে সব ফুলের কুঁড়ি,

বিজ্ঞাপন

প্রজাপতি ওড়ে যেন রঙিন ঘুড়ি।

এমনই ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এখানে এক একটি ঋতু যেমন ভিন্ন বৈচিত্র নিয়ে আসে, তেমনি গাছগুলোতেও দেখা যায় ফুল, ফল আর সবজির বিচিত্রতা। শীতকাল পেরিয়ে আমাদের মাঝে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত, তাই নগরীর ছাদগুলোতেও চলছে বাসন্তি কৃষির আয়োজন।

এই ফাল্গুন চৈত্রে ছাদে যেসব সবজি চাষ করা যায় তারমধ্যে রয়েছে পুঁইশাক, ডাটাশাক, মেথি, গিমা কলমি, শসা, করলা, লাউ, ধুন্দল, বরবটি ইত্যাদি। তবে এসব সবজি চাষের আগে অবশ্যই সবজির উপযোগী মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রথমেই বিশ্বস্থ নার্সারি থেকে বেলে দোআঁশ মাটি ও শুকনো গোবর সংগ্রহ করে নেয়া উত্তম। শাকসবজির শিকড় তুলনামূলক পাতলা ও নরম হয়। তাই মাটি সংগ্রহ করার পর তা ভালোভাবে চেলে ঝুরঝুরে করে নিতে পারলে শাকশবজির আশানরুপ ফলন পাওয়া যায়। গরুর গোবর সংগ্রহের ক্ষেত্রে ঘাসের গোবর অর্থাৎ যে সকল ফার্মের গরু ঘাস খায় এমন গোবর বাছাই করে নেয়া উত্তম। এমন গোবরে প্রচুর ঘাসের আঁশ দেখতে পাওয়া যায়। গোবর কোন কারনে ভেজা থাকলে তা ছায়ায় ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর তা মাটির সাথে এক তৃতীয়াংশ হারে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। কয়েকদিন বিরতি দিয়ে শাক সবজির বীজ বপন বা চারা রোপণ করা করতে পারেন। অধিকাংশ শাক ও সবজি অগভীরমূলীয়। তাই কম মাটিতেই ভালো ফলন দিতে পারে।

এক্ষেত্রে ছাদে আট ইঞ্চি থেকে এক ফুট গভীরতার টব অথবা অগভীর ট্রে বা স্থায়ী ও অস্থায়ী বেড় বানিয়ে এই ধরণের শাকসবজি চাষ করা যেতে পারে। শসা, করলা, লাউ, বরবটিসহ লতানো সবজির ক্ষেত্রে ছাদের কর্নার ধরে বেড় স্থাপন করা উত্তম। যাতে পরে সহজে মাচা করে দেয়া যায় এবং পর্যাপ্ত সুর্যের আলো পায়। এসকল সবজি গাছ আকারে বড় হয় তাই এর বেড়গুলোর আকার ও গভীরতা তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

সবজিতে কোন রাসায়নিক সার না দিয়ে গোবর সার দেয়া সবচেয়ে ভালো। এতে সন্তোষজনক বৃদ্ধি না হলে এই সারটি বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। আবার কেঁচো কম্পোস্ট বা জৈব কম্পোস্ট সার রিং করে দিলে ফলন অবশ্যই ভালো পাওয়া যাবে।

শাকসবজির গাছে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময়মতো পানি না দিলে গাছ বেড়ে ওঠবে না। পানির অভাব হলে গাছ ঢলে পড়তে পারে। আবার বেশি পানি দিলে গোড়া পঁচে গিয়ে গাছ মরে যেতে পারে। যেহেতু বসন্তে দু’একবার বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে, তাই এসময় শাকসবজিতে পানি দিতে হবে মাটির অবস্থা আর গাছের চাহিদা অনুযায়ী। শাক-সবজি যেহেতু অগভীর মাটিতে চাষ করা হয়, তাই গাছের গোড়ায় এমনভাবে পানি সেচ দিতে হবে যাতে মাটির উপরিভাগে দীর্ঘসময় পানি জমে থাকতে না পারে।

বিজ্ঞাপন

ছাদবাগানে যেহেতু কম জায়গায় একসঙ্গে অনেক ধরণের ফল ও শাক সবজির চাষ করা হয়, তাই সেখানে অনেক ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। একেক সবজিতে একেক পোকা আক্রমণ করে আবার একই রকম পোকা ভিন্ন ভিন্ন সবজিতে আক্রমণ করতে পারে। যেমন, জাব পোকা, জ্যাসিড পোকা, থ্রিপস পোকা, মাকড়, লেদা পোকা ইত্যাদি। এসব নিয়ন্ত্রণে কৌশলী হতে হবে।

এসব শত্রু পোকা নিয়ন্ত্রণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে তা পরিবেশ ও মানুব স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই এসব পোকা দমনে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম (IPM) পদ্ধতির ওপর জোর দিতে পারেন। যেমন, জ্যাসিড পোকা দমনে ১ কেজি পরিমান তামাক পাতা ১৫ লিটার পানিতে একরাত ভিজিয়ে রেখে দিন। পরে সামান্য সাবান যোগ করে দ্রবণটি গাছে স্প্রে করে দিতে পারেন।  আবার থ্রিপস পোকা দমনে রসুনকোয়া ১০০ গ্রাম বেটে আধালিটার পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরসঙ্গে ১০ গ্রাম গুঁড়া সাবান মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে দশ লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।   ইদানিং বাজারে কিছু বায়োপেস্টিসাইডও পাওয়া যাচ্ছে যা ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে।

দৈহিক ও মানসিক বিকাশে সুষম পুষ্টির বিকল্প নেই। এর এ পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস শাক-সবজি ও ফলমূল। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২৫০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া দরকার। একটু পরিকল্পনা করে বাড়ির ছাদে বিভিন্ন পাত্রে সবজি চাষ করতে পারলে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব।

এই সময়ে ছাদের ফলগাছের ফুলগুলো ফল হতে শুরু করে। তবে ফল গাছেও এই সময়ে অনেক রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। সেজন্য বাগানিকে অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন, আম গাছে প্রতিদিনই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হবে। এতে করে ফলে গুটিঝরা কমে আসবে। এছাড়াও আম গাছে মুকুল বিকৃতি রোগ, অ্যানথ্রাকনোজ, পাউডারিমিলডিউসহ নানা রোগ হতে পারে। এসব রোগের প্রতিকার হিসেবে আক্রান্ত মুকুল অপসারন করে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ন্যাপথালিন ২.৫ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলেও এসব রোগ থেকে গাছের মুক্তি মেলে। আবার গাছ খুব বেশি রোগে আক্রান্ত হলে সাইপার মেথ্রিন/ম্যানকোজেব গ্রুপের ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে।

পেয়ারা ও ডালিম গাছে ফল শুকিয়ে যাওয়া রোগ, মিলিবাগ বা ছাতরা পোকার আক্রমণ হলে ফল, পাতা ও ডগা ছাটাই করে এসব পোকা ধ্বংস করা যেতে পারে। লেবু গাছে জাব পোকার আক্রমণ হলে প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো ছাই পোকার গায়ের ওপর ছিটিয়ে দিলে কমে যায়।

বৃষ্টির কারণে টবে বা ড্রামে মাটি কমে গেলে তা আবার ভরাট করে দিতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে। কারণ বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি টব বা ড্রামের তলায় গিয়ে শিকড় পঁচিয়ে ফেলতে পারে। এভাবে ছাদ নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে যা থেকে ছত্রাক আক্রমনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। জমে থাকা পানিতে মশাও বাসা বাঁধতে পারে। ফলে এসময় গাছের গোড়ায় এমনভাবে পানি দিতে হবে যাতে আধাধন্টার মধ্যেই মাটির উপরিভাগের সব পানি শুষে নিতে পারে। পরিকল্পিত ও পরিচ্ছন্ন একটি ছাদবাগান গড়ে তুলতে পারলে, এই ফাগুনে বাহারি প্রজাপতি আর পাখিদের আনাগোনায়  যে কারো বাসন্তী মনে দোলা লাগাবে,  এমনটি ভাবাই যায়।

সারাবাংলা/এসএসএস

Tags: , , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন