বিজ্ঞাপন

মোবাইল কেড়ে নিতে কলেজ ছাত্রকে ১৬ ছুরিকাঘাত, গ্রেফতার ৭

March 21, 2021 | 10:03 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে পাঁচ ছিনতাইকারীসহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। নগরীতে এক কলেজ ছাত্রের শরীরে ১৬টি ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে জুতার শোরুমে চাকরি করে টাকা জমিয়ে কেনা শখের মোবাইল রক্ষা করতে গিয়ে এখন প্রাণ যেতে বসেছে ওই ছাত্রের।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২১ মার্চ) পর্যন্ত নগরীর বাটালি হিল, মতিঝর্ণা এবং দেওয়ানহাট রেললাইন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ।

গ্রেফতার সাতজন হলেন- মো. জাহিদ হোসেন (১৯), মো. সুমন বিল্লা (২০), মো. অন্তর (২০), আশরাফুল (১৯), মো. রাহাত (২২), মো. শাহীন (৫৭) ও মো. মানিক (৩২)। শাহীন ও মানিক ছাড়া অন্যরা সরাসরি ছিনতাই কাজে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

ছুরিকাঘাতের শিকার সাফায়েত হোসেন সিফাত (১৮) নগরীর পাহাড়তলী কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাসা নগরীর বাটালি হিল সংলগ্ন রেলওয়ে কলোনিতে। গত ১৮ মার্চ রাতে লালখান বাজার- টাইগার পাস সড়কের বাটালি হিল সংলগ্ন ফুটপাতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন সিফাত। এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।

বিজ্ঞাপন

ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে জানান, সিফাতের বাবা অসুস্থ। এক বোন টিউশনি করে সংসারের খরচ চালান। আরেক ভাই পড়ালেখা করে। করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে শুধুমাত্র মোবাইল কেনার জন্য নগরীর লালখান বাজারে বাটার শোরুমে মাসিক সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতনে চাকরি নেন। দুই মাসের বেতন এবং সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে ১৭ হাজার টাকায় একটি মোবাইল কেনেন।

‘গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন সিফাত। মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটছিলেন। বাটালি হিল সংলগ্ন ফুটপাতে তার পথরোধ করে জাহিদ ও বিল্লা। মোবাইল টান দিলে সেটি হাত থেকে পড়ে যায়। জাহিদ সেটা তুলে নিতে গেলে সিফাত তাকে ঝাপটে ধরে। তখন জাহিদ তাকে ছোরা দিয়ে আঘাত করে। এরপরও জাহিদকে ছাড়েনি সে। তখন জাহিদ মোবাইল ও ছোরা ছুঁড়ে দেয় বিল্লাকে। বিল্লা সেগুলো নিলে সিফাত জাহিদকে ছেড়ে দিয়ে তাকে ঝাপটে ধরে। তখন বিল্লা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। সিফাত পড়ে গেলে দু’জন মোবাইল ও ছোরা নিয়ে চলে যায়।’

গ্রেফতার সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রউফ জানান, জাহিদ ও বিল্লা সরাসরি ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই করে। অন্তর, আশরাফুল, রাহাত ও হৃদয়- এ চারজন ঘটনাস্থলের আশপাশে অবস্থান নিয়েছিল, যাদের মধ্যে হৃদয় পলাতক। শাহীন চুরি-ছিনতাই করা মোবাইলের ক্রেতা। আর মানিক চুরি-ছিনতাই করা মোবাইলের প্যাটার্ন লক খোলায় পারদর্শী।

বিজ্ঞাপন

ছিনতাইয়ের পর জাহিদ, বিল্লাসহ ছয়জন দেওয়ানহাট রেলবিটে একত্রিত হন। অন্তর প্রস্তাবমতে মোবাইলটি শাহীনের কাছে নিয়ে যায় তারা এবং সাড়ে ৮ হাজার টাকা দাম ঠিক হয়। নগদ নেয় ২ হাজার টাকা। পরদিন সকালে বাকি টাকা নেওয়ার কথা ছিল। শাহীন ওই মোবাইল নিয়ে লক খোলার জন্য যায় মানিকের কাছে। এর মধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইলের অবস্থান শনাক্ত করে মানিকের দেওয়ানহাটের বাসা থেকে মোবাইলসহ তাকে ও শাহীনকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান এডিসি রউফ।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আলমগীর মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ছোরাটি দেওয়ানহাটে সিএসডি গোডাউনের পাশে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল তারা। গ্রেফতারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছোরাটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।’

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে এডিসি রউফ জানিয়েছেন, সিফাতের বুকে-পেটেসহ শরীরের অন্তঃত ১৬ স্থানে ছুরিকাঘাতের জখম আছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন