বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণপণ্য ঘোষণার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

April 20, 2021 | 5:37 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রত্যেকের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণপণ্য হিসেবে ঘোষণারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গতভাবে ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেকের ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্তৃত্বে বিশ্বাস করে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কার্যকর করতে সব দেশের একত্রে কাজ করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক গণপণ্য হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশগুলোকে সার্বজনীন ভ্যাকসিনের কভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে অন্যদেরও ভ্যাকসিন তৈরি করতে সহায়তা করা উচিত।

এশিয়ার জন্য বোয়াও ফোরামের সম্মেলনের প্ল্যানারি পর্বে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ধারণ করা ভাষণটি প্রচার করা হয়। চার দিনের বার্ষিক বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এ ওয়ার্ল্ড ইন চেঞ্জ: জয়েন হ্যান্ডস টু স্ট্রেন্থেন গ্লোবাল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড অ্যাডভান্স বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) কোঅপারেশন।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্যাভি (বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোট) ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। এসব সংস্থা নিশ্চয় সদস্য রাষ্টগুলোর অধিকারকে সমর্থন করবে এবং ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে এসব দেশের ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের ইতিহাসের চূড়ান্ত এক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই মহামারির আর্থসামাজিক প্রভাব ব্যাপক, যা দিন দিন আরও বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চলমান এই সংকটে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তাও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর তহবিলগুলোতে আরও বেশি প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।

জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য আনার মাধ্যমে বাংলাদেশ কোভিড মহামারির বিরূপ প্রভাব প্রশমনের চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত সামাজিক সুরক্ষা এবং অর্থনীতিকে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের জিডিপি’র প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, বা ১৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি।

মহামারির কারণে কেউ যেন পেছনে পড়ে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থাকে ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সার্ক, বিমসটেক, এসএএসইসি, বিবিআইএন ও বিসিআইএমের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক যোগাযোগের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও এর বাইরেও বহু-মডেল সংযোগের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, বিআরআই এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই মহাদেশের বিশাল জনসংখ্যা, বিস্তৃত বাজার ও প্রযুক্তিগত প্রান্তের সুবিধা রয়েছে। কাজেই আমরা হাতে হাত মেলাতে পারলে উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব, যা আমাদের প্রতিশ্রুত এসডিজি অর্জনে সহায়ক হবে। একে অন্যের দিকে হাত বাড়িয়ে আমাদের ফোরআইআরের প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা বাড়ানো দরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, হাইটেক পার্ক, ব্রডব্যান্ড ও স্যাটেলাইট সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য কাঠামো তৈরি করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আমাদের তরুণদের কেবল অনুকরণের জন্য নয়, উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত করে চলেছি। অতএব একসঙ্গে আমাদের একে অন্যের সুবিধাগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি সাইবার অপরাধসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে হবে। সময়োচিত পদক্ষেপ এশীয় শতাব্দীর সম্ভাবনাগুলো উপলব্ধি করতে আমাদের সহায়তা করতে পারে।

জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সাধ্যমতো সবকিছু করছে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্থান থেকে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দূর করতে বিভিন্ন অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। সংসদে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় ‘প্ল্যানেটরি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশব্যাপী তিন কোটি গাছ রোপণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা দেশজুড়ে তিন কোটি গাছ রোপণ করছি। আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ও গ্রহণ করেছি, যা একটি উন্নত ও সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য সহায়তা করবে।

বিজ্ঞাপন

ভাষণে তিনটি বিষয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমত, করোনা মহামারি বৈশ্বিক যে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তা মোকাবিলা করতে এবং করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী গণপণ্য হিসেবে ঘোষণা করে সবার কাছে সহজলভ্য করতে সবার মধ্যে দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে; দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগাতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে; এবং পৃথিবীর কোনো একক দেশ নিজেরা টিকে থাকতে পারে না, ফলে দেশগুলোকে একে অন্যের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে যৌথ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, একত্রে চিন্তা করি। আমরা একসঙ্গে কাজ করব, একসঙ্গে বেড়ে উঠব।’

সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও সরকারপ্রধান, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি, আইএমএফের সভাপতি ও বোয়া ফোরামের মহাসচিবকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন