বিজ্ঞাপন

বেসিস নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ

March 27, 2018 | 10:53 am

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস- বেসিসের নির্বাচনে আর চার দিন বাকি। দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে এ নিয়ে ইতিবাচক নেতিবাচক আলাপচারিতা, কথা চালাচালি, তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা। স্যোশাল মিডিয়া এই কথা চালাচালির ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কোনও কোনও বিষয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমেও খবর হয়ে আসছে।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশের প্রধানতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সংগঠনের নির্বাচন নিয়ে এ বছর অপেক্ষাকৃত বেশি কথা-বার্তা হচ্ছে, সে কথাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এবারের নির্বাচনের প্রধানতম চমক হয়েই এসেছে তিনটি প্যানেল দাঁড়িয়ে যাওয়া। যা অতীতে কখনোই হয়নি। এর প্রতিটি প্যানেলেই নয় জন করে প্রার্থী রয়েছেন। আর বেসিসের যে দ্বি-বার্ষিক কমিটি হয় তা মোট ৯ সদস্য বিশিষ্ট। এরা প্রত্যেকেই একেকজন পরিচালক হিসাবে নির্বাচিত হবেন। তারা মিলে একজন বেসিস সভাপতি নির্বাচন করবেন।

বিজ্ঞাপন

পূর্ণ প্যানেল জয়ী হলে যে কোনও একটি জোট কিংবা দল বেসিসের নেতৃত্ব দেবেন পরবর্তী দুটি বছর। সে নিয়ে চেষ্টারও শেষ নেই। যেখানেই যারা ভোট চাইছেন প্যানেলের সবার জন্য কথা বলছেন।

আরেকটি চমক হচ্ছে- প্যানেলের বাইরেও রয়েছেন একাধিক হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী। তারাও এই ভোটযুদ্ধে জয়ী হতেই মাঠে নেমেছেন। ফলে নির্বাচন যে জমজমাট হবে তা বলতে আর কোনও বাধা নেই।

তবে এবারের নির্বাচনে আরও একটি চমক হয়ে এসেছে একটি ক্যাম্পেইন। যে ঘটনাও বেসিসের ইতিহাসে নতুন।  ভোট ফর রাইট ক্যান্ডিডেট নামের এই ক্যাম্পেইন আলাদা করে কোনও প্রার্থীর কথা বলছে না। কোনও নামও তারা দিচ্ছে না। তারা স্রেফ জোর দিচ্ছে সঠিক প্রার্থীকে বেছে নেওয়ার ওপর।

বিজ্ঞাপন

তাহলে কী প্যানেলগুলোতে সঠিক কিংবা যোগ্য প্রার্থী নেই? সে প্রশ্ন সামনে এসেছে।

তার একটি ব্যাখ্যা বেসিস সদস্যদের মধ্য থেকেই এসেছে। তারা বলছেন- হতে পারে প্যানেল ধরে নির্বাচিত হয়ে যাওয়া এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তাদের পছন্দ নয়। তারা তেমন কোনও কিছু ঘটে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এমন একটি ক্যাম্পেইন সামনে এনেছেন।

কেউ কেউ এর পেছনে বেসিসের অতীত নেতৃত্বের কারো কারো হাত থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন। তবে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনও বক্তব্য মিলছে না। কেউ কেউ তাকে স্যোশাল মিডিয়া ‌’বাখোয়াজ’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

তবে এই ক্যাম্পেইন কেবল পেজ খুলেই ক্ষান্ত হয়নি। এ নিয়ে চলছে জোর প্রচার-প্রচারণা। এ ক্ষেত্রেও তাদের ক্যাম্পেইনের মূল ক্যানভাস স্যোশাল মিডিয়া। সবশেষ তথ্যে দেখা গেছে ফেসবুকে খোলা এই ক্যাম্পেইন এরই মধ্যে অন্তত ২৮৭ জনকে সদস্য হিসাবে পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সে অর্থে, বলা চলে কোনও একক প্যানেল ভিত্তিক জয়ে আস্থা নেই অন্তত ২৮৭ জন বেসিস সদস্যের।

ভোট হবে আগামী ৩১ মার্চ। যাতে ২০১৮-২০ সেশনের জন্য সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। বেসিসে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ৪৭৪ জন। আর অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ২১৪ জন। আর সব মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ৬৮৮ জন।

২৮৭ জন ভোটার কিংবা সদস্য যখন সঠিক প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখাচ্ছেন তখন এটা বলাই যায় বেসিস’র এবারের নির্বাচনে স্বাভাবিক কোনও ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে না।

এদিকে, প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিয়ে। সে প্রশ্ন তুলছেন খোদ প্রার্থীরাই। তারা এরই মধ্যে দেখছেন, ভোট নিয়ে কিংবা ভোট সামনে নিয়ে এমন সব কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে যা সমতলে সমানতালে প্রার্থীদের ভোট শিকারের খেলাটি খেলার সুযোগ রাখছে না।

সবচেয়ে বেশি আঙ্গুল উঠছে প্যানেলগুলোর নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে। এই প্রার্থীরা বেসিসের বাইরে তাদের নিজেদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য যেসব প্রতিষ্ঠানে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে তার সুবিধা ব্যবহার করছেন। বেসিস আদতে একটি সংগঠন। এখানে যোগ্যতার যাচাই যতটা না প্রার্থীর অর্থ কিংবা প্রভাবের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার সাংগঠনিক সক্ষমতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং আইটি খাতকে সুদুরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ভিশন ও মিশন। যা অপেক্ষাকৃত কম অর্থ-প্রভাবের প্রার্থীরও থাকতে পারে। সে কারণেই লেভেল প্লেইং ফিল্ডের প্রত্যাশাটি বড় করে সামনে এসেছে নির্বাচন সংগঠনের যখন মাত্র চার দিন বাকি তখন।

একজন প্রার্থী, তার হাতে একটি ব্যাংক রয়েছে, সেখান থেকে নির্বাচনের ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে এমন একটি সুযোগ বেসিস সদস্যদের দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন। অবশ্য সে প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদই নাকচ করে দিয়েছে। আরেকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিষ্ঠানের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেখানে বেসিস সদস্যদের ডেকে নির্বাচন টপিক প্রোমোট করার প্রয়াস হয়েছে।

এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মত রয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন- অতীতেও এমনটা হতে দেখা গেছে।

অতীতে দেখা গেলেই যে তা সঠিক কিছু হবে এমনটা মনে করছেন না অনেকেই।

আবার অতীতে এমন হয়নি, বরং অতীতে বেসিস যোগ্য নেতৃত্বে ছিলো সে কথাও বলছেন কেউ কেউ। স্যোশাল মিডিয়ায় দেখা গেছে একজন বলছেন- আগে সৎ এবং ডেডিকেটেড কর্মীরা বেসিসে নির্বাচিত হয়ে আসতেন। এখন আর সেটা হচ্ছে না। পুরাটাই পাওয়ার প্লে।

তাহলে এ আরেক নতুন শব্দ স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে বেসিস নির্বাচন নিয়ে তা হচ্ছে- ‌’পাওয়ার প্লে’।

উদ্বেগ যে, এই পাওয়ার প্লে বেসিসকে সংগঠন হিসেবে ধীরে ধীরে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।

তবে ভোট ফর রাইট ক্যান্ডিডেট নামের ক্যাম্পেইনটি স্পষ্ট করেছে বেসিসের অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতকে। এই ক্যাম্পেইনে এরই মধ্যে যারা সদস্যদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তাদের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি জগতের গুরুত্বপূর্ণ অনেককেই দেখা যাচ্ছে। ক্যাম্পেইনটির যারা উদ্যোক্তা তারা একটি বিবৃতি যুক্ত করেছেন এর ফেসবুক পাতায়। তাতে বলা হয়েছে-

বছরের পর বছর আমরা দেখে আসছি বেসিস নির্বাচনে প্যানেলের নামে কিছু কিছু অযোগ্য, অদক্ষ প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসেন। নির্বাচিত হওয়ার পর তারা Industry এবং মেম্বারদের উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখেন না অথবা রাখার চেষ্টাও করেন না। আবার কিছু কিছু যোগ্য প্রার্থীও নির্বাচিত হওয়ার পর নিস্ক্রিয় থাকেন। “VOTE FOR RIGHT CANDIDATE” -এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা একটি awareness create করতে চাই।

যোগ্য প্রার্থী কে না চায়। কিন্তু এই বক্তব্যে এটা স্পষ্ট অন্তত এই ২৮৭ জন বেসিস সদস্য মনে করছেন প্যানেলগুলোতে যোগ্য প্রার্থীর অভাব রয়েছে। সে এক সমস্যা। তার পাশাপাশি রয়েছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের অভাববোধ। যা এসেছে খোদ প্রার্থীর তরফ থেকে। আর সর্বোপরি নির্বাচনের আগে ভোটারদের প্রলুব্ধ করার প্রয়াস নিঃসন্দেহে একটি নির্বাচনী আচরণ বিধির লঙ্ঘন, হোক সে যে কোনও নির্বাচন।

আর ওই বক্তব্য ব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যায় বেসিসের অতীত নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন যেমন তোলা হয়েছে। তেমনি বেসিসে বর্তমান সদস্য তথা ভোটারদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ রয়েছে।

এত কিছুর পর কি হতে যাচ্ছে বেসিস নির্বাচনে? সে প্রশ্নের উত্তর মিলবে ৩১ মার্চ। সে পর্যন্ত অপেক্ষাই শ্রেয়।

সারাবাংলা/জেএএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন