বিজ্ঞাপন

রংপুর, নীলফামারী ও পীরগঞ্জ শহর পাবে প্রাকৃতিক গ্যাস

June 4, 2021 | 8:20 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের উত্তর জনপদের তিন স্থানে পাইপলাইনে যাচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। এজন্য ‘রংপুর, নীলফামারী, পীরগঞ্জে শহর ও তদসংলগ্ন এলাকায় গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ১০০ কিলোমিটার গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক এবং তিনটি ডিস্ট্রিক্ট রেগুলেটিং স্টেশন স্থাপন করে শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র খাতে ১০২টি সংযোগের ১৬৫ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হবে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় হতে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর হতে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (জিজিসিএল, পেট্রোবাংলা।

সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলার আওতাধীন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (পিজিসিএল) রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস বিতরণ কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জেলা সফরকালে পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া গেলে রংপুরে তথা দেশের উত্তর জনপদে গ্যাস লাইন সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রংপুর এবং নীলফামারী ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়া সত্ত্বেও এ এলাকার জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাপ্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে বর্তমানে জ্বালানি হিসাবে প্রাকৃতিক গ্রাসের ব্যবহার ১৭৬ এমএমসিএফডি যা মোট প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ৫.৬৬ শতাংশ। মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় গ্যাস ব্যবহারের এই বৈষম্য দূরীকরণ এবং এলাকার শিল্পের উন্নয়নের জন্য রংপুর ও নীলফামারী জেলায় প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য গ্যাস বিতরণ নেটওয়াকৃ স্থাপন করা প্রয়োজন।

বর্তমানে রংপুর, সৈয়দপুর ও উত্তরা ইপিজেডে অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কাঠ, কেরোসিন, ডিজেল, ফার্নেস তেল ইত্যাদি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। রংপুর ও সৈয়দপুর শহরে ছোট বড় অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে। এছাড়া উত্তরা ইপিজেড এলাকায় বর্তমানে ২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সারা দেশের সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় উদ্যোক্তাদের মাঝে রংপুর এবং নীলফামারী জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রস্তাবিত নীলফামারী অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়িত হলে এই এলাকায় গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে।

বর্তমানে রংপুর এবং সৈয়দপুর শহরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত দুইটি গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে যা ডিজেল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া রংপুর এবং সৈয়দপুর শহরে যথাক্রমে ১১৩ মেগাওয়াট এবং ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে প্রকল্প এলাকায় ১০০ কিলোমিটার গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন নেটওয়ার্ক এবং তিনটি ডিআরএস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী ২০ বছরে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে দৈনিক ১৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- পাইপলাইনের রুট সার্ভে, সিপি সিস্টেম ডিজাইন ও সিপি কাজের জন্য সয়েল রেসিসটিভিটি টেস্ট, ৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ এবং ১০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন, ফিটিংস, বল-ভাল্ব, লাইনপাইপ, কোটিং-র‌্যাপিং মালামাল, সি.পি. মালামাল ক্রয়, টেস্টিং-কমিশনিংসহ ১০০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন, সিপি সিস্টেম স্থাপন এবং ইপিসি ভিত্তিতে ৩টি ডিআরএস এবং তিনটি আঞ্চলিক বিপণন কার্যালয় নির্মাণ করা।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শরিফা খান বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের উল্টরাঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপপলাইন নির্মাণ করা সম্ভব হবে। ফলে বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় শিল্পোৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার দূষণমুক্ত প্রাথমিক জ্বালানি এবং এ সংক্রান্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের আওতাধীন জনসংখ্যা ২০১৯ অর্থবছরের ১৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অভীষ্ট সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত আছে। এ হিসেবে এমন উদ্যোগ খুবই ভাল।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক গ্রাহক ও অন্যান্য গ্রাহকদের নিকট গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে এ অঞ্চলে শিল্পায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।’

সারাবাংলা/জেজে/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন