বিজ্ঞাপন

পদ্মাসেতুর কারণে শেষ হচ্ছে না বিদ্যুতের ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প

July 4, 2021 | 11:53 am

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: পদ্মাসেতুর কাজে ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না বিদ্যুতের ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প। এক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই বাড়াতে হচ্ছে প্রকল্পের মেয়াদ। ‘আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালনলাইন নির্মাণ’ প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন সাতটি রিভার ক্রসিং টাওয়ারের নির্মাণ কাজ অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ‘আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালনলাইন’ প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রিভার ক্রসিং টাওয়ারের কাজের অগ্রগতি তুলনামূলক কম। পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষ নির্মাণাধীন টাওয়ারের ফাউন্ডেশনের কাজ সম্পূর্ণরুপে শেষ না হলে মোংলা থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত সঞ্চালনলাইন পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে না।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গে আইএমইডি’র সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবেদনটি কেবল চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমরা নিজেদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পরিবীক্ষণ করিনি। তৃতীয় পক্ষ নিয়োগের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। যাতে নিরপেক্ষভাবেই প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব হয়।’

আইএমইডি’র প্রতিদেনে বলা হয়েছে, পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন সাতটি রিভার ক্রসিং টাওয়ারের অগ্রগতি প্রতিবেদন এবং রিভাইজড কর্মপরিকল্পনা পিজিসিবি বরাবর না পাঠানোর ফলে সেগুলোর কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ হবে তার সম্পূর্ণ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হওয়া যাচ্ছে না। প্রকল্পভুক্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালনলাইন পদ্মা নদী ক্রসিংয়ের জন্য নির্মাণাধীন টাওয়ার ফাউন্ডেশন হস্তান্তর না হওয়ায় প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রম শেষের পথে থাকলেও সার্বিক কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। তাই পদ্মাসেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড় সমন্বয়ের মাধ্যমে টাওয়ার ফাউন্ডেশন হস্তান্তরের সময়সূচি নিশ্চিত হয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন অথবা ব্যয় বৃদ্ধি না করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। একধিক প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত থাকায় তাদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আইএমইডির সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ, জ্বাালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি সঞ্চালনলাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। মূল প্রকল্পটি ১ হাজার ৩৫৬ কোটি ৫৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের এপ্রিলে অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরবর্তীতে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৫০৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং পিজিসিবির নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৩৫ দশমিক ৮২ শতাংশ সরকারি, ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ এডিবি এবং ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ পিজিসিবির নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য মূল কার্যক্রম গুলো হচ্ছে, আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ৭৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ এবং গোপালগঞ্জ-মোংলা ৪০ কেভি ৯৬ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ। এছাড়া পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে ৪০০ কেভি ৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রিভার ক্রসিং লাইন এবং উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং ৩ গুণ ৫২০ এমভিএ ট্রান্সফার্মার, ৪০০/২৩০ কেভি, ত্রি-ফেজ ট্রান্সফার্মার বসানো। প্রকল্পটি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলা, গোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা, খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলা জুড়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চার বছর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত থাকলেও চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। অবশিষ্ট সময়ে প্রায় ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি অর্জন এবং সব নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রকল্পটি শেষ করতে হবে।

প্রতিবেদনে আইএমইডির পক্ষ হতে বলা হয়েছে, প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রতিটি প্যাকেজের একটি রিভাইজড ওয়ার্ক প্ল্যান তৈরি করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তা নিবিড়ভাবে অনুসরণ করবে এবং প্রতিমাসে সেতু কর্তৃপক্ষ নির্মাণ কাজের একটি প্রগ্রেস রিপোর্ট প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রকল্পের শুরুতেই ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল লোকবল পদায়ন করা হয়নি। এক্ষেত্রে যত দ্রুত তারাতরি সম্ভব লোকবল ও অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তা পাওয়া গেলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব হতো। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে টার্ন কি কন্ট্রাক্টরের পরিবর্তে ন্যূনতম বিদেশি বিশেজ্ঞের সহায্যে এবং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি মালামাল সংগ্রহ করে দেশীয় প্রকৌশলী ও টেশনিশিয়ান দ্বারা সম্পন্ন করার বিষয়ে উদ্যোগে নেওয়া যেতে পারে। বাস্তবায়নাধীন ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন হাই ভোল্টেজ লাইন হওয়ায় সবোর্চ্চ সতকর্তার সঙ্গে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য ভবিষ্যতে আরও জনবল প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগও নেওয়া যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সময় মতো বাস্তবায়ন এবং অগ্রগতি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন