বিজ্ঞাপন

সিআরবির শতবর্ষী গাছে নামফলক লাগিয়ে বীর শহিদদের স্মরণ

July 19, 2021 | 12:23 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া অনেক বীর সংগ্রামীর স্মৃতিতে ভাস্বর চট্টগ্রাম শহরের সিআরবি এলাকা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা। সিআরবিতে প্রস্তাবিত স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ হলে শহিদদের স্মৃতি আর ইতিহাসের গৌরবময় এসব স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা চট্টগ্রামের আপামর মানুষের। হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমে পরিবেশবাদী সংগঠন পিপলস ভয়েস কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে সিআরবির সেই স্থানে শতবর্ষী নয়টি গাছে স্থাপন করে নয়জন শহিদের নাম লেখা ব্যানার।

বিজ্ঞাপন

পিপলস ভয়েসের সংগঠক শরীফ চৌহানের মতে, সিআরবিতে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী গাছগুলো এদেশের মুক্তিসংগ্রাম, ইতিহাস-ঐতিহ্যের নীরব সাক্ষী। হাসপাতাল বানানোর জন্য তাদের শরীরে কোপ দেওয়া এদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস মুছে দেওয়ার নামান্তর।

রোববার (১৮ জুলাই) বিকেলে নগরীর সিআরবি এলাকায় পিপলস ভয়েসের এই কর্মসূচিতে যোগ দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান এবং মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী। এ উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘একজন নেতা এখানে এসে বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ নাকি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। তিনি অসত্য বলেছেন। আসলে পানি ঘোলা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, সিআরবিতে নয় গোয়ালপাড়ায় হাসপাতাল হচ্ছে। তার মানে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রব কলোনি ভেঙে হাসপাতাল হচ্ছে। এই হাসপাতাল তো আমরা করতে দিতে পারি না। শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রবকে প্রধানমন্ত্রীর চেনার কথা। তিনি যখন চাকসুর জিএস ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিষয়টি তিনি অবগত থাকার পরও হাসপাতাল করার অনুমতি দেবেন, এটা আমরা মনে করি না। অর্বাচীন আমলারা ভুল বুঝিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে চাচ্ছেন।’

প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য গণমঞ্চ তৈরি করার আহ্বান জানান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো বয়স নেই। এদেশের মাটিতে লাখো মুক্তিযোদ্ধা ঘুমিয়ে আছেন। তাই এ মাটি এত প্রতিবাদী। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। হাসপাতালের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর চেষ্টা যারা করছেন তারা ভুল করছেন। আজকের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রীদের দেশপ্রেমে ঘাটতি আছে বলেই আমলারা তাদের ঘিরে ফেলেছে। রাজনীতিবিদদের উচিত মানুষের কথা শোনা। শহিদের রক্তে রঞ্জিত মাটি নিয়ে যারা ব্যবসা করতে চান এটা বাংলাদেশের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা করলে জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না।’

বিজ্ঞাপন

কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, ‘দেশের শীর্ষজনকে ভুল বুঝিয়ে যারা এই প্রকল্প নিয়েছে, তারা গণশত্রু। ইউনাইটেডের টাকা খেয়ে তারা এ কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে তারা ভুল বোঝাচ্ছে। শেষ কথা, এখানে আমরা কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দেব না।’

 

আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর বলেন, ‘এখানে শহিদের কবর। হাসপাতাল হলে সেগুলো বিলীন হয়ে যাবে। শহিদদের স্মৃতি বিলীন করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। তাদের চক্রান্ত আমরা ব্যর্থ করে দেব। আমরা সংগ্রাম করে দাবি আদায় করব। রেলের জমিতে, শহিদের স্মৃতির জমিতে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দেব না।’

বিজ্ঞাপন

পিপলস ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, ‘এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। এই সিআরবিতে অনেকে শহিদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। রেলের অনেক শ্রমিক-কর্মচারি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। সেই স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহিদের কবর, শহিদের নামে কলোনি, শহিদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই সিআরবিতে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা আমরা চাই না। আমাদের এক কথা, এখানে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল করতে দেবো না।’

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক নেতা মাঈনুদ্দিন দুলাল, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোরশেদুল আলম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক রূপক চৌধুরী, সাংবাদিক আলোকময় তলাপাত্র, ঋত্তিক নয়ন ও উজ্জ্বল ধর, উন্নয়ন কর্মী শ্যামল মজুমদার, শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিন্স ও শেখ বিবি কাউসার, সংগঠক বনবিহারী চক্রবর্তী, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সংগঠক সিঞ্চন ভৌমিক, সংস্কৃতিকর্মী রুবেল দাশ প্রিন্স, যুব মৈত্রীর খোকন মিয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত নবী খোকা, সাংবাদিক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস, আমিন মুন্না প্রমুখ।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন