বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল প্রকল্প বাতিল করে সিআরবি সংরক্ষণের আদেশ চেয়ে মামলা

July 19, 2021 | 5:03 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া বাতিল করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকাকে সংরক্ষণের আদেশ চেয়ে আদালতে দেওয়ানি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে ১৪টি সরকারি সংস্থার নির্বাহী প্রধান ও দু’টি পেশাজীবী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিবাদী করা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে বিবাদীদের প্রতি সমন জারির আদেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সিআরবিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আওতায় হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষেরা। চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ্য আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু নিজেকে আন্দোলনকারী এবং প্রকৃতিপ্রেমী সকল নাগরিকের প্রতিনিধি উল্লেখ করে সোমবার (১৯ জুলাই) প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ হেলাল উদ্দিনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় যাদের বিবাদী করা হয়েছে তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও চট্টগ্রাম ওয়াসার সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও বিস্ফোরক অধিদফতরের উপ-পরিচালক, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ও ভূসম্পদ কর্মকর্তা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার। এছাড়া চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিবাদী করা হয়েছে।

বাদী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাবলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিআরবি এলাকা চট্টগ্রাম শহরের একমাত্র প্রাকৃতিক মুক্তাঙ্গন, যেখানে মানুষ গিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস গ্রহণ করে। ২০০৯ সালে সিডিএ এই এলাকাকে প্রাকৃতিক হেরিটেজ ঘোষণা করে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থানে আছে চাকসুর সাবেক জিএস শহিদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের কবর ও তার নামে গড়ে তোলা রেলওয়ের কলোনি। হাসপাতালের জন্য এসব স্থাপনা ‍গুঁড়িয়ে দিয়ে সিআরবি এলাকাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে। এতে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীরা আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন। তখন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়, যাতে প্রকৃতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের কথা স্পষ্ট হয়। এরপর আন্দোলন অব্যাহত থাকলেও সেই ষড়যন্ত্র বন্ধের কোনো বিজ্ঞপ্তি তারা আর প্রকাশ করেনি। এ অবস্থায় আমি নিজে প্রতিবাদকারী প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী একজন হিসেবে আইনগত প্রতিকার লাভের আশায় হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া বাতিল করে সিআরবিকে সংরক্ষণের আদেশ চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। আদালত মামলা গ্রহণ করে বিবাদীদের প্রতি সমন জারির আদেশ দিয়েছেন’- বলেন লাবলু।

মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিতর্কিত স্থাপনা নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে ভূমি ব্যবহার ও নকশা অনুমোদন করতে হবে। ওয়াসা থেকে পানির সংযোগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিদ্যুতের সংযোগ এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড থেকে গ্যাসের সংযোগ নিতে হবে। পাহাড় ও গাছ কাটার জন্য পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র, বিস্ফোরক অধিদফতর থেকে লাইসেন্স ও ফায়ার সার্ভিস থেকে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।

এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য কোনো ধরনের অনুমোদন না দেওয়ার আদেশ চাওয়া হয়েছে মামলার আরজিতে। এছাড়া বিবাদীরা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় যাতে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে না পারে সে বিষয়েও আদেশ চাওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় সিআরবিতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট বাস্তবায়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি লিমিটেড। ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই প্রকল্পের জন্য। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর।

দুই বছর আগে প্রকল্পটি অনুমোদনের বিষয়টি প্রকাশ পেলে চট্টগ্রামে বিভিন্ন নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠন আন্দোলনে নেমেছিল। সম্প্রতি গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টি উঠে এলে আবারও সোচ্চার হন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং চট্টগ্রামের ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের এই প্রক্রিয়া রুখে দাঁড়ানোর আহআন জানালে রাস্তায় নামে মানুষ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন সিআরবি এলাকায় নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হচ্ছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন