বিজ্ঞাপন

‘এত প্রতিবাদ, সরকারের উচ্চমহলের আওয়াজ নেই কেন’

August 28, 2021 | 9:49 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিআরবি রক্ষায় এত প্রতিবাদের পরও সরকারের উচ্চমহলের কোনো আওয়াজ নেই কেন— এমন প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।

শাহআলম বলেন, ‘সিআরবি নিয়ে গত দুই মাস ধরে এত আন্দোলন হচ্ছে, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করছে, নাগরিকরা করছেন, চট্টগ্রামবাসী প্রতিবাদ করছে। কিন্তু এত প্রতিবাদের পরও সরকারের উচ্চমহলের কোনো আওয়াজ আমরা এখনও পাচ্ছি না। উচ্চমহলের কোনো আওয়াজ নেই কেন ? আমরা প্রশ্ন করতে পারি- এ সরকার কার ? সরকার কি এদেশের ৯৫ ভাগ গরীব-সাধারণ মানুষের নাকি ৫ ভাগ বিত্তবানের ? এত প্রতিবাদের পরও যেহেতু সরকারের উচ্চমহল থেকে কোনো উচ্চবাচ্য নেই, তাহলে কিআমরা ধরে নেব, সরকার তেলে মাথায় তেল দেওয়ার নীতি নিয়েছে। এটা পরিস্কার হচ্ছে যে— সরকার গরীব-সাধারণ মানুষের বদলে মুনাফালোভী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে।’

‘আমরা যে ব্যানার থেকেই দাঁড়াই না কেন, আমরা সিআরবি রক্ষার জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের দাবিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আন্দোলনের ভেতরে কেউ ঢুকে যদি কূটকৌশলে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চায়, চট্টগ্রামবাসী তার পা ভেঙ্গে দেবে। সরকারকে বলব- চট্টগ্রামবাসীর মনের কথা বুঝুন। আগুন নিয়ে খেলবেন না। বহু খেলেছেন। অবিলম্বে চুক্তি বাতিল করুন। সিআরবিকে মুক্ত করুন। হাসপাতাল করেন, সরকারি হাসপাতাল করেন। সিআরবির বাইরে করেন।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে রেলওয়ের জায়গা দখলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে রেলের জায়গায় ইউএসটিসি হয়েছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল—সব রেলের জায়গায় হয়েছে। রেলের জায়গা খুব নরম, সেগুলো খাওয়া সহজ। এই শহরে এখন আর খেলার জায়গা আর নেই। এখানে পাঁচতারকা হোটেল হয়েছে, সেখানে ছেলেরা খেলাধূলা করত। শিশুপার্কের নামে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হয়েছে, সেখানেও ছেলেরা খেলাধূলা করত। সব খাওয়া শেষ।’

চট্টগ্রামে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে শাহআলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালকে আধুনিক করা যায়। বন্দরের টাকা সরকার লোপাট করে নিয়ে যায়। বন্দরে তো টাকা জমা আছে। ঢাকায় বড় বড় হাসপাতাল আছে। স্কয়ার, ইউনাইটেড-এমন প্রাইভেট হাসপাতাল সরকারি উদ্যোগে হবে না কেন ? বন্দর নিজেও তো ২০ তলা আধুনিক হাসপাতাল করতে পারে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল একদিন নিজেই লাশ হয়ে গিয়েছিল। আমরা আন্দোলন করেছিলাম। এখন একটু প্রাণ ফিরে পেয়েছে। জেনারেল হাসপাতালের ছাদে উঠলে একেবারে কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত পুরো চট্টগ্রাম শহর দেখা যায়। সেখানে পাহাড়ের উপরে অনেক জায়গা আছে। সেখানেও তো ২০ তলা হাসপাতাল হতে পারে। এই রেলওয়ে হাসপাতালকেও তো আধুনিকায়ন করা যায়।‘

বিজ্ঞাপন

‘স্পষ্ট করে বলছি- চিকিৎসা নিয়ে ব্যবসা চলবে না। এটা মৌলিক অধিকার। মানুষের জীবন নিয়ে, রক্ত নিয়ে ব্যবসা হবে না। এই ব্যবসা আমরা করতে দেব না। সরকারি সব জায়গা আস্তে আস্তে মুনাফালোভী চক্র খেয়ে ফেলতে চাচ্ছে। সব জায়গায় দখল আর দখল, পাহাড়-বন দখল করছে, সুন্দরবন দখল করছে, তারা সমগ্র বাংলাদেশ খেয়ে ফেলছে। সামরিক-বেসামরিক আমলা, লুটেরা ব্যবসায়ী, লুটেরা রাজনীতিবিদ মিলে বাংলাদেশটাকে দখল করে ফেলেছে। এদের হাত থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে হবে। একইভাবে সিআরবি থেকেও ইউনাইটেড গ্রুপকে তাড়াতে হবে। কারণ তারা হাসপাতাল বানাবে, এখানে কোনো গরীব মানুষের চিকিৎসা হবে না। বিএমডব্লিউ গাড়িওয়ালাদের চিকিৎসা হবে। আমরা বিএমডব্লিউ গাড়িওয়ালাদের জন্য হাসপাতাল চাই না, গরীব মানুষের হাসপাতাল চাই।’- বলেন মোহাম্মদ শাহআলম

সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবীর সভাপতিত্বে এবং সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মছিউদ্দৌলা, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অমৃত বড়ুয়া, প্রমোদ বরণ বড়ুয়া, নারী সেলের আহবায়ক রেখা চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার সাধারণ সম্পাদক সেহাব উদ্দিন সাইফু, সীতাকুণ্ডের সহ-সম্পাদক জামাল উদ্দিন, জেলা যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল সামির, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী।

সিপিবি নেতারা বলেন, ‘সিআরবিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে দুইমাস ধরে আন্দোলন চলছে। চট্টগ্রামে এত মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, এত জনপ্রতিনিধি- কেউ এই দাবির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেননি। সিআরবি ইস্যুতে মন্ত্রী-এমপিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি দলের নেতারা শুধু একটাই কথা বলে- প্রধানমন্ত্রী জানতে পারলে প্রকল্প বাতিল করবেন। দুইমাস ধরে আন্দোলনের খবর কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায়নি? আর কী করলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি পৌঁছবে ?’

‘ইউনাইটেড গ্রুপকে বলব- আপনারা সিআরবি থেকে হাত গুটান। চট্টগ্রামের জনগণ তাদের ফুসফুস ব্যবহার করে আপনাদের ব্যবসা করতে দেবে না। সরকারকে বলব- লুটেরা দস্যুদের লাগাম টানুন। অবিলম্বে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিল করে অন্য কোথাও একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিন। না হলে সিপিবি চট্টগ্রামের জনগণকে নিয়ে ঘেরাও-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। জনতার দাবি আমরা আদায় করেই ছাড়ব।’- বলেন সিপিবি নেতারা।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরডি/এসএসএ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন