বিজ্ঞাপন

ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় অনুমোদন দিয়ে গেজেট প্রকাশ

December 1, 2021 | 6:51 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খাদ্যদ্রব্যে ক্ষতিকর ট্রান্সফ্যাট এসিড কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ডব্লিউএইচও ঘোষিত সর্বোত্তম নীতিতে সায় দিয়ে গত ২৯ নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা), ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১ ডিসেম্বর) সংগঠনগুলোর পাঠানো যৌথ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। ‘খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১’ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, বর্তমানে তরুণ ও মাঝ বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ এর অন্যতম কারণ। প্রবিধানমালাটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশে হৃদরোগ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের রিজিওনাল ডিরেকটর বন্দনা শাহ্ বলেন, ভারত, ব্রাজিল, তুরস্কসহ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে খাদ্য সরবরাহ থেকে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত হলো। ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব ও উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। এই নীতি হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকে একই ধরনের পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করবে।

বিজ্ঞাপন

শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট একটি ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের ফলে উচ্চহারে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যু, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) ও স্বল্প স্মৃতিহানি (কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট) বা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল (পিএইচও), যা ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও ভাজা-পোড়া খাবার এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়কসংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহৃত হয়।

ডব্লিউএইচও ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ থেকে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব তেল, ফ্যাট ও খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করল। এ বিষয়ে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রবিধানমালাটি ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

জিএইচএআই-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত হলে চিকিৎসা ব্যয় কমবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০১৯ সালে পরিচালিত একটি গবেষণা অনুযায়ী ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও ব্র্যান্ডগুলোর নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও’র সুপারিশ করা ২ শতাংশের চেয়ে বেশি মাত্রায় ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ডব্লিউএইচও প্রকাশিত ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের তালিকাতেও রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগে মৃত্যুর ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। প্রবিধানমালাটি ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন