বিজ্ঞাপন

নতুন বছরে ভ্যাকসিন প্রয়োগের নতুন পরিকল্পনা

December 31, 2021 | 9:40 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। তবে ২০২২ সালের প্রথম দিন থেকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছে দিতে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই পরিকল্পনার আওতায় জানুয়ারি মাসজুড়ে দেশের চার হাজার ৬১১টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ২৪টি করে কেন্দ্রে একদিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। আর নির্ধারিত দিনে একটি কেন্দ্রে দেওয়া হবে ৩০০ ডোজ ভ্যাকসিন। এর ফলে জানুয়ারি মাসে ইউনিয়ন পর্যায়ের এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে তিন কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই কর্মসূচির আওতায় কারও নিবন্ধন করা না থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানান কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে করোনার ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির বিশেষ ক্যাম্পেইন শুরু হবে। আর তাতে তিন কোটির বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে থাকা ইপিআই (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) কেন্দ্রগুলোতে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পুরো জানুয়ারি মাস এ কর্মসূচি চালানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ডভিত্তিক সাব-ব্লক করে আমরা এবার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করব। এই উদ্দেশ্য নিয়েই কাজ করে যাওয়া আমাদের পরিকল্পনা। বাংলাদেশে চার হাজার ৬১১টি ইউনিয়ন আছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আমরা ২৪টি করে কেন্দ্র তৈরি করব সাব-ব্লক করে। সেখানে আমরা এক মাস পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেবো।

বিজ্ঞাপন

ডা. শামসুল বলেন, আমরা দেখেছি সব ইউনিয়ন মিলিয়ে আমাদের মোট কেন্দ্রের সংখ্যা হবে এক লাখ ১০ হাজার ৬৬৪টি। প্রতিটি কেন্দ্রে যদি আমরা এক দিনে ৩০০ জনকে ভ্যাকসিন দিতে পারি, তাহলে আমরা প্রায় তিন কোটি ৩২ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারব। এই মেগাপ্ল্যান নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এরই মধ্যে বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তাদের মাইক্রোপ্ল্যান তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সবাই তাদের পরিকল্পনা জেলা অফিসে পাঠিয়ে দেবেন। এই মাইক্রোপ্ল্যান দিয়ে আগামী এক মাস ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে, যা শুরু হবে ১ জানুয়ারি। এ ক্ষেত্রে যেসব উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে, সেখানে দুই থেকে চার দিন পরে কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এ বিষয়ে স্থানীয় কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত নেবেন।

ডা. শামসুল বলেন, আমাদের লক্ষ্য গ্রাম থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা ইপিআই কেন্দ্রগুলোতে ভ্যাকসিন দেওয়া। এসব কেন্দ্রে গত ৩০ বছর ধরে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, যা সবাই চেনে। সেসব কেন্দ্রে আগে শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও এর পাশাপাশি এবার বড়দের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমরা এলাকাগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে প্রচার চালাব। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করার লক্ষ্য আছে আমাদের।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে থাকা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করব। তাদের আমরা ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে জানাব। তৃতীয় দিন তাদের রুটিন ইপিআই কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এই কর্মসূচিতে মসজিদের মাইকে ঘণ্টাখানেক পর পর ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে। এক্ষেত্রে আমাদের একটি করে টিম গঠন করা হবে যেখানে দু’জন ভ্যাকসিনেটর ও তিন জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। তারা যেহেতু সেখানকার স্থানীয়, তাই তারা সবাইকে সহজে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ডেকে আনতে পারবেন।

শিথিল হচ্ছে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া

ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মসূচিতে। অর্থাৎ নিবন্ধন না থাকলেও কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধন করে ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ থাকছে। ডা. শামসুল বলেন, কারও যদি জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন কার্ড না থাকে, তাহলে স্থানীয় চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের প্রত্যয়নের মাধ্যমেও ভ্যাকসিন দিয়ে দেবো। সেক্ষেত্রে কেবল একটি মোবাইল নম্বর আমরা রেখে দেবো, যেন আমরা পরে তাকে ভ্যাকসিনগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারি। আর একটি কাগজে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহণের তারিখ লিখে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এই কেন্দ্রগুলোর কিছু স্থানে আমাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। বাকিগুলোতে দেওয়া হবে সিনোফার্মের ভ্যাকসিন। কাজেই যারা ক্যাম্পেইনে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন হিসেবে কোভিশিল্ড নেবেন, তারা মার্চে দ্বিতীয় ডোজ পাবেন।

এ কর্মসূচির বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমাদের ভ্যাকসিনের কোনো অভাব নেই। আমরা ৩১ কোটি ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ১৭ কোটি ভ্যাকসিন আমাদের হাতে চলে এসেছে। সাত কোটি প্রথম ডোজ ও পাঁচ কোটি দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এবার জানুয়ারি মাস থেকে নতুন পরিকল্পনায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে আমরা চার কোটি ভ্যাকসিন দিতে পারব।

বিজ্ঞাপন

গত ৭ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতো গণটিকাদান কর্মসূচি হাতে নেয় সরকার। ওই কর্মসূচির আওতায় ছয় দিনে দেশে ৫০ লাখ ৭১ হাজার মানুষ প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে ৭ সেপ্টেম্বর এ কর্মসূচিতে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কেবল ঢাকায় এ কর্মসূচি চালানো হয়। ঢাকার বাইরে চলে আরও তিন দিন, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিশেষ গণটিকাদান কর্মসূচি ঘোষণা করে। দেশে বর্তমানে নিয়মিত ভ্যাকসিন কর্মসূচি ছাড়াও শিক্ষার্থী ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন