বিজ্ঞাপন

‘বিশেষ সুবিধা’ পাচ্ছেন জামায়াতের ৬ কাউন্সিলর প্রার্থী!

June 14, 2022 | 11:51 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) তৃতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা হিসেবে পরিচিত ছয় প্রার্থী। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, এই ছয় প্রার্থী প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে হামলাসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠলেও তাদের বিষয়ে প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীকেই বাড়তি কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৫ জুন) সকালে শুরু হচ্ছে কুমিল্লা সিটির এই নির্বাচন। এতে ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ১০৮ জন। দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলেও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের মধ্যে এবার নির্বাচনে লড়ছেন একাধিক জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এর মাঝে একাধিক সদ্য সাবেক কাউসিলরও আছেন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বলছেন, স্বীকৃত জামায়াত নেতা হয়েও তারা ভোট করছেন কীভাবে— সেটিই তাদের প্রশ্ন।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে হামলা, মামলা না নেওয়ার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

গত ১১ জুন নির্বাচনি প্রচারণায় পোস্টার লাগানোর সময় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সদস্য ও কাউন্সিলর প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের ভাইয়ের নেতৃত্বে করা হামলায় প্রতিপক্ষের দুই কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম ইকরাম ও তার কর্মী-সমর্থকদের। হামলায় গুরুতর আহত দু’জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে পুলিশ মামলা নিতে দেরি করেছে বলে অভিযোগ মো. আমিনুল ইসলাম ইকরামের।

বিজ্ঞাপন

হামলার শিকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. জোহর আলী সারাবাংলাকে বলেন, আমরা পোস্টার লাগানোর জন্য গিয়েছিলাম। পাশেই ঘুড়ি মার্কার প্রচারণা চলছিল। হঠাৎ মোশাররফ চাচার ভাই শাখাওয়াতের নেতৃত্বে ১৪-১৫ জন আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করলে তারা পালিয়ে যায়। যতক্ষণ হুঁশ ছিল, যাদের হামলা করতে দেখেছি তারা অনেকেই আমাদের এলাকার না। শাখাওয়াত চাচা বলছিল নৌকা মার্কার পোস্টার এলাকায় লাগানো যাবে না। আর এটা বলে মারছিল।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী মো. আমিনুল ইকরাম সারাবাংলাকে বলেন, এই এলাকায় কিছু দিন থেকে আমরা অনেক বহিরাগত দেখতে পাচ্ছি। এ বিষয়ে আমি নির্বাচন কমিশনকেও জানিয়েছি। পোস্টার লাগানোর জন্য হৃদয় ও জোহর আলী খালের পাড়ে গেলে তাদের ওপর হঠাৎ হামলা করা হয়। এসময় তাদের কয়েকজন আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। পরে আমাদের লোকেরা গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের অবস্থা ভালো না। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছি। নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষের কাছে ভোটারদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথাও জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড একসময় জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি ছিল। এখানেই ছিল ছাত্রশিবিরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টালেও তারা আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে বের হতে পারেনি। চৌদ্দগ্রাম, মিয়াবাজারসহ আরও বেশকিছু এলাকা থেকে তারা অনেক বহিরাগতদের এনে এলাকায় আশ্রয় দিয়েছে। এটা নির্বাচন পরিস্থিতির জন্য ভালো কিছু না। আর তাই আমি অভিযোগ জানিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগ করা হয় জামায়াত প্রার্থী মোশারফ হোসেনের সঙ্গে। তবে তিনি গণমাধ্যমে কোনো ধরনের কথা বলবেন না বলে জানান।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের সদস্য মো. মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা আছে ২৫টি। একইসঙ্গে তার ভাই শাখাওয়াতের বিরুদ্ধে আছে নানুয়ার দিঘীর পাড়ে হওয়ার মণ্ডপ হামলার ভাঙচুরের ঘটনায় সম্পৃক্ততাসহ একাধিক মামলা।

কোনো প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার কথা অবশ্য অস্বীকার করছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহান সরকার। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পরে মামলা ও যেকোনো অভিযোগের বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু নির্বাচনি আইন মেনে কাজ করতে হয়। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রার্থীরা সবাই নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাই কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে কে কোন দলের সমর্থক, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে যাচ্ছি।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওই হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর দু’জন সমর্থককে হামলা করার অভিযোগ আমরা পেয়েছি। পরে বিধিমালা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হামলার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আশা করছি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।

বিজ্ঞাপন

জামায়াত প্রার্থীর বিরুদ্ধে হোলি আর্টিজানের হামলায় অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা কাজী গোলাম কিবরিয়া। হলফনামা অনুযায়ী ছাত্রশিবিরের সাবেক সাথী কাজী গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা ও সন্ত্রাস দমন আইনে ২৭টি মামলা আছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে হলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ তুলেছেন আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হোসেন ছোটন।

ছোটন বলেন, জামায়াত নেতা কাজী গোলাম কিবরিয়া প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বহিরাগত নিয়ে শোডাউন করছে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করছে। গোলাম কিবরিয়ার অনুসারীরা এর আগে রাতে হামলা চালিয়ে আমার চার অনুসারীকে কুপিয়ে আহত করে। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, জামায়াত নেতা গোলাম কিবরিয়া অস্ত্র ব্যবসায়ী। বিষয়টি গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে প্রকাশ করে। কিবরিয়ার এই বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে আমি মৌখিকভাবে জানিয়েছি। তারা আমাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনায় আমি অস্ত্র সরবরাহ করেছি— এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে করা সব মামলা রাজনৈতিক। আদালতে মামলার হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত। এরপরও এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম, আছি। জনগণ কাজের কারণে আমাকে আবারও বেছে নেবেন বলে আশাবাদী।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ একরাম হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২৫টি মামলা আছে। ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক এই প্রভাবশালী ছাত্রশিবির নেতা এলাকায় জামায়াতে রাজনীতিতে যুক্ত বলে পরিচিত এলাকাবাসীর কাছে।

একরাম হোসেন বাবু ছাড়াও গোলমা কিবরিয়া এবং মো. মোশারফ হোসেন ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। এই তিন প্রার্থীই টানা দুই মেয়াদে নিজ নিজ ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন।

এবারের নির্বাচনে আরও দুই জামায়াত নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন— ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চৌয়ারা মাদরাসার শিক্ষক সাইফুল হক চৌধুরী।

জামায়াত নেতা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের স্থানীয় নির্বাচনে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন কুসিক নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আছেন, তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এক্ষেত্রে তারা কোনো দলীয় পরিচয় ব্যবহার করছে না। তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা ও অন্যান্য সব বিষয় তারা হলফনামায় ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং এখানে আইনিভাবে কেউ বলতে পারবে না যে কারও প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন