June 28, 2022 | 9:35 pm
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
বগুড়া: জেলার শাজাহানপুর উপজেলার স্কুলছাত্র নওফেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। দামী মোবাইল ফোনের লোভেই খুন করা হয় তাকে। জন্মদিনে আনন্দ-ফুর্তি করার প্রলোভন দিয়ে ডেকে নেয় তারই বন্ধু নবির হোসেন (১৬)। এরপর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে নওফেলকে হত্যা করে তার ভিভো ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সেট নিয়ে নেয় নবির। পরে সেই ফোন বিক্রির টাকায় বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে গিয়ে ফুর্তি করে সে। উপজেলার দাড়িগাছা গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে নওফেলকে গত ১৮ জুন খুন করা হয়। নওফেল দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
সোমবার (২৭ জুন) গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে নবির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নবির দাড়িগাছা গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, নবির হোসেন লেখাপড়া না করলেও নওফেল শেখ ছিল তার ঘনিষ্ট বন্ধু। তারা দাড়িগাছা গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গলে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ধূমপান করতো। দুই মাস আগে জমি বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকায় একমাত্র ছেলে নওফেলকে স্মার্ট ফোন কিনে দেন তার বাবা। এরপর থেকেই বন্ধু নওফেলের মোবাইল ফোনটি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে নবির।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন থাকায় বেলা ১১টার দিকে নওফেলকে ধূমপান করার কথা বলে কৌশলে জঙ্গলে নিয়ে যায়। নবির আগে থেকেই নওফেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি মাফলার সঙ্গে রেখেছিল। জঙ্গলের একটি ইউক্যালিপ্টাস গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে ধূমপান করার সময় নওফেলের গলায় সেই মাফলার পেঁচিয়ে গাছের সঙ্গে ফাঁস দেয়। এতে নওফেল নিস্তেজ হয়ে পড়লে নবির পাশের জমি থেকে একটি বাঁশের লাঠি এনে নওফেলের মাথায় আঘাতে করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে, মরদেহ টেনে গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়ে মোবাইল ফোন সেটটি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। সেই মোবাইল ফোনটি বগুড়া শহরে নিয়ে যায়। একইসঙ্গে, বগুড়ার শেরপুর থেকে তার এক বান্ধবীকে শহরে ডেকে নেয়। দুইজন একত্রিত হয়ে নিজেদের ভাই বোন পরিচয় দিয়ে তারা শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে পাঁচ হাজার টাকায় মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে। সেখান থেকে তারা দুই জন শহরের গালাপট্টির একটি আবাসিক হোটেলে গিয়ে একটি রুম ভাড়া করে। সেখানে বান্ধবীর সঙ্গে ফুর্তি করে তাকে দেড় হাজার টাকা দিয়ে বিদায় করে।
হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর ২০ জুন বিকেলে জঙ্গল থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় লোকজন গিয়ে নওফেলের মরদেহ শনাক্ত করে। এরপর থেকেই পলাতক ছিল নবির।
পুলিশ সুপার বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। তারা প্রথমে সাতমাথা থেকে নওফেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। এরপর ফোনের সূত্র ধরে আটক করে নবিরের কথিত বান্ধবীকে। পরে পুলিশের একটি দল নবির হোসেনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
সারাবাংলা/একেএম