বিজ্ঞাপন

দেশে আসেনি ৫-১২ বছর বয়সী শিশুদের ভ্যাকসিন, প্রয়োগ ‘ইদের পরে’

June 29, 2022 | 11:03 pm

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের দ্রুতই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য অধিদফতরও জানিয়েছে, পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তবে কবে ও কীভাবে মিলবে শিশুদের ভ্যাকসিন?— এমন প্রশ্নের উত্তরে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারও কাছ থেকেই।

বিজ্ঞাপন

একইসঙ্গে কোভ্যাক্সের কাছ থেকে আশ্বাস মিললেও দেশে এখন পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি শিশুদের ভ্যাকসিন। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গ্রিন সিগন্যাল মিললেই ভ্যাকসিন শিপমেন্ট করতে পারবে কোভ্যাক্স— এমনটি জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া ভিন্ন। এক্ষেত্রে তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার সিরিঞ্জও ভিন্ন হতে পারে পরিমাপ বিবেচনায়। জুলাই মাসে ইদুল আজহার পরে অথবা আগস্ট মাসের দিকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে নেওয়া হলেও এটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নয় বলেও জানা গেছে। সব মিলিয়ে, এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাদে অন্য কিছুই চূড়ান্ত হয়নি বলে জানাচ্ছে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সসীমার শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে— এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এতে সায় দিয়েছেন। তবে কবে নাগাদ ও কীভাবে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরাও পাবে ফাইজারের ভ্যাকসিন

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২৯ এপ্রিল প্রথমবারের মতো পাঁচ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ঘোষণার কথা জানান মানিকগঞ্জে। সেভাবেই সবকিছু পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই পরিকল্পনার এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ইদুল আজহার পরে শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও এই কার্যক্রম শুরু হতে হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। একইসঙ্গে দেশের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যায় কি না, সেই সম্ভাব্যতাও যাচাই করা হচ্ছে।

একাধিকবার শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা জানালেও সেটি কবে থেকে শুরু হবে ও কীভাবে দেওয়া হবে?— এমন প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১২ বছরের বেশি বয়সসীমার নাগরিকদের মতোই শিশুদের দুই ডোজ ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে ফর্মুলা ভিন্ন হতে পারে। বড়দের ক্ষেত্রে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয় ইন্ট্রামাসকুলার ইনজেকশন অর্থাৎ বাহুর ওপরের অংশের মাংসপেশীতে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় শূন্য দশমিক ৩ এমএল এডি সিরিঞ্জ। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফাইজারের ভ্যাকসিনের এক ভায়ালের সঙ্গে ডাইলুয়েট মিশ্রণের পর ৬ ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হতো বড়দের জন্য। আর এটি সংমিশ্রণের জন্য দুই এমএলের সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ডোজের এক-তৃতীয়াংশ দিয়ে এক ডোজ দেওয়া হতে পারে শিশুদের। এক্ষেত্রে ১২ বছরের বেশি বয়সীদের ৩০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ দেওয়া হলেও শিশুদের ১০ মাইক্রোগ্রাম মাপের ডোজ দেওয়া হতে পারে।

এর আগে, ২৯ এপ্রিল মানিকগঞ্জে এক ইফতার অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, জুনের মধ্যে ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এ ভ্যাকসিনের আওতায় প্রায় দুই কোটি শিশু আসবে। ফাইজারের এ ভ্যাকসিন বিশেষ ধরনের। এটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা দুই কোটি ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠিয়েছি। এরই মধ্যেই আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে আমাদের কাছে ৩০ লাখ ভ্যাকসিন এসেছে। অভিভাবকদের বলব— ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করে ভ্যাকসিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করবেন, যেন পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিন নিতে কোনো সমস্যা না হয়।

বিজ্ঞাপন

পরে গত ২৭ জুন রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত এক কর্মশালায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন আছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে, সেভাবেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের কর্মসূচি করা হবে। ডা. ফ্লোরাও শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনের আহ্বান জানান অভিভাবকদের প্রতি।

একই দিন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে মূল আলোচক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, শিগগিরই পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টিও সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অভিমত অনুযায়ী ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

এর মধ্যে, মঙ্গলবার (২৮ জুন) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ফের বলেন, করোনা থেকে সুরক্ষায় শিগগিরই ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। কিছুদিন আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন ছিল না। এখন অনুমোদন পেয়েছি। শিশুদের জন্য উপযোগী ভ্যাকসিনও আমাদের হাতে এসেছে। শিগগিরই তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তিনি আবারও অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান, শিশুদের যেন সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন করানো হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী একাধিকবার শিশুদের ভ্যাকসিন পাওয়ার তথ্য জানালেও মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর বলছে, এ ধরনের কোনো ভ্যাকসিন এখনো পায়নি বাংলাদেশ। একইসঙ্গে মন্ত্রী পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি বললেও স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে শিক্ষার্থীসহ পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা প্যানেল ফাইজার-বায়োএনটেক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের স্বল্প পরিমাণের একটি ডোজ ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের দেওয়ার সুপারিশ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাকরণ সম্পর্কিত স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অব এক্সপার্ট বা কৌশলগত উপদেষ্টা দলের বিশেষজ্ঞদের বৈঠকে পরে এই কোম্পানির ভ্যাকসিন মূল্যায়ন করে।

ওই দিনই এসএজিই’র চেয়ারম্যান আলেজান্দ্রো ক্রাভিওটো সাংবাদিকদের বলেন, কমিটির মতে ৫-১১ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে ওই সব শিশুদের অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাদের আগে থেকে কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে। কম বয়সী জনগোষ্ঠীর জন্য ৩০ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে ১০ মাইক্রোগ্রামের ডোজ প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন