বিজ্ঞাপন

কিস্তি পরিশোধে চড়া সুদে টাকা নিচ্ছেন বানভাসিরা

July 26, 2022 | 5:53 pm

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

সুনামগঞ্জ: ভয়াবহ বন্যায় জেলার লাখো মানুষ বসতঘর হারিয়েছেন। হাওরপাড়ের কৃষকের ধানের গোলা হয়েছে শূণ্য, মাছের খামার, পোল্ট্রি খামার, ছোট-খাটো ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি-কৃষিজ পণ্যসহ উপার্জনের নানা খাতও একেবারে ধংস হয়ে গেছে। নিঃস্ব মানুষদের অনেকের খাবারেরই সংস্থান নেই। কিন্তু বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে চড়া সুদে ফের ঋণ করতে হচ্ছে তাদেরকে।

বিজ্ঞাপন

শহরতলীর কোরবাননগর ইউনিয়নের হাছনবাহারের হামিদা বেগমের স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। নিজের ঘর তৈরির জন্য বন্যার আগে তিনটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন হামিদা। ঘর তৈরির আগেই বন্যায় ভেসে গেছে, পুরাতন ঘরসহ সবকিছু। এখন তিন সন্তানসহ পরিবারের খাবার-দাবারেরই ব্যবস্থা নেই। তিন এনজিও’র কিস্তির টাকা ও সংসার চালানোর খরচের জন্য ফের চড়া সুদে টাকাও নিয়েছেন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। এই অবস্থায় মহা বেকায়দায় পড়েছেন হামিদা বেগম।

বাবা ঋণ নিয়ে অসুস্থ্য হয়ে মারা গেছেন গত শনিবার। সোমবার এনজিও’র ঋণ কর্মকর্তা এসে বলেছেন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরে মৃতের কন্যা আব্দুল ওয়াহাব ঋণ কর্মকর্তার সামনে উপস্থিত হয়ে বাবার কিস্তির টাকার দফারফা করেছেন। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নারীরাও এনজিও’র ঋণ আদায়কারীদের আচরণে অসন্তুষ্ট।

সুনামগঞ্জ শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরের কোরবাননগর ইউনিয়নের হাছনবাহার গ্রামে গিয়ে সোমবার এমন মর্মস্পর্শী কাহিনী জানা গেলো। গ্রামের ২৫০ পরিবারের ২০০ পরিবারই এনজিও’র ঋণের জালে বন্দি। কিছু কিছু পরিবার তিন-চারটি এনজিও থেকে ঋণ তুলেছে। এখন কিস্তি পরিশোধের জন্য বানভাসি মানুষদের অনেকেরই যেতে হচ্ছে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে।

বিজ্ঞাপন

হাছনবাহার গ্রামের বন্দেবাড়ী এলাকায় পৌঁছে বিষণ্ণ মন নিয়ে কমপক্ষে ২০ জন নারীকে কিস্তির টাকা ও বই হাতে নিয়ে এনজিও (আশার ঋণ কর্মকর্তা) ওমর ফাককে ঘিরে দাঁড়াতে দেখা গেছে। ঋণ কর্মকর্তা ওমর ফারুক হাজেরা বেগম, রাবিয়া বেগম, বাহার বেগম, সাহানারা বেগম, রাহেলা বেগম ও মাসুদা বেগমসহ অনেকের কিস্তির টাকা নিয়ে বইয়ে হিসাব লিখে দিয়েছেন।

ঋণ কর্মকর্তা ওমর ফারুক অবশ্য দাবি করেছেন তারা কিস্তি আদায় করছেন না। ঋণ গ্রহীতাদের এক হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো বিতরণের জন্য এসেছেন তিনি।

যদিও জেলা প্রশাসক মো.জাহাঙ্গীর হোসেন বলছেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ আদায় স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এরপরও ঋণ আদায়ের অভিযোগ পেলে এনজিও ব্যুরোকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, ১৬ জুন গভীর রাতে উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ জেলার সিংহভাগ এলাকায় আট থেকে ১০ ফুট উচ্চতায় ঢল বয়ে যায়। ছাদ সমান পানির বা একতলার বাসিন্দারা ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনের দুইতলা- তিনতলা, সরকারি বহুতল ভবন, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় উঠে প্রাণরক্ষা করেন। গবাদিপশুসহ গৃহপালিত অসংখ্য প্রাণির মৃত্যু হয়। উঁচু এলাকায় নিয়ে কিছু গৃহপালিত প্রাণির জীবন রক্ষার চেষ্টা করেন কেউ কেউ।

সারাবাংলা/একেএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন