বিজ্ঞাপন

সংকট নেই, অর্থনৈতিক চাপে আছে বাংলাদেশ: দেবপ্রিয়

August 30, 2022 | 4:19 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: সংকটে নেই তবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে চাপে আছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বর্তমান পরিস্থিতিকে অস্বীকার ও অবহেলা করে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে এই চাপ সংকটে পরিণত হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘ইআরএফ ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব প্রশ্ন করেন দেবপ্রিয়। ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ডায়ালগে উপস্থিত ছিলনে ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভী।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক ঘাটতি ঢাকতে দৃশ্যমান প্রকল্প হাতে নেয়। গত কয়েক বছরে সরকারের পক্ষ থেকে ভৌত অবকাঠামোতে যে পরিমাণ ব্যয় করা হয়েছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সে পরিমাণ মনোযোগ দেওয়া হয়নি। ২০টি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পর তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হলে আমাদের দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। আর এজন্য আমাদের শিক্ষা খাতের যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে স্বাস্থ্য খাতের।’

গত এক দশকের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সিপিডির সম্মানীয় এ ফেলো বলেন, ‘উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে চার ধরনের বিচ্যুতি হয়েছে, দেশের অর্থ লুণ্ঠন হয়েছে। লুণ্ঠন দেশে এবারই প্রথম নয়— ৮০ দশক থেকেই এটা শুরু হয়েছে। প্রথম লুণ্ঠন হয়েছিল মিশ্র ঋণের মাধ্যমে, যা হয়েছিল ডিএফআইয়ের মাধ্যমে। এরপর বাংলাদেশের পুঁজিবাজার হলো লুণ্ঠন করার দ্বিতীয় উৎস। অনেক ক্ষেত্রে অস্তিত্ববিহীন কোম্পানিকেও পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ তরল টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর ১৯৯৬ সালে আইপিওর মাধ্যমে জ্ঞান মানহীন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়। যার ফলে পুঁজিবাজারেও বিচ্যুতি ঘটে। এখনো অনেক কোম্পানি বাজারে আছে বা ছিল, যারা বিনিয়োগকারীরদের অর্থ লুণ্ঠন করে চলে গেছে। এসব বিচ্যুতির কারণেও দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আগামী দুই-তিন মাস নয়, ২০২৩ কিংবা ২০২৪ সালের আগে দেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা বলছেন, আগামী দুই-তিন মাসে মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে, এটা ঠিক না। বরং সরকারের কর্মকর্তাদের এসব চটজলদি বক্তব্য বাজার আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ধনী-গরিবের বৈষম্য আরও বেশি বাড়ছে। এতদিন যেটা ছিল ভোগ-বৈষম্য, এখন সেখান থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক বৈষম্য আরও বেশি বাড়ছে। এখন সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।’

ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম লিটারে পাঁচ টাকা করে কমানো প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘৪০ টাকা নিয়ে ৫ টাকা ফেরতের সিদ্ধান্তের ভিত্তি কী? এই মুহূর্তে যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, তার ভিত্তি কী? কে নিচ্ছে এসব সিদ্ধান্ত? এটা কি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না আর্থিক সিদ্ধান্ত? এটা কি সামাজিক সিদ্ধান্ত? সিদ্ধান্তগুলো কোথায় হচ্ছে? এটা কি মন্ত্রিপরিষদে হচ্ছে, এটা এনার্জি কমিশনে হচ্ছে, এটা মন্ত্রণালয়ে হচ্ছে নাকি ব্যক্তিগতভাবে হচ্ছে? না কোনো বিশেষ মহল এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?’

বিজ্ঞাপন

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্তের জায়গা অচেনা দাবি করে তিনি বলেন, ‘৪০ টাকা নিয়ে ৫ টাকা ফেরত- এটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সমন্বয়হীনতার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তেলের আমদানি কর কত? উৎস কর কত? আমরা কোন জায়গা থেকে কত ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছি? কত অর্থের প্রয়োজন পড়বে? তেলে কর আহরণ কত? কিছুই কিন্তু জানি না। শুধু যদি একটি মন্ত্রণালয়, একজন সচিবের মাধ্যমে মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত দেন যে দুই সপ্তাহ পর এটা করতে হবে, তিন সপ্তাহ পর এটা করতে হবে, তাহলে এমনই হবে।’

সারাবাংলা/জিএস/এনএস

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন