বিজ্ঞাপন

বাসে যুক্ত হলো সিসি ক্যামেরা, যাত্রী হয়রানি কমার আশা

October 17, 2022 | 11:00 am

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাসে যাত্রী হয়রানির ঘটনা পুরনো। গত কয়েক বছর ধরে হয়রানির সঙ্গে ঘটছে বাসে নারী ধর্ষণ ও হত্যার পর ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনাও। সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীতে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দিয়ে আবু সায়েম মুরাদ নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া নারী যাত্রীরা বাসে প্রতিনিয়তই নানারকম শারীরিক নির্যাতন ও হয়রানির মুখে পড়েন। অন্যদিকে বাসের ড্রাইভার-স্টাফরাও যাত্রীদের মারধরের শিকার হন— এসব পরিস্থিতিতে বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।

বিজ্ঞাপন

এসব প্রতিরোধে রাজধানীর গণপরিবহনে নারী যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঢাকায় চলাচলরত পাঁচটি বাস কোম্পানির ১০৮টি বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। দিপ্ত ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল রোববার (১৬ অক্টোবর) মিরপুরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনভেনশন সেন্টারে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

উদ্বোধনী দিনে ৪টি বাস কোম্পানির পঁচিশটি ও একটি পরিবহনের ৮টিসহ মোট ১০৮টি বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়। ক্যামেরা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হবে ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

রাজধানী সুপার সার্ভিস লিমিটেডের ঢাকা টু ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুট, বসুমতি ট্রান্সপোর্টের গাবতলী টু গাজীপুর রুট, প্রজাপতি পরিবহন লিমিটেডের মোহাম্মদপুর টু আবদুল্লাহপুর রুট, এবং পরিস্থান পরিবহনের ঘাটারচর টু আব্দুল্লাহপুর রুটের পঁচিশটি করে বাস এবং গাবতলী এক্সপ্রেসের গাবতলী টু সায়েদাবাদ রুটের আটটি বাসে প্রাথমিক পর্যায়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ‘গণপরিবহনে নারীরা নানা কারণে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন যা নারীর স্বাধীন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। বাসের মধ্যে পুরুষ যাত্রীদের কাছেও অনেক নারীই অসম্মানিত হন ও নানারকম নির্যাতনের শিকার হন। আমরা চাই না দেশে একটি নারীও কোনো গণপরিবহনে সহিংসতার শিকার হোক। বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে সেই সহিংসতা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করি। এতে অপরাধীকে ধরা ও তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে বাসের পুরুষ যাত্রীরাও নানারকম হয়রানির শিকার হন। এর মাধ্যমে তারাও নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবেন।’

নারীদের নিরাপত্তায় ১০৮টি বাসে সিসি ক্যামেরা

দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান বলেন, “এটি একটি পাইলট প্রকল্প। বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা সেই পাইলট প্রকল্পের শেষ ধাপ। ২০১৯ সালের ৯ জানুয়ারি শুরু হয়। শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। দু’বছর করোনা মহামারির কারণে প্রজেক্ট কিছুটা ধীরগতিতে এগিয়েছিল। আমরা আশা করছি পাইলট প্রকল্প সফল হবে ও আমরা আরও বেশি গাড়িকে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে আনতে পারবো। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়, বাসমালিকসহ সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। অনেক বাসমালিকই আরও বেশি সংখ্যক বাসে ক্যামেরা চাচ্ছেন।”

বিজ্ঞাপন

সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কীভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে জাকিয়া কে হাসান বলেন, ‘রাস্তায় চলমান সিসিটিভি ক্যামেরাযুক্ত গাড়ি সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারিতে রাখা হবে। এর জন্য তাদের ফাউন্ডেশনে সার্ভেইলেন্স টিমে তিনজন প্রকৌশলী এবং ফিল্ডে চারজন আছে। কারিগরি সহায়তায় জেন-এক্স ইনফোসিস। বাসে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা দেখলে জাতীয় জরুরি সাহায্য নাম্বার ৯৯৯ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল টোল ফ্রি হেল্পলাইন ১০৯ এ যোগাযোগ করা হবে, যাতে কাছাকাছি থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।’

বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানোকে স্বাগত জানিয়েছেন যাত্রী, চালক, বাসমালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোয় আমরা মালিক ও যাত্রী দুই শ্রেণিই লাভবান হব। আমাদের চালক-স্টাফ সবাই উপকৃত হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমরা কেউই চাই না। বাসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মূল অপরাধী ধরা পড়ুক ও প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হোক। আশা করছি বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা অপরাধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কমাতে ভূমিকা রাখবে।’

নিয়মিত বাসে যাত্রাবাড়ি থেকে পল্টন বাসে যাওয়া আসা করেন আমেনা বেগম। বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর খবরে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন। বলেন, “বাসে অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে শরীর ঘেঁষে দাঁড়ায়, গায়ে হাত দেয়। তর্কাতর্কি করে। মেয়েরা সরে দাঁড়াতে বললে অধিকাংশ যাত্রীরা উগ্র আচরণ করে। ‘সিট নাই তবুও উঠছেন কেন?’, ‘শরীরে লাগলে সমস্যা তাহলে ওঠেন কেন‘— এ জাতীয় মন্তব্য করেন। আবার মহিলা সিটে পুরুষ যাত্রী বসে থাকে যাদের মধ্যে অনেকে মেয়ে উঠতে দেখলে সিট দেয়, আবার অনেকে দেয় না। সিসি ক্যামেরা লাগালে নিরাপদ বোধ করব। কেউ কিছু বলার আগে দুইবার ভাববে।”

বিজ্ঞাপন

রামপুরা থেকে পল্টন বাসে আসা-যাওয়া করে রাফি হাসান। জানালেন, প্রায়ই বাসে ভাড়া নিয়ে সমস্যা হয়। হেলপার অনেক লোক তোলে, ভিড়ে ঠাসাঠাসি অবস্থা হয়। এর মধ্যে অনেকসময়ই হাতাহাতি হয়। জিনিসপত্র সাবধানে রাখতে হয়। বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে নিরাপদ বোধ করব।”

বাসচালক মো. সবুজ ইসলাম পনেরো বছর ধরে ঢাকায় গাড়ি চালান। এর আগে তিনি ছিলেন বাসের হেলপার। গত দেড় বছর ধরে প্রজাপতি পরিবহনের গাড়ি চালাচ্ছেন। তার বাসে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোয় সবার জন্যই ভালো হলো। বাসে যাত্রীরা যেমন হয়রানির শিকার হয়, তেমনি আমরাও অনেকসময় যাত্রীদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হই। এখন যাত্রীরা সহজে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না। আবার যাত্রীরাও পকেটমার, চুরি এবং অন্যান্য হয়রানির শিকার হবেন না সহজে। অনেকসময় বাসে ভিড়ের মধ্যে মেয়েরাও হয়রানির শিকার হয়। এখন সেটাও কমে যাবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন