বিজ্ঞাপন

বঙ্গোপসাগরে ২০ জেলে উদ্ধার: যে গল্পে হার মানবে সিনেমা

October 28, 2022 | 12:46 pm

মনিরুল ইসলাম দুলু, লোকাল করেসপন্ডেন্ট

মোংলা: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায় ‘এফবি জেসমিন’ নামে একটি ফিশিং ট্রলার। এসময় ওই ট্রলারে থাকা ২০ জন জেলে প্লাস্টিকের ড্রাম নিয়ে উত্তাল সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তুমুল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই ভাসতে থাকেন তারা। হৃদয়বিদারক এই দৃশ্য তখন আকাশ থেকে দেখতে পায় ভারতের টহলরত একটি বিমান। তাদের বাঁচাতে আকাশ থেকেই বিমান থেকে লাইফ জ্যাকেট ছুঁড়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

পরে ভারতীয় কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘বিজয়া’ এসে বিপদগ্রস্ত ২০ জেলেকে উত্তাল সাগর থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া এসব জেলেদের বাড়ি বাংলাদেশের ভোলা জেলায়।

ঘটনা গত মঙ্গলবারের (২৫ অক্টোবর) ঝড়ের রাতের। গত দু’দিনেও হদিস না পাওয়ায় স্বজনরা ভেবেছিলেন জেলেদের আর কেউ বেঁচে নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে চুরি করে এসব জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। ফলে প্রশাসনের কাছে ছিলো না তাদের খবর, স্বজনরাও বিষয়টি জানাতে ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত। কিন্তু উত্তাল ঘূর্ণিঝড়ে সাগর থেকে বেঁচে ফেরা এসব জেলেদের বেঁচে ফেরার গল্প সিনেমার দৃশ্যকেও যেন হার মানিয়েছে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দফতরের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় এই জেলেদের মোংলা কোস্টগার্ড স্টেশনে আনা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদারের মধ্যস্থতায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে এদিন দুপুরে সমুদ্র থেকে উদ্ধার হওয়া এসব জেলেদের বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমার শূন্যরেখায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলায়’ হস্তান্তর করে ভারতীয় কোস্টগার্ড।

জেলেদের বরাত দিয়ে কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন জামান বলেন, “গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কবলে পড়ে জেলেদের ফিশিং ট্রলার ‘এফবি জেসমিন’ সাগরে ডুবে যায়। এসময় ট্রলারে থাকা প্লাস্টিকের ড্রাম নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন জেলেরা। ভাসতে ভাসতে তারা বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়েন। পরে তাদের ভারতের কোস্টগার্ডের সদস্যরা উদ্ধার করে। তারা এখন সুস্থ আছেন।”

বিজ্ঞাপন

এদিকে স্বজনরা ভেবেছিলেন জেলেদের কেউ বেঁচে নেই। সেই স্বজনদের কাছে জেলেদের হস্তান্তরের সময় মোংলা কোস্টগার্ড স্টেশনে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের তৈরি হয়।

উদ্ধার পাওয়া জেলে মো. রাকিব হোসেন (২০) বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা জেনেও পেটের দায়ে সাগরে গিয়েছিলাম। সংসারে অভাব, কি করবো বলেন? এর পরে তো ঝড়ের কবলে পড়ে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম।’


ভাইকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভোলার চরফ্যাশন থেকে আসা ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সংসারে অভাবের তাড়নায় ভাইকে (ফরহাদ হোসেন) মাছ ধরতে পাঠাই। এর পরে ঝড়ের খবর শুনে পরিবারের সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। ভেবেছিলাম ভাই মনে হয় বেঁচে নাই। পরে কোস্টগার্ড থেকে খবর পাই যে, ভাই বেঁচে আছে। এজন্য তাকে নিতে এসেছি।’

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘ঝড়ের কবলে পড়ে উত্তাল সমুদ্র পড়ে যাওয়া জেলেদের বেঁচে ফিরে আসার বিষয়টি অলৌকিক। আমার কাছে এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতার বিষয়। বিষয়টিকে সবাইকে মানবিক হিসেবে দেখা উচিৎ।’ সেইসঙ্গে সাগরে যাওয়া প্রত্যেক জেলেকেই লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল বলেও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

২০ জন জেলে রাতেই ভোলায় তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন