বিজ্ঞাপন

বিজয়ের একান্ন বছর: তারুণ্যের ভাবনা

December 16, 2022 | 4:42 pm

আজহার মাহমুদ

বিজয় শব্দটির মহত্ত্ব কতটা সেটা যারা পরজায়ের স্বাদ পেয়েছন তারা ভালো বলতে পারবেন। বিজয় এই শব্দের তাৎপর্য অনেক। বিজয়ের মর্যাদা যেমন আছে তেমনি সেই মর্যাদা ধরে রাখার লড়াইও আছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি তারিখ নয়, এটা একটা উপন্যাসের চেয়ে বড় কিছু। এই তারিখের পেছনে লুকিয়ে আছে তিরিশ লক্ষ কিংবা তারও অধিক জীবনের গল্প। আছে গরম রক্তের গন্ধ, আছে আমার মায়েদের আর্তনাদের শব্দ। এতো এতো প্রাণ ত্যাগ ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশ রচিত হয়েছে। আজ সেই বাংলাদেশের বিজয়ের একান্ন বছর। আমার মায়েদের আর্তনাদের একান্ন বছর, আমার বাবা-ভাইদের বুকের তাজা রক্ত ঝরানোর একান্ন বছর। যেটাকে আমরা বিজয় দিবস বলছি। সেই বিজয়ের একান্নতে দাঁড়িয়ে আমরা।

বিজ্ঞাপন

এই একান্নতে এসে মনে হয় এই বাংলাদেশের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তারা লজ্জিত, ব্যাথিত। আমরা তাদের অপমান, অশ্রদ্ধা করছি প্রতিনিয়ত। এই বাংলার জন্য রবিন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি। এই বাংলার জন্য বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। নিজের এবং নিজের পরিবারের জীবন দিয়েছিলেন তিনি।

শুধু তারাই নন, এই বাংলার জন্য ভাসানী, শেরেবাংলারাও লড়েছেন। এই বাংলা সুফিয়া কামাল, জাহনারা ইমাম, শহিদ জিয়া, জয়নুল আবেদীন, সহরোয়ার্দীদের বাংলা। এই বাংলায় ছিলো কাজী নজরুল, জসিম উদ্দিন, আলি আব্বাসদের। তাদের এই বাংলার প্রতি ভালোবাসা যেভাবে ছিলো সেভাবে এসময় এ প্রজন্মের অর্ধেকও আছে বলে মনে হয় না। এর কারণ আবার এই প্রজন্মেও নয়, এর কারণ এই সমাজ ব্যবস্থার।

এই বাংলায় আজ তারুণ্যের কদর নেই। এদেশের বেশিরভাগ তরুণ-যুবসমাজ বেকারগ্রস্থ। এই বেকারত্ব থেকেই এরা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, চুরি, ডাকাতি এসব শুরু করে। এরপর তৈরী হয় চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, চোরাকারবারি। অনেকেই মাদকাসক্ত এবং মাদকের ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

শুধু তা-ই নয়, আজ বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও অধিক। নেই পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ। সবচেয়ে বড় বিষয় এক্ষেত্রে সরকারের স্বদিচ্ছাও নেই। যার কারণে আজ আমাদের দেশে পড়ালেখা করেও লাখ-লাখ শিক্ষার্থীর কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ মেলেনা। তারা কর্মসংস্থানে সুযোগ না পেয়ে চলে যায় ধ্বংসের পথে। অনেক সময় তারাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে অনেকে তখন জীবনের তাগিদে নোংরা এবং ঘৃণ্যতম কাজ বেছে নেয়, যা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। তারা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়ে, অনেক সময় হয়ে উঠে দেশের জন্য বিপদজনক। তাদের বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কতিপয় মহল তাদের হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। এসকল কারণেই এ প্রজন্ম প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ পায়না। তাদের কাছে বিজয় দিবস একটি সরকারি ছুটি মনে হয়।

বর্তমান সরকারের কাছে এ প্রজন্মের প্রত্যাশা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমান কর্মসংস্থান তৈরী করে দেয়া। যাতে কোনো শিক্ষিত বেকাররা দেশের বোঝা হয়ে না থাকে। কোনো শিক্ষিত ছেলে যেনো কর্মসংস্থানের অভাবে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে না পড়ে।

এ প্রজন্ম যখন দেখে মারামারি, খুন, গুম, চুরি ছিনতায়, ডাকাতি, এমনকি ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট এবং নোংরা অপরাধ চলে তখন তাদের কাছে এ বিজয়ের আনন্দ মলিন হতে দেখা যায়। বিজয়ের স্বাদ হারিয়ে যায়। বিজয়ের আনন্দ হতে হবে সত্য এবং সুন্দর। এ আনন্দে থাকতে পারবে না বেদনা, হতাশা। নির্যাতনের শিকার হয়ে কখনও বিজয়ের স্বাদ পেতে পারেনা কোনো স্বধীন দেশের নাগরিক। পেঠে ভাত না পড়লে মুখে হাসি থাকবে কীভাবে? আর অনাহারীর মুখে বিজয়ের হাসি ফুঁটাতে চাইলে আগে ক্ষুধার যন্ত্রণা দূর করতে হবে। যন্ত্রণা নিয়ে হাসতে পারে খুব কম মানুষ। যারা হাসে তারাও ফেঁসে যায় বলে হাসে। প্রকৃত পক্ষে এই হাসির না আছে কোনো মূল্য, না আছে কোনো ব্যাখ্যা। তাই একটি সুন্দর সত্য হাসির জন্য প্রয়োজন একটি বেকারমুক্ত বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

আমারা সকলে হয়তো জানি স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন, আজ আমাদের কাছে বিষয়টিও তেমন হয়ে দাঁড়িয়েছে । তারপরেও আমরা বিজয়ের গান গাইছি। বিজয় তো আমরা পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অর্জন করেছি। কিন্তু রাজাকার, আলবদর, দেশের এবং দেশের মানুষের শত্রুদের নিকট থেকে এখনও বিজয় অর্জন করতে পারিনি আমরা। রাজাকার কিছুর ফাঁসি দিলেও অনেক অজ¯্র রাজাকার এখনও আমাদের চারপাশে আছে। এই যেমন নিজের দেশের খেলার সময় পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে যায় কিছু রাজাকার। এমন আরও নানান ক্ষেত্রে অনেক রাজাকার আছে যারা দেশের ভালো চায় না। এসকল শত্রুকে মোকাবেলা করতে আজ আমরা হিমসিম খেয়ে যাচ্ছি। ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তান হানাদার বাহীনির বিরুদ্ধে সকলে এক হয়ে রুখে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু আজ আমরা সকলে দেশের ভেতরের শত্রুদের বিরোদ্ধে এক হয়ে রুখে দাড়াতে পারছিনা। এর চাইতে বড় পরাজয় আর কি হতে পরে আমাদের কাছে। বিজয়ের ৫০ বছরে এসে বিজয়ের মাসে প্রজন্মের প্রত্যাশা হিসেবে এটাও একটা বড় চাওয়া। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এখন যুদ্ধ করতে হবে দেশের অস্থিত্ব রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য। এ যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করবো। এটাই আমার বিশ্বাস। বিজয়ের এ মাসে আমাদের সকলের প্রতিজ্ঞা হওয়া চাই দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য আমাদেরে প্রাণ হাসি মুখে বিলিয়ে দিবো। তবেই বিজয়ের মাসে আমাদের সত্যিকারের বিজয় হবে।

লেখক: কলামিস্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন