বিজ্ঞাপন

আ.লীগের ভরসা শিরীন, জাপার যাদু মাঠে থাকলেও নীরব বিএনপি

October 2, 2023 | 9:36 pm

রাব্বী হাসান সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: আর মাত্র কয়েক মাস পরেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। যদিও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি সরাসরি নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলছে না। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই দাবিতে তারা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই উত্তরের জেলা রংপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

তবে এক সময়ের প্রচলিত বাণী ‘রংপুরের মাটি, জাতীয় পার্টির ঘাঁটি’ এবং ‘রংপুরের রাজনীতিতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদই যে শেষ কথা’- বাস্তবে এখন আর এমন নেই। আগে রংপুর জেলার সবক’টি আসনই জাতীয় পার্টির দখলে থাকতো। কিন্তু এখন সেই চিত্র আর নেই। ছয়টি আসনের মধ্যে টানা মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে জেলার চারটি আসন। বাকি দুটি আসনও নিজেদের দখলে নিতে দীর্ঘদিন থেকেই তৎপর সরকারি দলটি। কিন্তু মহাজোটের শরিক হওয়ায় বার বার রংপুরের এই দু’টি আসন ছেড়ে দিতে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। তবে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর দলটিতে দ্বন্দ্বের সুযোগকে এবার কাজে লাগিয়ে আসন দু’টি দখলে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তেমন কোনো তৎপরতা নেই। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনের চিত্র।

পীরগঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন। এই আসনটি রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিভিআইপি হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে পীরগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে অভিমত এলাকাবাসীর। একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গও বলা হতো এই আসনকে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মতিউর রহমান চৌধুরীকে পরাজিত করে এমপি হন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মন্ডল। সাবেক বিএনপি নেতা নূর মোহাম্মদ বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।

তবে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ ঘটে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসনে জয়ী হয়ে পরবর্তী সময়ে আসনটি ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থীকে হারিয়ে জয় পান শিরীন শারমিন।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এক সময়ের জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটি এখন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকে সয়লাব। আর ভিভিআইপি আসন হওয়ায় এবারও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকেই প্রার্থী হিসেবে চান। তবে তিনি প্রার্থী না হলে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন অনেকে। তাদের কেউই এখান থেকে নির্বাচনে অংশ না নিলে স্থানীয় কোনো প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী তারা। ঐক্যের কারণে অন্য কোনো দলের প্রার্থীর মনোনয়ন মেনে নিতে রাজি নন তারা। সব মিলিয়ে এ আসনে রয়েছে নৌকা ও লাঙ্গলের মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা। আর দ্বন্দ্ব-বিভক্তিতে জর্জরিত বিএনপি এখানে কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন-

আ.লীগ-বিএনপিতে শিল্পপতি, শক্ত প্রার্থী খুঁজছে জাপা

বিজ্ঞাপন

তবে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ফের এ আসনে প্রার্থী হতে পরোক্ষভাবে মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইতে পারেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপি হয়ে আওয়ামী লীগে আসা উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম সিরাজ।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে এ এলাকার মানুষ নৌকাকেই জয়ী করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী হলে স্থানীয় ভোটারদের মতো তিনিও খুশি হবেন। কে এ আসনের হাল ধরবেন, সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’

এদিকে, নূর মোহাম্মদ মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ আসনে দু’বার সংসদ সদস্য ছিলাম। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই আবার প্রার্থী হতে চাই।’

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ আসনের মনোনয়ন নিয়ে দলের সভাপতিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তারপরও যদি নেত্রী কিংবা সজীব ওয়াজেদ জয় প্রার্থী হন, তাহলে এলাকার মানুষ খুশি হবে। বিকল্প হিসেবে স্পিকারকেই তারা সমর্থন করবেন। কারণ, শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তিনি এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।’

বিজ্ঞাপন

এক সময়ের প্রভাব বিস্তার করা জাতীয় পার্টির অবস্থানও এ আসনে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম যাদু ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন টানিয়ে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন।

নূরে আলম যাদু সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাপার রাজনীতি চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থানে ছিল। প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে চেয়ারম্যান জিএম কাদের আমাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমি সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমার লক্ষ্য আসনটিকে পুনরুদ্ধার করা।’

পীরগঞ্জের নির্বাচনী মাঠে বিএনপি এখনও তেমন সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে কৌশলে নানাভাবেই মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয়, আর ভোটাররা যদি ভোট দিতে পারেন, তাহলে এই আসনে বিএনপি বিজয়ী হবে। এখানে যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি গতানুগতিক। এখানে বিএনপি সুসংগঠিত। বিএনপির মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। হামলা-মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের যতই দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন এই সরকারকে উৎখাত করব নির্বাচনের আগেই। যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ থাকে, আর বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে এই আসনে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত।’

রংপুর-৬ আসনে মোট ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে ১লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৮ জন পুরুষ, ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩১৩ জন নারী ও ৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে শেখ হাসিনা জয়লাভ করেন। তিনি ভোট পান ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৪২টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মণ্ডল পান ৩৮ হাজার ৬৭২ ভোট। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তিনি পান ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী নূর মোহাম্মদ মণ্ডল পান ৪ হাজার ৯৭৩ ভোট। এ ছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে জয় লাভ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সেই নির্বাচনে তিনি পান ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাইফুল ইসলাম পান ২৪ হাজার ৫৩ ভোট।

সারাবাংলা/আরএইচএস/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন