বিজ্ঞাপন

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে কাশফুলের রাজ্য দিয়াবাড়ি

November 1, 2023 | 3:39 pm

মো. আবদুল্লাহ আলমামুন

নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতি, সিক্ত বাতাস, পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, সাদা কাশফুল নিয়ে আসে শরতের নরম স্পর্শ। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই ঋতু পরিবর্তনের প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। বর্ষার রেশ কাটিয়ে প্রকৃতিতে আগমন হয় শরৎকাল। আর ষড়ঋতুর মধ্যে বসন্তকাল ঋতুরাজ হলে শরৎ হলো ঋতুর রানী। শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উড়ে চলে অবিরাম। আর মৃত্তিকায় বসে হাতছানি দেয় কাশফুলের দল। গ্রীষ্মের দাবদাহের বিদায় দিয়ে প্রকৃতিতে আসে বর্ষা। আর বর্ষার পর শরতে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। ভাদ্র-আশ্বিন এ দুই মাস বাংলাদেশে শরৎকাল। শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে রূপময়। মুগ্ধ করে প্রতিটি মানুষের কোমল হৃদয়। এসময় প্রেমিক প্রেমিকার মনে রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগে। প্রিয় মানুষকে নিয়ে ঘুরতে মন চায় কাশফুলের রাজ্যে। শরৎ স্নিগ্ধ ও শীতল এক ঋতু। শরতে রয়েছে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্যে কবি-সাহিত্যিকের মনে নতুন নতুন কবিতা, গল্প এবং উপন্যাসের সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞাপন

সাধারণত বাংলাদেশের সব জায়গায় নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা এবং গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। শুভ্রতায় কাশফুল মানুষের মনে শান্তির বার্তা বয়ে আনে। আর ঢাকার মধ্যে এমন কাশফুলের রাজ্যে আছে বেশ কিছু। কেরানীগঞ্জের সারিঘাট এলাকায় প্রচুর পরিমাণে কাশফুল ফোটে। স্নিগ্ধ শীতল বাতাসে দোলে কাশফুল। আর এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ ভিড় জমায়। এখানে আছে ছোট্ট একটা লেক। যেখানে নৌকায় চড়ার সুযোগ আছে। আবার কেউ কেউ নিজেই নৌকা চালায় মাঝিকে নৌকায় নিয়ে। আর ভ্রমণ পিপাসু মানুষের উপস্থিতি কেন্দ্র করে অনেক ফাস্ট ফুড এর দোকান বসে। তবে পড়ন্ত বিকেলে মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকে। এসময় প্রিয় মানুষের সাথে হরেক রকমের ফুসকা, চটপটি, হালিমসহ অনেক কিছু পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, ফাস্ট ফুডের সাথে একটু ঝাল বেশি না হলে যেন আর চলেই না। প্রকৃতির এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্য কাশবন ছাড়া অন্য কোথাও এমন দৃষ্টান্ত বিরল।

অনেকে আবার কর্মব্যস্ত থেকে একটু আনন্দের জন্য একটু প্রকৃতির কাছে যেতে কাশফুলের রাজ্যে হারিয়ে যায়। সারিঘাটের পাশাপাশি ঢাকা উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি কাশফুলের এক চমৎকার জায়গা। বিশেষ করে গোধূলি বেলায় নীল আকাশের সাদা মেঘের পাহাড় উড়ে যায়। এসময় আকাশে রক্ত আভা দেখা যায়। আর এটি আরো চমৎকার দৃশ্য ফুটে তোলে। দিয়াবাড়ি এমন একটা জায়গা যেখানে সারা বছর বাংলাদেশের নাটকের শ্যুটিং চলে। এখানে আসলে কারো মনে হবে না যে যান্ত্রিক ঢাকা শহরে এমন জায়গা আছে। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টর রোডের বটগাছ এক প্রিয় জায়গা। এখানে রয়েছে অসংখ্য নাটকের শ্যুটিং এর স্মৃতি, যা ছোট পর্দায় দেখা যায়। তাহসান খানের নীলপরী নীলাঞ্জনা সত্যিই মুগ্ধ করেছিল, যখন তারা প্রথম দেখা করতে এই বটগাছের তলে আসছিল। একটু সামনে গেলেই কাশফুলের রাজ্যে। কাশফুল যেন আপন মনে প্রকৃতির সাথে নৃত্য করছে। আর স্বাগত জানাচ্ছে হাজারো ভ্রমণ পিপাসুদের। এর পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন একটি ব্রিজ। যা কাশফুলের পাশাপাশি দিয়াবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। দূর থেকে কিছুটা ওয়াচ টাওয়ারের মত দেখা যায়। এছাড়া দিয়াবাড়িতে আছে সুন্দর একটা লেক। আর লেকের পাড় থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য প্রতিটি মানুষের মনে ভালবাসার ছোঁয়া লাগিয়ে দেয়। তবে শুক্রবার ও শনিবার বিকেলে এখানে বেশি মানুষ বেড়াতে যায়। এখানেও রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট অনেক ফাস্ট ফুডের দোকান বসে। মানুষ ফাস্ট ফুড খেতে খেতে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ উত্তরায় এপার্টমেন্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর পাশে অবস্থিত রাজধানী ঢাকা উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি। সাধারণত বালুমাটি থেকে এই কাশফুল ফোটে। কাশবনের ভেতর দিয়ে পথ। আর কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউ রিকশা চড়ে, কেউ বাইকে করে এই রাস্তায় চলতে পারেন। প্রায় দুই মাসের মত শরতের কাশফুলএ স্থায়ী থাকে। তাই মনকে সতেজ করতে যেতে পারেন কাশফুলের রাজ্য দিয়াবাড়ি উত্তরাতে। আর উত্তরা ঢাকা শহরের মডেল টাউন। অনেকে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর বলে অভিহিত করে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন