বিজ্ঞাপন

আ.লীগে সহজেই পার পাচ্ছেন না সবুজ, বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী

November 20, 2023 | 5:44 pm

মো. তাওহীদ কবির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

গাজীপুর: একটি সমৃদ্ধ ও প্রাচীন জনপদের নাম গাজীপুর। এই জেলাটিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে উঠে এই গাজীপুরে। বাংলাদেশকে বিশ্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর যার নাম উচ্চারিত হয় তিনি হলেন বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি ছিলেন বিরল মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারী এবং প্রচণ্ড ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে চিহ্নিত ক্ষণজন্মা এক ব্যক্তিত্ব। তাজউদ্দিনের বাইরেও সুস্থ রাজনীতির বাহক, দেশ উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় যাদের নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- প্রয়াত শামসুল হক, শহিদ আরজ উদ্দিন, শহিদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন, গাজী গোলাম মোস্তফা, প্রয়াত হাবিবুল্লাহ, শহিদ হুরমত আলী, শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার, মো. রহমত আলী ও আ ক ম মোজাম্মেল হক।

বিজ্ঞাপন

পোশাক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই গাজীপুরকে এক কথায় বলা চলে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই জেলার পাঁচটি আসনই বর্তমানে আওয়ামী লীগের দখলে। রাজনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই গাজীপুরের রাজনীতি আবর্তিত হয় স্থানীয় জনগণ ও পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে। এই জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার পোশাক কারখানা রয়েছে। ফলে এখানে স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। যে কারণে এই জেলার আসনগুলোতে ভোটার অন্যান্য আসনের চেয়ে বেশি।

আসছে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গাজীপুরের আসনগুলোতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বড় দল এবং দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় এই জেলার কয়েকটি আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কেন্দ্রেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তারা। তবে দুই দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেক জায়গায় অভ্যন্তরীণ বিরোধের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় থেমে নেই সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ও ভোটারের জেলা গাজীপুরের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। মিছিল-মিটিং, উঠান বৈঠকসহ নিজেকে যোগ্য প্রমাণে উঠে-পড়ে লেগেছেন তারা। এবারও জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকে নির্বাচন করছে। আর রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি রয়েছে আন্দোলনে। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে ভোটের হিসাব-নিকাশ কিছুটা হলেও পাল্টে যাবে। কারণ, তারাও দুয়েকটি আসন দখলে ভোটের মাঠে নামবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসনভিত্তিক পরিক্রমায় এবার সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে সারাবাংলার আয়োজনে থাকছে গাজীপুর-৩ আসনের চিত্র।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: 

২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে গঠন করা হয় গাজীপুর-৩ আসন। তখন শ্রীপুর উপজেলার সঙ্গে যোগ করা হয় সদরের মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন। জয়-পরাজয়ের হিসাব করতে গেলে ২০০৮ সালের পর গাজীপুর-৩ আসন আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল। রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এই আসনে সুবিধা করতে পারেনি। প্রয়াত রহমত আলী আওয়ামী লীগের হয়ে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এমপি হয়েছেন। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এমপি হয়েছেন সবুজ।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুটি দলই বেশ তৎপর। দলের মনোনয়নও চান বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থী। সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা না থাকলেও প্রার্থী রয়েছে জাতীয় পার্টিরও। তবে নির্বাচনের আগে ভোটার ও তৃণমূলের নেতাদের মাঝে এখন আলোচ্য বিষয় দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

এমপি রহমত আলীর আসনে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ মনোনয়ন চাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় বিরোধ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবুজ মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এই বিরোধ আরও তীব্র হয়। রহমত আলী মৃত্যুবরণ করলেও বর্তমানে সেই বিরোধ চলছে। বর্তমানে শ্রীপুরে প্রয়াত রহমত আলীর অনুসারী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছেলে অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় ও মেয়ে অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি। দুর্জয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। আর রুমানা সংরক্ষিত আসনের এমপি। বর্তমানে নির্বাচন ঘিরে তিনজনই চালিয়ে যাচ্ছেন জোর প্রচারণা।

মনোনয়ন প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি দলকে সংগঠিত করেছি। গত নির্বাচনের আগে এলাকায় উঠান বৈঠক করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এমপি হওয়ার পর এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সকল নেতা-কর্মী একটি পরিবারের মতো আছি। আশা করি নেত্রী আমার পক্ষে থাকবেন।’

সীমানা পুনর্নির্ধারণের আগে (তৎকালীন গাজীপুর-১) ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী নির্বাচিত হন। আসন পুনর্বিন্যাসের পর তার এলাকা হয় কালিয়াকৈরে (বর্তমান গাজীপুর-১)। মূলত এরপর শ্রীপুরে নেতৃত্ব সংকটে পড়ে দলটি। এরপরও আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা কম নয়। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন সবুজ।

বিজ্ঞাপন

মনোনয় প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির চরম দুঃসময়ে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। আর আমাকে মনোনয়ন দিলে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সাধারণ মানুষ আমাকেই নির্বাচিত করবে, ইনশাল্লাহ।’

এদিকে, এই আসনে সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টির তেমন কোনো তৎপরতা নেই। তবে মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি দল থেকে মনোনয়নের দিলে শতভাগ আশাবাদী। দল আলাদাভাবে নির্বাচন করলে আমি প্রার্থী হবো।’ এই আসনটিতে জাকের পার্টিও পিছিয়ে নেই। এই দলটি মাঠে তৎপর না থাকলেও নেতাকর্মীদের মুখে প্রার্থীর আলোচনা ঠিকই শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন নাসির উদ্দীন পালোয়ান।

উল্লেখ্য, এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৯ জন। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রহমত আলী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম এ মান্নান। তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯১৫ ভোট। এর পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান রহমত আলী। সেবার তিনি এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ইকবাল হোসেন সবুজ। ওই নির্বাচনে তিনি ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইকবাল সিদ্দিকী পান ৩৭ হাজার ৭৮৬ ভোট।

সারাবাংলা/টিকে/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন