বিজ্ঞাপন

ট্রেন ছুটেছে কক্সবাজারের পথে, যাত্রীদের উচ্ছ্বাস

December 2, 2023 | 2:17 am

মো. তাওহীদ কবির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কমলাপুর (ঢাকা) থেকে: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যে শহরে, সেই কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রা। তার জন্যই রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে সাজ সাজ রব। ট্রেনে চেপে কক্সবাজারে যাওয়ার রোমাঞ্চে রোমাঞ্চিত যাত্রীরাও। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ঠিক রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে সেই অপেক্ষার সমাপ্তি। ৮১৪ নম্বর কক্সবাজার এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে যাত্রা শুরু করল পর্যটন নগরীর পথে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের অভিমুখে প্রথম ট্রেনের যাত্রা শুরু হলো। প্রথম এই যাত্রায় কক্সবাজার এক্সপ্রেসের ২০টি বগিতে সঙ্গী ছিলেন এক হাজার ১০ জন যাত্রী।

এর আগে এদিন দুপুরে কক্সবাজারের ঝিলংঝার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন ৮১৩ কক্সবাজার এক্সপ্রেস রওনা দেয় ঢাকার পথে। রাত ৯টার কিছু পরে সেটি পৌঁছায় কমলাপুরে। ঘণ্টা দেড়েকের বিরতি দিয়েই সেটিই ৮১৪ কক্সবাজার এক্সপ্রেস হয়ে রওনা দিলো ফিরতি পথে।

আরও পড়ুন- প্রথম যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল কক্সবাজার এক্সপ্রেস

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার সবসময়ই ভ্রমণপিপাসু মানুষের স্বপ্নের গন্তব্য। সেই স্বপ্নের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে ট্রেনের রোমাঞ্চ। কমলাপুরে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ এবং পরে ট্রেনে চড়ে বসা যাত্রীদের চোখেমুখে ঠিক তেমনই উচ্ছ্বাস আর উল্লাস ছিল অমলিন। যাত্রীদের বেশির ভাগই ভ্রমণের উদ্দেশেই যাচ্ছেন কক্সবাজার।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারে রওনা দেওয়া প্রথম ট্রেনের যাত্রী মো. মোস্তফা কামাল পেশায় ব্যবসায়ী। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে গিয়েছি অনেক আগে। ট্রেনেও ভ্রমণ করেছি বছর ছয়েক হয়ে গেছে। তাই যখন শুনলাম ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেন যাচ্ছে, প্রথম দিনই সেই ট্রেনের টিকিট করেছি। এই ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। কত ভালো লাগছে, তা বলে বোঝানো সম্ভব না। অনেক অনেক আনন্দিত আমি।’

ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার যাচ্ছেন, তাই ভীষ খুশি যাত্রীরা। ছবি: প্রতিবেদক

এখন পর্যন্ত ১০ বার কক্সবাজারে গেছেন ভ্রমণপ্রেমী মো. রিয়াজুল ইসলাম। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে বারবার শরীর ভিজিয়েছেন। তবে এবারে সমুদ্র নয়, ট্রেনের টানে কক্সবাজার যাচ্ছেন বলে জানালেন রিয়াজুল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু কখনো ট্রেনে যাইনি। ট্রেনে কক্সবাজার যাওয়া আমাদের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন এত দ্রুত বাস্তবে রূপ নেবে, বুঝতে পারিনি। তাই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে আজ এই ট্রেনে যাচ্ছি কক্সবাজার।’

যাত্রীরা বলছেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক পথে দীর্ঘ যাত্রা সবার জন্য উপযোগী নয়। বাসে যারা ভ্রমণ করতে পারেন না, তারা ট্রেনযাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আবার বিশেষভাবে যারা ট্রেনযাত্রা পছন্দ করেন, তারা তো আকাশপথের চেয়েও ট্রেনকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। বিমানের টিকিট ফেরত দিয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেসে চড়ে বসেছেন, দেখা মিলল এমন যাত্রীরও।

আরও পড়ুন- প্রথমবার কক্সবাজার থেকে ট্রেন ছাড়ল ঢাকার পথে

তেমন একজন যাত্রী রোকনুজ্জামান রোকন। কক্সবাজার ঘুরতে যাবেন বলে এক মাস আগে বিমানের টিকিট কিনে রেখেছিলেন। ট্রেন চালু হওয়ার খবর পেয়েই বিমানের টিকিট ফেরত দিয়েছেন, কেটেছেন ট্রেনের টিকিট।

বিজ্ঞাপন

রোকনুজ্জামান বলেন, আমি কক্সবাজার ঘুরতে গেলে সবসময় বিমানেই যাই। অনেক আগেই ১ ডিসেম্বর যাত্রার তারিখ ঠিক করেছিলাম। সেই অনুযায়ী বিমানের টিকিটও করেছিলাম। যখন শুনলাম আমি যেদিন যেতে ইচ্ছুক ওই দিনই ট্রেন চলাচল শুরু হবে, সঙ্গে সঙ্গে বিমানের টিকিট রিটার্ন করে দিয়েছি। প্রথম ট্রেনে যেতে পারছি, এটাই বড় বিষয়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়াটা অনেকর কাছের শখের বিষয়। তবে বাসে ভ্রমণ করতে পারেন না বলে এতদিনেও শখ পূরণ করতে পারেননি মো. আওলাদ হোসেন জনি। তিনি বলেন, ‘আমি বাসে চড়তে পারি না। তাই কক্সবাজার এতদিন যেতে পারিনি। বিমানে কিংবা প্রাইভেট কারে করে যাওয়া যায়, কিন্তু অনেক খরচ। তাই এতদিন শখ পূরণ হয়নি। ভেবেছি কক্সবাজার যাওয়াই হবে না। ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যেতে পারব, কখনো ভাবিনি। অনেক বড় একটা স্বপ্ন পূরণ হলো আজ।’

রাতের আঁধার কেটে কক্সবাজারের পথে ছুটে চলেছে ট্রেন। ছবি: প্রতিবেদক

কক্সবাজারের ট্রেনের যাত্রীদের উচ্ছ্বাস কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল দেখার মতো। অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ছবি তোলায়। অনেকটা প্রতিযোগিতা করে চলছিল ছবি, সেলফি আর ভিডিও ধারণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করছিলেন অনেকেই।

যাত্রীদের স্বাগত জানাতে রেলওয়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন প্রস্তুত। রাত ৯টার পরপর কক্সবাজার থেকে কমলাপুর পৌঁছানো কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রীদের স্বাগত জানানো হয় ফুল-চকলেট দিয়ে।

পরে কমলাপুর থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস রওনা দেওয়ার আগে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন। পরে তিনিসহ রেলওয়ের কর্মকর্তারা যাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ই ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার সংযুক্ত হয়ে যায় রেলপথে। ২০ দিন পর এই রেলপথে শুরু হলো যাত্রী নিয়ে ট্রেনের বাণিজ্যিক যাত্রা।

হুইসেল বাজিয়ে যে ট্রেন রওনা দিলো কমলাপুর থেকে, সকালে সেটি পৌঁছে যাবে কক্সবাজারের ঝিলংঝায় নবনির্মিত আইকনিক রেল স্টেশনে। ঝিনুকের ভাস্কর্য আর সাগরের আবহে সেই স্টেশন স্বাগত জানাবে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রীদের।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন