বিজ্ঞাপন

মোতাহের আমার পিঠে ছুরি মেরেছেন— হুইপ শামসুল

December 21, 2023 | 5:00 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সঙ্গে থেকে পিঠে ছুরি মেরেছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুমতি দিয়েছেন। এবং আমি মনে করি এটা উনার একটি অন্যতম সেরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। মাঠে জনগণের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি বাছাইয়ের এমন সুযোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে আর আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দলের নির্বাচনি কৌশল হিসেবে অনেক জনপ্রিয় সংসদ সদস্যদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচন করার জন্য পটিয়ার সাধারণ ভোটার এবং মানুষও আমাকে অনুরোধ করেন। পটিয়ার সাধারণ মানুষের ইচ্ছার প্রতিও আমি সম্মান দেখিয়েছি। ঈগল প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে সে জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করি।’

বিজ্ঞাপন

নৌকার প্রার্থীর অনুসারীরা তার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা চালাচ্ছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নির্বাচনি প্রচারের শুরুর দিন থেকেই পটিয়ায় আরেকজন প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর অনুসারী কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমার লোকজনকে বাধা দিয়ে আসছেন। যেখানেই আমার কর্মী-সমর্থকরা গণসংযোগে যাচ্ছেন সেখানেই হামলা করছে। আমার নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করছে।’

তিনি বলেন, ‘মোতাহেরুল আমার বিরুদ্ধে উসকানি ও বিষোদগারমূলক বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন সভা-সমাবেশে। আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা, তাদের মাঠে নামতে না দেওয়ার নির্দেশমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। উনার সঙ্গে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও সুবিধাভোগী শ্ৰেণি জুটেছে। উনার এসব সন্ত্রাসীরা পটিয়ায় রীতিমতো তাণ্ডব শুরু করেছেন গত কয়েক সপ্তাহ ধরে।’

মোতাহেরুল ইসলাম সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন উল্লেখ করে শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। আমার গণসংযোগে সাধারণ মানুষের বিপুল উপস্থিতি ও ঢল দেখে মোতাহেরুল ইসলাম হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তাই আমাকে ঠেকাতে তিনি সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের দলে ভিড়িয়েছেন। যাদের নাম শুনলে পটিয়ার মানুষ এখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গত সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) পটিয়ার হল ওকে নামক একটি কমিউনিটি সেন্টারে অফিস উদ্বোধন, সংবাদ সম্মেলন ও আমার সমর্থনে একটি কর্মী সমাবেশ ছিল। ওই সভায় যাওয়ার পথে ইন্দ্রপুল বাইপাস মোড় ও হাবিলাসদ্বীপের পাঁচুরিয়া এলাকায় আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করর মোতাহেরুল ইসলামের অনুসারীরা। রাতে জিরি ফকিরা মসজিদ এলাকায় আমার নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয় ও কর্মীদের আহত করা হয়।’

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শান্তিরহাট ও কুসুমপুরা এলাকায় আমার একাধিক নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। বাকখাইন এলাকায় আমাদের একটি প্রচার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রচার গাড়ির নিরীহ চালকের ওপর হামলা করে তারা। মঙ্গলবার রাতে প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সামনেই মঈনুদ্দিন নামে আমার সমর্থক এক কিশোরকে বেধড়ক মারধর করে।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সর্বশেষ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে আমি পটিয়ার কাশিয়াইশ ইউনিয়নে গণসংযোগে যাই। সেখানেও সাধারণ লোকজন ও কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালায় মোতাহেরের সন্ত্রাসীবাহিনী। তারা আমার প্রচারের ছয়টি গাড়ির টায়ার কেটে দেয়। প্রকাশ্য দিবালোকে রামদা, কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একজন ইউপি চেয়ারম্যান এ হামলায় নেতৃত্ব দেন। আমরা এসব ঘটনা নির্বাচন কমিশন ও পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং একটি ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বস্ত সুত্রে জানতে পেরেছি, মোতাহেরের ঘনিষ্ঠ এক সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক একজন জনপ্রতিনিধি এবং কয়েকজন সন্ত্রাসী মিলে পরিকল্পনা করছে নৌকার নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর বা পুড়িয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করে আমার নেতাকর্মী ও আত্মীয়দের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দেওয়ার। আমি একজন প্রার্থী হয়ে প্রশাসনকে অনুরোধ করব এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে। আমার পক্ষ থেকে আজ সংবাদ সম্মেলনের পরে পটিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হবে।’

বিজ্ঞাপন

সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে পটিয়ায় নৌকার অনুসারী দাবিদাররা ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা প্রকৃত অর্থে নৌকার সমর্থক বা অনুসারী কিনা সেটাও আমার সন্দেহ হয়।’

প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী এলাকায় যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে তা বন্ধ না হলে ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতিও কমে যাবে বলে আমি আশঙ্কা প্রকাশ করছি। আর যদি ভোটার যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রাত তিনটা, চারটার সময়ও আমাকে কল দিলে আমি তাদের কথা শুনতাম। বিদেশে থাকলে হোয়াটসঅ্যাপেও কল করলে তারা আমাকে পেত। সমস্যার সমাধান দিয়েছি। যার কারণে তারা আমাকে ভালোবাসে। আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করব। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন এটা দমন করবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও দল এটা চায় না। এটা আমার বিশ্বাস তারা দমন হবে যদি তারা সক্রিয় হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৫ বছরে জমি দখল, বালুর ব্যবসা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দোকানে ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ রেখেছিলাম। মোতাহের ইসলামকে পাশে রেখে আজ তারা স্লোগান দিচ্ছে পটিয়া মুক্ত হয়েছে। কিসের মুক্ত হয়েছে? পটিয়া সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য করার জন্য মুক্ত হয়েছে।’

মোতাহেরুল ইসলাম সুযোগ বুঝে কোপ মারেন মন্তব্য করে জাতীয় সংসদের হুইপ বলেন, ‘উনি সুযোগ বুঝে কোপ মারেন। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখেছি। নবাব সিরাউদ্দৌলা-মীর জাফর ও বঙ্গবন্ধু-মুশতাক এগুলো থাকবে। আমার সঙ্গে থেকে তিনি আমার পিঠে ছুরি মেরেছেন। উনি নির্বাচনে মনোনোয়ন পেয়ে আমাকে একটি কল করতে পারতেন। একটা চক্র উনাকে পরিচালিত করছে।’

তিনি বলেন, ‘কয়েকটি পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ তিন চার বছর ধরে দিচ্ছে। চট্টগ্রামের বাইরের একটা চক্র আছে। আমি ৫০০ কোটি টাকার মানহানি মামলা দিয়েছি। সেটি শেষের পথে। তাই তারা এখন এরকম করছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ কবির চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা দেবব্রত দাশ, বিজন চক্রবর্তী, নাসির আহমদ, আবু ছালেহ চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি আবদুল্লাহ আল হারুন ও ওমর সুলতান চৌধুরী।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন