বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার-১: নৌকাহীন আসনে ইবরাহিমের বাধা স্বতন্ত্র জাফর

December 28, 2023 | 12:57 pm

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমঝোতার আসনগুলো বাদ দিলে মাত্র দুটি আসনেই নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তার একটি কক্সবাজার-১। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী না থাকা এই আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন সাতজন। তবে ভোটের মাঠের খবর বলছে, মূল লড়াই হচ্ছে দুই প্রার্থীর। এর মধ্যে অনেকের হিসাবেই এগিয়ে রয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক। তার সামনে সবচেয়ে বড় বাধার নাম এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় আওয়ামী লীগ বলছে, এই দুজনের মধ্যে সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। তার পক্ষে কাজ করার জন্য জেলা তো বটেই, কেন্দ্রেরও নির্দেশ রয়েছে। অন্যদিকে জাফর আলম বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও নিজের ‘কৃতকর্মে’র কারণেই দল তার পাশে নেই।

চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৯৪ নম্বর কক্সবাজার-১ আসন। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর গত সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে জয়ের স্বাদ পায় আওয়ামী লীগ। সেবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলম। এবারও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একাংশ বলছেন, জাফর আলম সংসদ সদস্য হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দখলবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে নিয়মিত। দলের ত্যাগী ও নিষ্ঠাবান নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের অনুসারীদের নিয়ে ‘জাফরলীগ’ গড়ে তুলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণেই এবার দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- প্রচারে বাধার অভিযোগ, সিইসিকে সৈয়দ ইবরাহিমের চিঠি

জাফর আলম বাদ পড়লে এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন আহমদকে। খেলাপি ঋণ থাকায় যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয় তার মনোনয়নপত্র। ইসিতে আপিল করে লাভ হয়নি। উচ্চ আদালতে গিয়েও ফেরত পাননি প্রার্থিতা।

সালাহউদ্দিন প্রার্থী হতে না পারায় তার পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামা নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। ওদিকে তারা নানা অভিযোগে অভিযুক্ত জাফর আলমের পক্ষেও যেতে রাজি নন। এ পরিস্থিতিতে তারা সমর্থন করার জন্য খুঁজে পেয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিমকে। তারা বলছেন, জাফর আলম দলের ত্যাগী নেতাকর্মী কেবল নয়, সাধারণ মানুষের জীবনও অতীষ্ঠ করে তুলেছেন। এ কারণেই তার দুঃশাসন থেকে মানুষকে বাঁচাতে তার বিপক্ষে এবং সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা। কেন্দ্র থেকেও তেমনই নির্দেশ দেওয়া আছে বলেও জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এবং গত কয়েকদিন চকরিয়া-পেকুয়া ঘূরে দেখা যায়, কিছু দিন আগেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম এখন ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রতীক হাতঘড়ি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই ছুটছেন চকরিয়া-পেকুয়ার এ মাথা থেকে ও মাথা। দলীয় নেতাকর্মী তো বটেই, নির্বাচনি প্রচারে তিনি আওয়ামী লীগের বড় অংশ, বিশেষ করে ‘জাফরবিরোধী’ অংশকেও পাশেই পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন- পিরোজপুর-১: রেজাউলের নৌকায় টক্কর দিচ্ছে আউয়ালের ঈগল

এরই মধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগসহ চকরিয়া-পেকুয়া এলাকার উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের একটি অংশ প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন সৈয়দ ইবরাহিমকে। হাতঘড়ির নির্বাচনি প্রচারেও তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে গতকাল বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেও জাফর আলমের বিরুদ্ধে সৈয়দ ইবরাহিমের প্রচারে নানা ধরনের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘গত পাঁচ বছর জাফর এখানে দখল-বেদখলসহ নানা অত্যাচার চালিয়েছে। মানুষ এই অত্যাচার থেকে মুক্তি চায়। জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্বান্ত, সবাই যেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের পক্ষে কাজ করে। আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছি।’

বিজ্ঞাপন

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সুরাজপুর-মানিকপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘যিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবেন, দল তাকেই সমর্থন দেবে। আর দল যাকে সমর্থন করছে, তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। সে হিসাবে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান হাতঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ ইবরাহিমের পক্ষে কাজ করছি।’

আরও পড়ুন- আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে সালাম মূশের্দীকে তলব

জাফর আলম অবশ্য এবারও নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী। তিনি বলেন, আমি এই আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। মানুষের ভোটেই নির্বাচনে জয় পেয়েছিলাম। তাই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী যেই হোক না কেন, সবাইকে হারিয়েই আবারও নির্বাচনে জিতে আসব।

কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ ও ভোটারদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা আগে থেকেই আমি জানি। এই দুঃশাসন হঠাতেই আমি এই আসনে প্রার্থী হয়েছি। আর নিজেদের প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই একাট্টা হয়ে আমার পক্ষেই নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছে। জয়ের বিষয়ে আমি অনেকটাই নিশ্চিত।

সৈয়দ ইবরাহিম ও জাফর আলম ছাড়াও এই আসন থেকে এবারের নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, জাতীয় পার্টির হোসনে আরা, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, জাফর আলমের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কমর উদ্দিন আরমান। তবে এসব প্রার্থীরা প্রচারে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। ভোটাররাও তাদের খুব একটা সম্ভাবনা দেখছেন না এই নির্বাচনে।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন