বিজ্ঞাপন

পিরোজপুর-১: রেজাউলের নৌকায় টক্কর দিচ্ছে আউয়ালের ঈগল

December 27, 2023 | 10:22 pm

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

পিরোজপুর থেকে: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। তবে আসনটিতে চারজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে দুজন— নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার সদস্য শ ম রেজাউল করিম এবং ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল। পোস্টার-ব্যানার থেকে শুরু করে নির্বাচনি প্রচারের দিক থেকে দুজনে প্রায় সমানে সমান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে প্রতীক বরাদ্দের আগেই এই সংসদীয় আসনে নির্বাচনি সহিংসতায় একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া শ ম রেজাউল করিম ও এ কে এম এ আউয়ালের নির্বাচনি শিবির থেকে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করা হচ্ছে নিয়মিতই। সেদিক থেকে ভোটের হাওয়ায় বেশ উত্তপ্তই বলা চলে এই আসনকে। ভোটের প্রচারের মতো দুই নেতার অনুসারীসহ ভোটাররাও ব্যালটেও এই দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসই দেখছেন।

পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ সংসদীয় আসন। এক লাখ ৮৬ হাজার ৩০৪ জন পুরুষ ভোটার ও এক লাখ ৮০ হাজার ৭৩৩ জন নারী ভোটারসহ এই আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৬৭ হাজার ৩৭ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৪২০টি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শ ম রেজাউল করিম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পান। এবারও তাকেই প্রার্থী করেছে দল। অন্যদিকে নবম ও দশম জাতীয় নির্বাচনে এই আসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এ কে এম এ আউয়াল। এবার দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি লড়াই করছেন রেজাউল করিমের বিপক্ষে।

বিজ্ঞাপন

ভোটের প্রচার ও পোস্টার-ব্যানারে নৌকা ও ঈগলের লড়াই চলছে সমানতালে। ছবি: সারাবাংলা

এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির ইয়ার হোসেন রিপন এই আসনে প্রার্থী হয়েছেন সোনালী আঁশ প্রতীকে। আর লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম। তবে রেজাউল করিম ও আউয়ালের নির্বাচনি প্রচার সমানতালে চললেও পিরোজপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকায় লাঙ্গল বা সোনালী আঁশ প্রতীকের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে জানালেন, এই দুই প্রার্থীর গণসংযোগ বা প্রচারও তারা দেখেননি। শুধু তাই নয়, কেউ কেউ বললেন নজরুল ইসলাম ও ইয়ার হোসেন রিপনকে তারা চেনেনই না।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) পিরোজপুর শহর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা, নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সাদাকালো পোস্টারে ছেয়ে গেছে অলিগলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেয়াল। এদিন শহরে বড় মসজিদ রোডে গণসংযোগ ও লিফলেট বিলি করেন শ ম রেজাউল করিম। প্রত্যেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে দেখা যায় তাকে। একই সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়াল তার বাসভবনে বসে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন বলে জানান অনুসারীরা। দুজনের কর্মী-সমর্থকরাই মনে করছেন, তাদের নেতাই ভোটে জিতবেন।

এদিকে ভোটের প্রচার শুরুর আগেই গত ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচনি সহিংসতায় লালন নামে স্থানীয় এক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হন। ওই সময় থেকেই পিরোজপুরের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যেকোনো সময় দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

স্বতন্ত্র প্রার্থী আউয়ালের কর্মীদের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থীরা তাদের হুমকি দিয়ে আসছে। পাল্টা একই অভিযোগ রয়েছে নৌকার প্রার্থী রেজাউলের কর্মীদেরও। স্থানীয়রা বলেন, দুই পক্ষই শক্তিশালী হওয়ায় কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না। যদিও রেজাউল ও আউয়ালই দুজনেই নিজেদের কর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশই দিয়েছেন।

আউয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আউয়াল) কর্মীরা ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাড়িবহর নিয়ে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

নৌকার প্রার্থী শ ম রেজাউল ইসলামের গণসংযোগ। ছবি: সারাবাংলা

নৌকার এই প্রার্থী বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর নিহত লালন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিল। সে ছিল চিহ্নিত সন্ত্রাসী। অত্যাধুনিক পিস্তল নিয়ে গ্রেফতারও হয়েছে। অবরোধের নমে নাশকতা করত। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। তার মৃত্যুর পর স্বতন্ত্র প্রার্থী মিছিল করে স্লোগান দিয়েছে, ‘বিএনপি নেতা মরল কেন, সরকার জবাব চাই।’ সরকারকে অশালীন ভাষায় গালাগালি করেছে। যেকোনো হত্যা নিন্দনীয়, হত্যাকারীদের বিচার যে কেউ চাইতে পারে। কিন্তু সরকারি দলের লোক হয়ে সরকারকে গালাগালি করা কতটুকু যৌক্তিক?

রেজাউল করিম আরও বলেন, আমি আমার কর্মী-সমর্থকদের নির্দেশ দিয়েছি, তারা আঘাত এলেও প্রতিঘাত করবে না। সহনশীল হবে। পিরোজপুর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানীর জনগণ শন্তি চায়, উন্নয়ন চায়, স্মার্ট পিরোজপুর গড়তে চায়। সন্ত্রাসমুক্ত, মাদকমুক্ত পিরোজপুর গড়তে চায়। জনগণ আমার সঙ্গে আছে। আমি জনগণের সঙ্গে আছি।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়াল বলেন, ‘আমার কর্মীরা শ ম রেজাউলের কর্মীদের হুমকি দিয়েছে, এ কথা ঠিক নয়। আমার কর্মীরা তাকে হুমকি দিলে তার পক্ষে পিরোজপুর টেকা কঠিন হয়ে যাবে। পিরোজপুর ছেড়ে পালাতে হবে।’

পাল্টা অভিযোগ করে এই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘বরং শ ম রেজাউলের কর্মীরা গতকাল (মঙ্গলবার) নাজিরপুরে আমার নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলা করেছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।’

এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে পিরোজপুরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি যেন শান্ত থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ সম্পর্কে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের শুরুতে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। তবে এখন পরিবেশ-পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আশা করি সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠ নির্বাচন আমরা নিশ্চিত করতে পারব।’

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন