বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা ২০২৩: ইতিহাস গড়ে অস্ট্রেলিয়ার ‘হেক্সা’ জয়

December 30, 2023 | 9:40 am

স্পোর্টস ডেস্ক

ওয়ানডে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দল তারা। ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার আগে যে দলটার কথা মাথায় আসবে, সেটা অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার জন্য ২০২৩ সালটা ছিল দারুণ পয়া। যে ভারতের মাটিতে ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল অজিরা, সেই ভারতেই রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরে ‘মিশন হেক্সা’ পূর্ণ করেছে প্যাট কামিন্সের দল।

বিজ্ঞাপন

মিশন হেক্সার শুরুটা অবশ্য দুঃস্বপ্নের মতোই হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৮ অক্টোবর স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হয় অজিরা। সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে বাগে পেয়েও বাজে ফিল্ডিং ও ক্যাচ মিচের মহড়ায় হার মানতে হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছন্নছাড়া অস্ট্রেলিয়া হেরে যায় ১৩৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। টানা দুই ম্যাচের বড় হারে পয়েন্ট তালিকার ১০ম স্থানে নেমে যায় কামিন্সের দল, নেট রানরেটেও বাজেভাবে পিছিয়ে পরে তারা। এই অবস্থায় অনেকেই বিশ্বকাপে অজিদের যাত্রার শেষটা দেখে ফেলেছিলেন।

কিন্তু দলটা যে অস্ট্রেলিয়া! যেখানে সবাই তাদের শেষ ধরে নিয়েছে, সেখান থেকেই ফিনিক্স পাখির মতো নতুনভাবে জেগে উঠল কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টুর্নামেন্টের প্রথম জয় তুলে নেয় অজিরা। লংকানদের ৫ উইকেটে হারিয়ে অজিদের যে জয়রথ শুরু হয়েছিল, তা বজায় থেকেছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

পঞ্চম ম্যাচে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। ডাচদের ৩০৯ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়ে টানা তিন জয় পায় তারা, সঙ্গে নেট রানরেটেও বেশ উন্নতি করে কামিন্সরা। ষষ্ঠ ম্যাচে এসে দারুণ এক লড়াইয়ের সামনে পড়তে হয়েছে অজিদের। নিউজিল্যান্ডকে ৩৮৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দিলেও সেটাকে প্রায় ধরেই ফেলেছিল কিউইরা। শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ৫ রানের দারুণ এক জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে অজিরা। এই জয়ে সেমির রাস্তা অনেকটাই সুগম হয় তাদের।

বিজ্ঞাপন

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে খুব একটা হ্যাপা পোহাতে হয়নি অজিদের। ৩৩ রানের জয় নিয়ে সেমি প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন কামিন্সরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অষ্টম ম্যাচে দলকে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বাঁচিয়ে আনেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ২৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯১ রানেই ৭ উইকেট হারায় অজিরা। এরপর ম্যাক্সওয়েলের অতিমানবীয় এক দ্বিশতকে অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে সেমির টিকেট নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া। নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ। এই ম্যাচের ফলাফল অজিদের সেমির সমীকরণে কোনো প্রভাব ফেলত না। তবে বাংলাদেশকে কোনো ছাড় দেয়নি অস্ট্রেলিয়া। মিচেল মার্শের দারুণ এক বড় শতকে ৮ উইকেটের বড় জয় দিয়েই গ্রুপ পর্ব শেষ করে অজিরা।

সেমিতে অজিদের প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে যে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়াতেই পারে অস্ট্রেলিয়া, সেখানে সেমিতে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। অজি পেসারদের দাপটের মুখে ২১২ রানেই গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা, সেটাও সম্ভব হয়েছে মিলারেরর অনবদ্য এক সেঞ্চুরির কল্যাণে। জবাবে  শেষের রোমাঞ্চে ৩ উইকেটের জয় নিয়ে আবারও ফাইনালে জায়গা করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

ফাইনালে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল পুরো টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা ভারত। ফাইনালের আগে কামিন্স বলেছিলেন, স্টেডিয়ামের দেড় লক্ষাধিক ভারতীয় সমর্থককে চুপ করিয়ে দিতে চান তিনি। সেটাই করে দেখিয়েছে অজিরা। টসে জিতে বোলিং নিয়েছিলেন কামিন্স। পুরো বিশ্বকাপজুড়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ম্যাচটা অজিদের নাগালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে পাওয়ারপ্লের একদম শেষে ম্যাক্সওয়েলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ট্রাভিস হেডের দারুণ এক কাচে ফেরেন রোহিত, বদলে যায় ম্যাচের গতিপথ।

বিজ্ঞাপন

এরপর কোহলি-রাহুল ধীরগতিতে এগুতে থাকেন। দুজন যখন ক্রিজে থিতু হয়ে গেছেন, ঠিক তখনই কোহলিকে ফিরিয়ে গ্যালারিকে স্তব্ধ করে দেন কামিন্স। এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভারত, শেষ পর্যন্ত ২৪০ রান তোলে তারা। ২৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে মোহাম্মদ শামির দাপটে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকে পরেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে ট্রাভিস হেডের অনবদ্য এক সেঞ্চুরি ও লাবুশেনের দারুণ এক ইনিংসে আর বিপদ হয়নি। ৬ উইকেট হাতে রেখে অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। কামিন্সের হাতে ওঠে সোনালি ট্রফি। ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়ে অস্ট্রেলিয়া।

সারাবাংলা/এফএম

Tags: , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন