বিজ্ঞাপন

তীব্র আবহাওয়ায় স্কুল খোলায় শঙ্কিত অভিভাবকরা

April 28, 2024 | 11:46 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অতি তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল খুলে যাওয়ায় শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, আবহাওয়ার এই পরিস্থিতিতে স্কুল আরও কিছু দিন বন্ধ রাখা প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে এই তীব্র আবহাওয়া স্কুল খোলা উচিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পক্ষেও কেউ কেউ মত দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

শের-ই বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া সিনথিয়া ইসলামের মায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্কুল ড্রেসটা দেখেন, কী টাইট ফিটিং। তার ওপরে ভারি ব্যাগ। বাইরে আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি দেখে বাচ্চার সঙ্গে স্কুল এসেছি। অন্য সময় একাই আসে।

ষষ্ঠ শ্রেনীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুমনা ইসলাম বলেন, রাস্তায় নামতেই মনে হয় শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমরা সাধারণ সুতি কাপড়ে এসেছি, তাতেই অস্বস্তি লাগছে। সেখানে বাচ্চাদের স্কুল ড্রেস ফিটিং হওয়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা। আরও কয়েকদিন স্কুল বন্ধ রাখতে পারত।

আরও পড়ুন- তীব্র তাপপ্রবাহ মাথায় নিয়েই স্কুল খুললো আজ

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবারই একই মত, স্কুল আরও কিছু দিন বন্ধ রাখা উচিত ছিল। তারা বলছেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জনজীবন অনেকটা অচল হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। শিগগিরই তাপমাত্রা কমবে এমন তথ্য নেই আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।

মতিঝিল আইডিয়ালের এক শিক্ষার্থীর বাবা খন্দকার হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা বলেছেন। সেখানে বিদ্যালয়গুলো কোন বিবেচনায় ক্লাস শুরু করল। কোনো বাচ্চা গরমে হিটস্ট্রোক করলে সে দায় কে নেবে?

মতিঝিল বালক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সমরেশ পাল বলেন, এক বাচ্চাকে দিয়ে আসলাম মতিঝিল সরকারি বালকে। আরেক বাচ্চা গোপীবাগে স্পার্কলে দিয়ে এখন অপেক্ষা করছি। কারণ এই বাচ্চা পড়ছে ক্লাস ওয়ানে। কখন অসুস্থ হয়ে যায় সে চিন্তায় স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করছি। অন্য সময় কোনো বাচ্চার সঙ্গে থাকা হয় না। ছুটির আগে গিয়ে অপেক্ষা করি।

বিজ্ঞাপন

তীব্র গরমের মধ্যেও স্কুলে এসেছে শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কা কাটছে না। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক রোকনুজ্জামান শেখ সারাবাংলাকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য। কিন্তু এই গরমের মধ্যে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে এটা ঠিক। গরমের কারণে উপস্থিতিও অনেকটা কম।

এদিকে এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে অনলাইনে ক্লাস চালু করার দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু সারাবাংলাকে বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেখানে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে হিট এলার্ট জারি করায় আরও এক সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরাও আরও এক সপ্তাহ স্কুল- কলেজ বন্ধ রেখে অনলাইনে ক্লাস করানোর দাবি করেছি। কিন্তু সরকার তা শোনেনি। এরপর যদি কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়, তাহলে দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

রাজধানীর বেশ কিছু স্কুলের তথ্য নিয়ে জানা গেছে, রোববার (২৮ এপ্রিল) থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে কিছু দিক-নির্দেশনাও দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে। সেখানে বলা হয়, এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর ১ম শিফট সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট পৌনে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।

গরমের মধ্যেও স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার খুব একটা কম ছিল না। ছবি: সুমিত আহমেদ/ সারাবাংলা

প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, প্রায় এক মাস ধরে দেশজুড়ে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রার পারদ গত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। তিন দফার পর নতুন করে আবারী ৭২ ঘণ্টার হিট এলার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। তীব্র গরমে ইতোমধ্যে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দিনে কয়েকজন মারা গেছেন। এই অবস্থার মধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ দান শুরু হলো।

সারাবাংলা/জেআর/আইই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন