বিজ্ঞাপন

রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগ: ৯ বছর পর সম্মেলন, শুরু করতেই ৩ ঘণ্টা দেরি

April 29, 2024 | 8:11 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: এক বছরের জন্য কমিটি গঠন হলেও রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন হলো ৯ বছরে এসে। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পর শুরু হয় সম্মেলন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অনুষ্ঠান চলাকালেও নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ছিল। এর মধ্যে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে সম্মেলনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের। অনুষ্ঠানজুড়েই অতিথিসহ অন্যদের মুখেও ছিল তীব্র বিরক্তি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে সম্মেলনের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগের রাতেই রাঙ্গামাটি পৌঁছান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু সম্মেলনের নির্ধারিত সময়ে তারা উপস্থিত হতে পারেননি।

এ অবস্থায় অতিথিসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই সম্মেলন শুরুর অপেক্ষা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটে পৌনে তিন ঘণ্টা পর। দুপুর পৌনে ১টায় সম্মেলন প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলন উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি ভাঙছে ৯ বছর পর!

বিজ্ঞাপন

প্রচণ্ড গরমে সম্মেলন শুরুর জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষায় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা শুরু হয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। পরে এই বিশৃঙ্খলার জন্য ‘দুঃখপ্রকাশ’ও করেছেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা রোববার রাতে রাঙ্গামাটিতে পৌঁছেও কেন অনুষ্ঠানস্থলে যেতে এত দেরি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল জব্বার সুজনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমার সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। প্রধান অতিথিসহ দুই বিশেষ অতিথিকেও অনুষ্ঠানজুড়ে বিরক্ত দেখা গেছে।

সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন জেলা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদস্থ নেতারা।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পরে রাঙ্গামাটি জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণের উচ্ছ্বাস আমরা লক্ষ করেছি। সম্মেলন ঘিরে আমাদের কিছু লক্ষ্য রয়েছে। ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব-জবাবদিহিতা রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সাত-আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে আজ রাঙ্গামাটি জেলা শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে যারা এসেছেন, দুর্গম অঞ্চল থেকে গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে তীব্র গরমের মধ্য কষ্ট করে এখানে যারা উপস্থিত হয়েছে তাদের প্রতি আমরা স্যালুট জানাই। ছাত্রলীগের কর্মীরা কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়ার জন্য রাজনীতিতে আসেনি। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার গড়া ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিক্রির জন্য ছাত্রলীগ রাজনীতি করে না। আমরা রাজনীতি করি সমাজ বদলের জন্য, দিন বদলের জন্য।’

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন দীপংকর তালুকদার। ছবি: সারাবাংলা

সম্মেলনের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, ‘সভাপতি-সম্পাদক হওয়ার জন্য ৭২ জন সিভি দিয়েছেন। দুজন ছাড়া ৭০ জনই বাদ পড়বেন। বাদ পড়াদের সভাপতি-সম্পাদককে সহযোগিতা করতে হবে।’

দীপংকর তালুকদার আরও বলেন, ‘রাঙ্গামাটি ছাত্রলীগের সম্মেলন ৯ বছরের মধ্যে না হওয়া প্রচুর ট্রাফিক জট লেগে গেছে। উদীয়মান ছাত্ররাও মা-বাবা হয়ে গেছে। ছাত্রলীগের প্রার্থী হবে ৩২-৩৩ বছর বয়সে, এমনটা যেন না হয়। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা বলছিলেন, দাদা, সম্মেলনটা পরে করলে হয় না? কিন্তু সাদ্দাম-ইনানের জন্য জোরাজুরিতে সম্মেলনটা হচ্ছে। আশা করব, প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর যেন ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এই গরমের মধ্যেও যারা সম্মেলনে এসেছে তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

৯ বছরে যা ঘটল

২০১৫ সালের ২ জুন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল। পরদিন ৩ জুন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আব্দুল জব্বার সুজনকে সভাপতি ও প্রকাশ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর। আংশিক কমিটিতে সাইফুল আলম রাশেদকে সিনিয়র সহসভাপতি, এম এন কাউসার রুমিকে সহসভাপতি, রুবেল চৌধুরীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মো. সালাউদ্দিন টিপুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ওই কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক বছরের জন্য। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও কমিটির ঘোষণার আড়াই বছর ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি ১৫১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। অর্থাৎ মেয়াদ শেষের দেড় বছর পর করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

এর মাঝে সভাপতি-সম্পাদককে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে একটি ‘পালটা কমিটি’ও করেছিলেন একাংশের নেতারা। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছরের মাথায় চলতি বছরের ১৮ মার্চ বার্ষিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা ছাত্রলীগ।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন