বিজ্ঞাপন

তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় নলকূপে উঠছে না পানি, বাড়ছে সংকট

April 30, 2024 | 2:17 pm

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলায় ভূগর্ভস্থে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল এবং গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। এ কারণে ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছেন জেলাবাসী। পানি পেতে ১০ থেকে ১২ ফুট গর্ত তৈরি করে ওই গর্তের ভেতরের অংশের নিচে বৈদ্যুতিক মোটর নামিয়ে তারপর পানি সংগ্রহ করছেন কেউ কেউ। গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪ মাস ধরে পানির সংকট তৈরি হলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বা জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রতিকারের জন্য কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তারা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত অপব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম কোমরপুর, বাঘাডাঙ্গা, আরামডাঙ্গা, কাঞ্চনতলা, সুবলপুর, পীরপুরকুল্লা, কানাইডাঙ্গা,বয়রা, হুদাপাড়া, মুন্সীপুর, কুতুবপুর, হরিরামপুর ও শিবনগর; কুড়ুলগাছী ইউনিয়নের চাকুলিয়া, দুর্গাপুর, সদাবরি, বুঁইচিতলা, ঠাকুরপুর, ফুলবাড়ী, ধান্যঘরা, হরিশচন্দ্রপুর, নতুন গ্রাম, চন্ডিপুর ও প্রতাপপুরে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের সব কয়টি গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বহু নলকূপে একেবারেই পানি উঠছে না। কিছু কিছু নলকূপে কম পানি উঠছে। অনেকের নলকূপের পানি কম ওঠায়নলকূপ সরিয়ে নতুন স্থানে বসিয়েও লাভ হচ্ছে না। সেখান থেকেও পানি উঠছে না।

জানা গেছে, প্রতিবছর এ জেলায় ৬ থেকে ৮ ফুট নিচে নামছে পানির স্তর। বছর দশেক আগেও চুয়াডাঙ্গায় ৪০ থেকে ৬০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির স্তর ছিল। এখন বর্ষা মৌসুমেও ১০০ থেকে ১৪০ ফুটের মধ্যে পানির স্তর পাওয়া যাচ্ছে না। অপরিকল্পিতভাবে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি তোলা এবং যত্রতত্র পুকুর খোঁড়ার কারণে খালবিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

দামুড়হুদা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর দাফতরিক সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় সরকারি সাড়ে ৫ হাজার ও ব্যক্তি মালিকানা মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকার নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। নলকূপে পানি না উঠলেও আবার পানির চাহিদা মেটাতে গভীর নলকূপ বসানোর দিকেই ঝুঁকছেন অনেকে। পানির চাহিদা পূরণ করতে ১০-১২ ফুট গর্ত খুঁড়ে মাটির রিঙ স্লাব বসিয়ে পানি তোলার মোটর নিচে নামিয়ে পানি ওঠানোর চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা শহরের দশমিপাড়ার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হবি বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানির স্তর নেমে যাওয়াতে অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি ওঠা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু কিছু টিউবওয়েলে সামান্য পরিমান পানি উঠলেও অনেক শক্তি ব্যয় করতে হচ্ছে। দামুড়হুদা উপজেলা শহরের দশমী পাড়ার ঘরে ঘরে প্রায় একই অবস্থা। ১২-১৩ ফুট গর্ত খুঁড়ে মোটর নামিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। আমার নিজেরও দু’টি মোটর ছিল। পানি না ওঠায় মোটরের ওপর চাপ পড়ে একটি মোটর পুড়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের সংরক্ষিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমাদের টিওবওয়েলে পানি উঠছেনা। ১০-১২ ফুট গর্ত করে সেখানে মোটর বসিয়ে সেখান থেকে পানি তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু পানি উঠছে না। কিছু বাড়িতে এমন হয়েছে। তারা এভাবেই পানি তোলার চেষ্টা করছে।’

কুড়ুলগাছী গ্রামের বাসিন্দা নূরুল বলেন, ‘আমাদের টিউবওয়েলে ২০ দিন থেকে পানি উঠছে না। পানি সংকটের কারণে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।’

আরামডাঙ্গা গ্রামের সাগরিকা বলেন, ‘দেড় মাস ধরে কলে পানি উঠছে না। গরমে অন্য জায়গা থেকে পানি আনতে হচ্ছে। পরের বাড়ি ও পুকুর থেকে পানি এনে ব্যবহার করতে হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

কার্পাসডাঙ্গা আদিবাসীপাড়ার নমিতা রানী জানান, দেড় মাস ধরে তাদের কল থেকে পানি উঠছে না। পুরনো নলকূপের পাশে আবার নতুন করে কল বসানো হলেও সেখান থেকে পানি উঠছে না। অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে ব্যবহার করছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গা জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘উষ্ণতা ও অপরিকল্পিতভাবে পানির অপব্যবহারের ফলে এ অঞ্চলে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। অনিয়মিত বৃষ্টি আর তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১২ হাজারের বেশি নলকূপ ও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গভীর নলকূপ দেওয়া হয়েছে যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। চেষ্টা চালানো হচ্ছে, কিভাবে নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো যায়।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা পানি সংকট প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলা নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট দূর করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন